মৌমাছি, পিপীলিকা, মাকড়সা, মশা, রেশম কীট আর মাছি প্রভৃতির সৃষ্টি রহস্য


আল্লাহ্ বলেনঃ.

شورو وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ امْثَالُكُمْ - مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ إِلَى رَبِّهِم يحشرون -

        এবং পৃথিবীতে এমন কোন বিচরণশীল প্রাণী এবং দুই পাখায় উড্ডয়নশীল পাখী নেই, যাহারা তোমাদের অনুরূপ শ্রেণীবদ্ধ নহে, আমি এই গ্রন্থে কোন বিষয়ই বাদ দেই নাই, অনন্তর তাহারা সকলেই তাহাদের প্রতিপালকের নিকট একত্রিত হইবে। (সূরা আন'আমঃ আয়াত নং ৩৮)

        আল্লাহর সৃষ্ট ক্ষুদ্র পিঁপড়া দেখ। তাদেরকে কি কৌশলে খাদ্য সঞ্চয় করতে শিক্ষা দিয়েছেন। আর সে কাজে তারা পরস্পর কিভাবে সহযোগিতা করছে। শীত, গ্রীষ্ম আর বর্ষার জন্য যখন তাদের বাইরে বের হওয়া অসম্ভব হয় তখনকার জন্য তারা সবাই মিলে নির্বিবাদে বসে আহার করবে। কতখানি দূরদর্শিতা যা অনেক সময় মানুষের মধ্যেও দেখা যায় না।

        পিঁপড়া যখন যে কোন জিনিস একা বহন করতে পারে না, তখন অন্য পিঁপড়ার দল এসে তাকে সাহায্য করে। যেমন মানুষ কোন ভারী জিনিস উঠাতে অক্ষম হলে আর একজন এসে সেটা তুলতে সাহায্য করে।

        তারা মাটির ভিতরে কি কৌশলে নিজেদের ঘর-বাড়ী তৈরী এবং একের পর এক মাটি তুলে গর্ত করে। এমনি গর্তটি বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে। গৃহ পরিষ্কার হয়ে গেলে পরে তাতে খাদ্য সংরক্ষিত করে। যেসব দানা তারা জমা করে তা দাঁত দ্বারা টুকরা করে কেটে রেখে দেয় অন্যথায় উহা অঙ্কুরিত হয়ে যেতে পারে। এই সব ক্ষুদ্র প্রাণীর মধ্যে এ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত আর কে দান করেছেন। আবার যদি সেই সঞ্চিত খাদ্য পানিতে ভিজে যায় তবে তা বের করে রৌদ্রে বাতাসে শুকিয়ে লয়। তারা নীচু জায়গায় কখনো তাদের বাসা তৈরী করে না। যেহেতু তাতে পানি উঠে তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বরং তারা সব সময় উঁচু স্থানে নিজেদের বাসা তৈরী করে।

        এবার মৌমাছি এবং তাদেরকে আল্লাহ্ যে অপূর্ব নৈপুণ্য দান করেছেন, সে বিষয় লক্ষ্য কর। মৌমাছিদের একদলে এক রাজা বা রাণী থাকে। সবাই তারই হুকুমে কাজ করে। যদি অন্য কোন মৌমাছি রাজা বা রাণী হওয়ার দাবী করে তবে সবাই মিলে তাকে হত্যা করে ফেলে, যাতে তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয় আর এক জনের আনুগত্যে সবাই মিলে কাজ করতে পারে।

        মৌমাছিরা ফুল থেকে তরল রস চুষে নেয়, যা তাদের মুখে আল্লাহর কুদরতে মধুতে পরিণত হয়। এর দ্বারা বোঝা যায় আল্লাহ্ মানুষের উপকারের জন্যই মধু সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধক। আল্লাহ্ খোদ বলেছেনঃ 'মধুতে খাদ্য এবং অন্যান্য উপকরণও রয়েছে। যেমন রয়েছে দুধের মধ্যে অশেষ উপকারিতা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য।

        মৌমাছিরা পায়ে করে মোম বাসায় এনে মধু রক্ষা করে। মোমের পাত্রের চেয়ে মধু সংরক্ষিত করার উপযুক্ত কোন পাত্রই হতে পারে না।

