হযরত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ও হযরত আম্মার রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু একত্রে ইসলাম কবুল করে মুসলমান হয়েছিলেন। তাঁদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি ছিলো এমন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় হযরত আরকাম রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা দুইজন পৃথক পৃথক 'সময়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হলেন এবং বাড়ীর দরজার সম্মুখে উভয়ের সাক্ষাৎ হলো। কিছু কথাবার্তার পরে উভয়ে জানতে পারলো যে, তাঁদের দু'জনেরই উদ্দেশ্য এক। দু'জনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করে ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।
বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে তারা যথারীতি ইসলাম গ্রহণ করলেন। সে সময় ইসলাম গ্রহণ করার অর্থই ছিলো স্বেচ্ছায় নির্যাতন-নিষ্পেষণ ডেকে আনা। তাঁরাও এর ব্যতীক্রম ছিলেন না, নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা উভয়ে মক্কা থেকে হিজরত করার সঙ্কল্প করলেন। কিন্তু ইসলামের দুশমনদের এটাও সহ্য হলো না। তাঁরা মক্কার বাইরে স্বাধীনভাবে ইসলাম পালন করবে, এটা কাফিরদের কাছে এক অসহনীয় ব্যাপার। কোনো মুসলমান হিজরত করবে, এ সংবাদ জানতে পারলে কাফিররা নির্যাতানের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতো।
সুতরাং হযরত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু হিজরত করবেন, এটা জানতে পেরেও কাফেররা তার পিছু লেগে গেল। একদল কাফের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাকে ধরতে গেল। তিনি তখন তুনির হতে তীর বের করে রাখতে লাগলেন এবং বললেন, 'শোন তোমরা জানো যে আমি তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তীরন্দায। আমার হাতে একটি তীর থাকা পর্যন্ত তোমরা কেউ-ই আমার কাছে আসতে পারবে না। তীর ফুরিয়ে গেলে তরবারীর সাহায্য নেব এবং যতক্ষণ তরবারী হাতে থাকবে, ততক্ষন কেউই আমার কাছে আসতে পারবে না। তারপর তরবারী কোনক্রমে আমার হাত ছাড়া হয়ে গেলে তোমরা আমাকে যা খুশী করতে পারে। এ কারণে তোমাদের কাছে আমি একটি প্রস্তাব দিচ্ছি, তোমরা যদি আমার প্রাণের পরিবর্তে আমার সম্পদ গ্রহণ করো তাহলে তোমাদেরকে আমার সম্পদের সন্ধান বলে দিতে পারি।
সম্পদ লোভী দুশমনের দল তাঁর প্রস্তাবে রাজি হলে তিনি বলে দিলেন যে, তাঁর সম্পদ কোথায় রয়েছে। এভাবেই হযরত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নিজের সম্পদ দিয়ে নিজেকে কিছুটা হলেও বিপদ মুক্ত করেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কো'বাতে অবস্থান করছিলেন, হযরত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি বললেন, বড় লাভের ব্যবসাই করলে সোহায়েব।' হয়রত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বললেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন খেজুর খাচ্ছিলেন এবং আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন তা দেখে আমি তার সাথে খেতে বসে পড়লাম। তখন আল্লাহর নবী বললেন, 'চোখের রোগে ভুগছো আবার খেজুরও খাচ্ছো। দেখছ কেমন করে!'
হযরত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। যে চোখটি ভালো সেটা দিয়ে দেখে খাচ্ছি। হযরত সোয়াহেবের কথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে মধুর হাসি ফুটে উঠলো। হযরত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু খুব অমিতব্যয়ী ছিলেন। তিনি অধিক খরচ করতেন। একদিন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু তাঁকে বলেছিলেন, তুমি খুর বেশী অনর্থক খরচ করো।
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি অন্যায়ভাবে একটি পয়সাও খরচ করি না। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর শাহাদাতবরণের সময় উপস্থিত হলে তিনি হযরত সোহায়েব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে তার জানাযার আদায়ের জন্য অসিয়াত করে গিয়েছিলেন।
0 Comments