        চিন্তা কর, আল্লাহ্ ছাড়া আর কে মৌমাছিকে এসব শিক্ষা দিয়েছে, যে শিক্ষার মাধ্যমে তারা মধুকে মোমের পাত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংরক্ষিত করে। আবার তারা উঁচু বৃক্ষ বা পাহাড়ে তাদের চাক তৈরী করে, যাতে লোকের হাত থেকে রক্ষা পায়। মৌমাছিরা দিনের বেলায় মধু আহরণ করার জন্য বের হয়। রাত্রে তারা বাসায় রাত্রি যাপন করে। বাসায় ফিরার সময় তারা নিজেদের খাদ্য মুখে করে নিয়ে আসে।

        তাদের গৃহ নির্মাণের কলাকৌশলের প্রতি লক্ষ্য কর। তাতে বিশেষ নিপুণতার সাথে সাত-কোণ বিশিষ্ট খোপ তৈরী করে। পায়খানা করার জন্য গৃহের মধ্যে আলাদা ছিদ্র তৈরী করে। ফলে মধুর সাথে তা মিশে গিয়ে মধু নষ্ট হতে পারে না। বস্তুতঃ মৌচাকের গঠন নৈপুণ্য অতুলনীয় কলা কুশলতার নিদর্শন, যা আল্লাহর অনীম কুদরতের সাক্ষ্য বহন করে।

মাকড়সা

        মাকড়সার প্রতি লক্ষ্য কর। আল্লাহ্ এর দেহে এমন এক প্রকার জলীয় পদার্থ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যদ্বারা সে নিজের ঘর তৈরী করে আর তদ্‌দ্বারা নিজের আহার সংস্থানের জন্য শিকার ধরার জালও তৈরী করে। এটা আল্লাহরই অসীম কুদরত। তবে তার খাদ্যে এমন লালা সৃষ্টি হয়, যদ্বারা তার ঘর আর শিকার ধরার জাল তৈরী হতে পারে। মাকড়সা তার ঘর এমনভাবে তৈরী করে যে, তাতে সে নিজে লুকিয়ে থাকতে পারে। তার লালা অতি সূক্ষ্ম সুতার ন্যায় বের হয়। এর তৈরী জালে শিকার চারদিক থেকে এমনভাবে ফেঁদে যায় যে তার আর ছুটবার সাধ্য থাকে না। এই জালে যখনি কোন শিকার অর্থাৎ মশা, মাছি বা পোকা প্রভৃতি আটকে যায়, তখন সে দ্রুততার সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে আর চারদিকে চক্কর দিতে থাকে। তারপর খুব সাবধানে ধরে নিজ গৃহে নিয়ে যায়। যদি ভুখা হয় তবে তখনি সে তা খেয়ে ক্ষুধা দূর করে আর যদি ক্ষুধা না থাকে তবে ভবিষ্যতের জন্য তা রেখে দেয়। দেখ, আল্লাহ্ মাকড়সার ন্যায় ইতর প্রাণীকে কত জ্ঞান ও ও কত কৌশল দান করেছেন। আর তার উপায়- উপকরণও দিয়েছেন। এত ক্ষুদ্র ইতর প্রাণীকে আল্লাহ্ যখন এত জ্ঞান ওহিকমত দান করেছেন তখন মানুষের ন্যায় আশরাফুল মাখলুকাতকে কত জ্ঞান কৌশল দান করেছেন তার কূল কিনারা করা সম্ভব নয়। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ অসীমম কুদরত ও হিকমতের অধিকারী।

গুটিপোকা

        রেশমের ক্ষুদ্র গুটি পোকাগুলি দেখ। উহার প্রতি নজর করলে খোদার কুদরত বোঝা যায়। তাদের সৃষ্টি মানুষের উপকারের জন্যই। গুটি পোকা নিজ শরীর দ্বারা রেশম তৈরী করে। প্রথমে একটি বীজের ন্যায় উহার আকৃতি হয়। উহা দেখতে ডিমের ন্যায়। কিছুদিন তাপ পেয়ে তা একটি কীটের রূপ ধারণ করে। তারপর এই ক্ষুদ্র কীট তুত পাতার উপর রাখা হয়। পোকাটি সেই পাতা থেকে তার খাদ্য আহরণ করে। কিছুদিনের মধ্যে একটি রেশমের গুটি তৈরী হয়ে যায়। সে গুটি পোকাটি নিজ দেহের চারদিকে রেশম বুনে। এই তার জীবন।

         আল্লাহ্ এই উপকারী জীবটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা করেন! যখন রেশমের গুটি তৈরী হয়ে যায়, তখন উহা পাখা বিশিষ্ট একটি পোকা তৈরী হয়ে উড়ে বেরিয়ে যায়। চেনা যায় না স্ত্রী জাতীয় কি পুরুষ জাতীয়। পোকাটি অনেকটা মৌমাছির মতো দেখতে। এদের স্ত্রী জাতীয় কীট ও পুরুষ জাতীয় কীটের সম্মিলনে অল্প দিনেই ডিম দেয়, এই ডিম পূর্ব বর্ণিত প্রক্রিয়ায় একটি রেশমের গুটিতে পরিণতি হয়।

        এবার চিন্তা করে দেখ। এই পোকাকে বিশেষভাবে তুত পাতা আহার করতে কে শিখিয়েছে? আবার রেশম পয়দা করতে নিজ দেহকে বিলীন করতেই বা তাকে কে শিক্ষা দিয়েছে। তারপর তাকে এই আকৃতিতেই বা কে রূপান্তরিত করেছে? কে-ই বা তার মধ্য থেকে পাখা ওয়ালা পোকা সৃষ্টি করেছে, যদ্‌দ্বারা তাদের বংশ টিকে রয়েছে। যদি সে তার আসল রূপে থাকতো তবে তাদের বংশধারা বিলুপ্ত হয়ে যেত।

        অতঃপর যিনি গুটি পোকা হেন ক্ষুদ্র কীট সৃষ্টি করে তাকে এত জ্ঞান বুদ্ধি দান করেছেন আর তার কর্তৃক উৎপন্ন রেশম দ্বারা বহু অর্থ উপার্জনের উপায় শিক্ষা দিয়েছেন, রেশম দ্বারা নানা প্রকার দ্রব্যাদি ও মূল্যবান পোশাক-পরিচ্ছদ তৈরী করা শিখিয়েছেন তার অসীম হেকমত ও কুদরত দেখে বিস্ময়ে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। গুটি পোকার মৃত্যু আর জন্ম দেখে মৃত্যুর পর পুনর্বার জীবিত হওয়ার আর পচে-গলে যাওয়া হাড়ের নতুন গোস্ত চামড়া সৃষ্টি হওয়ার প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হয়। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ এর চেয়েও অধিক কুশল জ্ঞানবান।

মাছি

        মাছির প্রতি লক্ষ্য কর। কত ক্ষুদ্র আর প্রকাশ্যতঃ মনে হয় এর দ্বারা কোন কাজ হয় না। মাছির জন্মের সাথে সাথেই তার দেহে পাখা হয়। আর উড়ে গিয়ে খাদ্যের সন্ধান করে। কোন বিপদ দেখলে দ্রুত উড়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচায়। আল্লাহ্ মাছিকে ছ'খানা পা দিয়েছেন, চারখানার উপর সে ভর করে চলে আর দু'খানা অতিরিক্ত থাকে, যা আবশ্যক মতো ব্যবহার করে। যেমন-যদি কোন রকম জিনিসের উপর বসে আর তাতে ডানা জড়িয়ে যায় তখন তা সাফ করার জন্য অতিরিক্ত পা দুখানা কাজে লাগায়। এদের চক্ষু সে সব কীট পোকার ন্যায় পলকবিহীন যেগুলি সর্বদা এদের চক্ষু সে সব কীট পোকার ন্যায় পলকবিহীন যেগুলি সর্বদা মানুষের শান্তিতে বিঘ্ন ঘটায়। আর তা মাথা থেকে বাইরে বের হওয়া। এমনি মশা প্রভৃতি প্রাণীগুলিকে মানুষের পিছে নিয়োজিত করে রেখেছেন, যাতে মানুষ কখনো নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ভোগ করতে না পারে। ফলে মানুষ এই জীবনের নশ্বরতা অনুভব করে। আর এই অশান্তিময় জগত ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়। কেননা এই অতি সামান্য ইতর প্রাণী বারবার তাড়ানোর পরও মানুষের গায়ে এসে বসে যেন মানুষের দেহটা একটা চেতনাহীন প্রস্তরবত। কিছুক্ষণ বসে একটু ঘুরাফেরা করে আবার এসে বসে। কেননা শিকার সেটাই করা হয় যেটা জীবিত বলে জানা যায়; মৃতকে কেহ শিকার করে না। যেমন-পাথর, কেউ তাকে লক্ষ্যবস্তু করে না।

        কাক দেখ, কাক এমনিতেই অবাঞ্ছিত পাখী। আর তার প্রকৃতিও এনমভাবে সৃষ্ট যে, সে থাকেও একটু দূরে দূরে। মনে হয় যেন সে কিছু গায়েব জানে। যদি কেউ তাকে ধরার কথা চিন্তা করে অমনি উড়ে পালায়। তার জ্ঞান এত পাকা যে, তার বাচ্চার জন্য খুব আড়ালে বাসা তৈরী করে। তারা খুব কমই স্ত্রী-পুরুষে মিলিত হয়, কি জানি সে অবস্থায় যদি ধরা পড়ে যায়। মোটকথা, সে মানুষ থেকে সর্বদা ভীত আর খুব সাবধান সতর্ক থাকে। কিন্তু চতুষ্পদ প্রাণী কিংবা অন্যান্য প্রাণীর বেলায় অবস্থা একেবারে বিপরীত। কাক তাদের পিঠে, শিং-এ বা ঘাড়ের উপর অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকে, উটের রক্তে, আর গোবরাদির মধ্যে তারা অনেক খাদ্য খোঁজে। কাকের ক্ষুধা নিবৃত্ত হলে অবশিষ্ট খাদ্য কোথাও লুকিয়ে রাখে, যা অন্য সময় খায়। বলো এদের মধ্যে কে এই প্রকৃতি আর চেতনা দান করেছেন। অসীম কুদরতের অধিকারী এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কে আছে এমন হিকমত ও কুদরতওয়ালা, যদিও এসব ইতর প্রাণীর জ্ঞান বলতে নেই।

        চিল এক পাকী যা দেখতে সুন্দর নয়। তাও মানুষ থেকে খুব নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে। আল্লাহ্ তাকে উড়ার অসামান্য ক্ষমতা দান করেছেন।' আকাশের বহু উচ্চে সে উড়ে বেড়ায়। তার দৃষ্টিশক্তি এত তীক্ষ্ণ যে, বহু উপর থেকে জমিনের খাদ্য সে দেখতে পায় আর দ্রুত ছোঁ মেরে তুলে নেয়। তার পাঞ্জা খুর ধারালো আর বাঁকা। এর সাহায্যে সে মাটি থেকে তার শিকার ধরে নেয় আর প্রায়ই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না।

        চিল দেখ, যখন সে কচ্ছপ শিকার করে আর দেহে এমন স্থান না পায় যে যা সে আহার করতে পারে, তখন সে তাকে চংগলে ধরে অনেক উঁচুতে নিয়ে যায়। তারপর তাকে পর্বত অথবা কঠিন মাটিতে ছেড়ে দেয়, যার ফলে তার শরীর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। এবার চিল তাকে আহার করে। বলো চিলের মধ্যে কে এই জ্ঞান দান করেছে?

        আর এক জীব হচ্ছে গিরগিট, যাকে রক্ত শোষা বলা হয়। এটা একটা অদ্ভুত প্রাণী, সে একই স্থানে বসে থাকে। চলাফেরা খুব কমই করে। আল্লাহ্ তার চোখে এমন গুণ দিয়েছেন যে সে একই সময় চারদিকে দেখতে পায়। সে একই জায়গায় বসে তার আহার সংস্থান করে। ছোট ছোট কীট পোকা ধরে খায়। তার একটি বৈশিষ্ট এই যে, যে গাছের উপর সে বাস করে সে রং এ সে পরিবর্তিত হয়, তাকে সহজে চেনা যায় না। মশা মাছি তাকে দেখতেই পায় না। সে বসে বসে জিহবা বের করে আর বিজলী গতিতে পোকা-মাকড় গিলে খায়। গাছের কোন ডালের উপর এমনভাবে চুপটি মেরে বসে যায়, যেন তা ডালেরই একটি অংশ।

        এই জীবটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো যদি তাকে কেউ মারতে যায় তবে তাকে ভয় দেখাবার জন্য নানা রং ও রূপে পরিবর্তিত হয় যা দেখে সে ভয় পায়। রূপ পরিবর্তনে সে একটা দৃষ্টান্ত স্বরূপ। যদি কেউ বারবার মত ও ধারণা পরিবর্তন করে তবে তাকে এই জীবটির তুলনা দেওয়া হয়।

        মাছিদের মধ্যে আর এক প্রকার মাছি রয়েছে, যা সাধারণ মাছি থেকে একট ভিন্ন ধরনের। এরা সাধারণ মাছিগুলি খায়। সে শিকার করার জন্য আশ্চর্য কৌশল অবলম্বন করে। কোনো মাছি তার কাছে এসে বসলে সে একেবারে মরার ন্যায় অচেতন হয়ে পড়ে। যখন তার বিশ্বাস হয় যে এবার সে ঠিকভাবে স্থির হয়ে বসেছে, তখন খুব সাবধানে তার নিকটে গিয়ে হঠাৎ তাকে জাপ্টিয়ে ধরে ফেলে, তারপর যখন সেটি একদম মরে যায় তাকে আহার করে। সামান্য মাছির যে এই হিকমত আর কৌশল তখন এগুলি তার নিজের জ্ঞান, না তার জীবিকা অর্জনের জন্য মহা কুশলী আল্লাহর দান।

        মশা দেখ, কতো ক্ষুদ্র প্রাণী, আল্লাহ্ তাকে কত ক্ষুদ্র করে সৃষ্টি করেছেন। এতো ক্ষুদ্র দেহ হওয়া সত্ত্বেও তার পাখা আর পায়ে কোনো ত্রুটি বা কমতি নেই, না আছে তার দৃষ্টিতে কোনো অভাব, যার সাহায্যে সে যথাস্থানে বসে থাকে। এই ক্ষুদ্র দেহে এমন হাতিয়ারও রয়েছে যার সাহায্যে সে অন্যের শরীর বিদ্ধ করে রক্ত চুষে নেয়। এই ক্ষুদ্র প্রাণীর দেহে খাদ্য হজম করার সব যন্ত্রাদি মজুদ রয়েছে। আবার মল-মূত্র নির্গমণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তা খেয়ে কি তার বাঁচা সম্ভব? আর এও কি সম্ভব যে সব সময় তার খাদ্য একই স্থানে জুটবে? বোঝা যায়, এই ক্ষুদ্র প্রাণীর দেহে সব ব্যবস্থাই মহা কৌশলী আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। তার প্রাণীর দেহে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন এবং তার আহার সংস্থানে জ্ঞান ও কৌশল দান করেছেন। লাভক্ষতির মধ্যে পার্থক্য করার সহজাত বৃত্তি আল্লাহ্ তাকে দিয়ে দিয়েছেন। এতে নিদর্শন রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্যের। যদি মশা বাহ্যত একটি অতি নগণ্য প্রাণী তা সত্ত্বেও আসমান জমিনের মানুষ ও ফেরেস্তা সবাই জানার চেষ্টা করে যে, আল্লাহ্ কিভাবে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিন্যাস করেছেন আর কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন তা তাদের পক্ষে অসম্ভব হবে এবং অক্ষমতা জ্ঞাপন করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তারপর চিন্তা কর যে, মশার এই ক্ষুদ্র দেহের মধ্যে আল্লাহ্ যে শক্তি দান করেছেন, যার ফলে সে জানতে পারে যে, অন্য প্রাণীর চামড়া আর গোস্তের মাঝখানে রক্ত রয়েছে যা তার খাদ্য। যদি পূর্বেই এই তত্ত্ব তার জানা না থাকতো তবে কখনো অন্য প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শোষণের চেষ্টা করতে না; আবার তার হিম্মত দেখ, প্রথমে সে কিতাবে তার নির্দিষ্ট বাঁশী বাজিয়ে তার উপস্থিতি ঘোষণা করে আর নিজেও থাকে সাবধান, সামান্য ভয় পেলেই উড়ে পালায়। সে জানে উড়ে যাওয়ার মধ্যে তার মুক্তি। আর যখন সে উড়ে চলে তখন কেউ তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে না। দেখ সামান্য একটি মশার মধ্যে আল্লাহ্ এত নৈপুণ্য নিহিত রেখেছেন তখন অন্যান্য অগণিত প্রাণীর মধ্যে কত না হিকমত রহস্য নিহিত রেখেছেন তা একমাত্র মহাজ্ঞানী আল্লাহই জানেন।

Post a Comment

0 Comments