হযরত আম্মার (রাঃ)-এর প্রতি নিষ্ঠুরতা

        হযরত আম্মার রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ও তার মাতা-পিতা ইসলাম গ্রহন করার পর ইসলামের দুশমনরা তাঁদের ওপরে লোমহর্ষক নির্যাতন করতে থাকে। আরবের মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর ওপরে তাঁদেরকে শাস্তি দেয়া হতো। আঘাতের পর আঘাত করতো পাষন্ডের দল। আঘাত সহ্য করতে না পেরে তিনি অনেক সময় জ্ঞানহারা হয়ে যেতেন। তাঁর পাশ দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবার 'সময় তাঁকে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ ও জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন।

        তাঁর পিতা হযরত ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে ইসলামের দুশমনরা ধরে দুই পায়ে দুটো রশি বেঁধে তা দুটো উটের পায়ে বেঁধে দেয়া হলো। এরপর উট দুটিকে দুই দিকে যাবার জন্য আঘাত করা হলো। উট দুটো দুই দিকে দৌড় দেয়ার পরে হযরত ইয়াসিরের দেহ ছিঁড়ে দুই ভাগ হয়ে গেলো এবং তিনি তৎক্ষণাত শাহাদাতবরণ করলেন।

        হযরত আম্মারকেও প্রহার করতে করতে অচেতন করে ফেলা হতো। তাঁর গর্ভধারিণী মা হযরত সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা দেখতেন- কিভাবে তাঁর কলিজার টুকরা সন্তানকে প্রহার করা হচ্ছে। সন্তান প্রহৃত হচ্ছে আর তিনি উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করছেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্। তাঁর মুখে কালেমার ঘোষণা শুনে নরপশু আবু জেহেল ক্রুদ্ধ হয়ে হয়রত সুমাইয়াকে বর্শা বিদ্ধ করে হত্যা করলো। নারীদের মধ্যে হযরত সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহাই সর্বপ্রথম শাহাদাতবরণ করেন।

        হযরত আম্মার রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ- মসজিদে কুবা নির্মাণে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সাথে ভূমিকা রাখেন। ইমাম হাকিম (রাহঃ) তাঁর মুসতাদরাক-এ উল্লেখ করেছেন যে, কুবা মসজিদ নির্মাণের জন্য হযরত আম্মারই পাথর একত্রিত করেছিলেন এবং মসজিদের নির্মাণ কাজও তিনিই আঞ্জাম দিয়েছিলেন। মদীনার মসজিদে নববী নির্মাণেও তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন।

        তিনি যখন শাহাদাতবরণ করেন, তখন তাঁর বয়স্ক হয়েছিলো ৯০ বছরের অধিক। কেউ বলেছেন ৯৪ বছর। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শাহাদাতের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ বাণী করে বলেছিলেন, তোমার জীবনের সবশেষ চুমুক তুমি যা পান করবে তা হবে দুধ।

        বয়স বেশীর কারণে মহাসত্যের জন্য লড়াই করতে গিয়ে যুদ্ধের ময়দানে তাঁকে কেউ-ই দুর্বল দেখেনি। তিনি অসীম সাহকিতার ও বলিষ্ঠতার সাথে যুবক যোদ্ধার ন্যায় ময়দানে ভূমিকা পালন করেছেন। সেদিন যুদ্ধের ময়দানে প্রচন্ড যুদ্ধ হচ্ছিলো। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। হযরত আম্মার রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু প্রবল পিপাসা অনুভব করলেন। সম্মুখে পেলেন দুধ, তাই তিনি পান করলেন। এরপর তাঁর মনে পড়লো আল্লাহর রাসূলের ভবিষ্যৎ বাণীর কথা।

         তিনি অনুভব করলেন, আজই তাঁর জীবনের শেষ দিন এবং এখুনি তিনি শাহাদাতাবরণ করবেন। তিনি নিজের মুখেই তাঁর সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের বলা কথা বললেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, হে আম্মার! সবশেষে তুমি যা পান করবে তা হবে দুধ।

        এ কথা বলতে বলতে তিনি শত্রু বাহিনীর দিকে প্রচন্ড বেগে ধাবিত হলেন। সম্মুখে হযরত হাশিম রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে যুদ্ধের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, হে হাশিম! সম্মুখে অগ্রসর হও! জান্নাত তরবারীর ছায়ার নীচে এবং মৃত্যু নেজার (এক ধরনের অস্ত্র) কিনারায় অবস্থান করে। জান্নাতের দরজা খোলা হয়েছে এবং সেখানের হুররা সজ্জিত হয়ে অপেক্ষা করছে। আজ আমি বন্ধুদের সাথে মিলিত হবো। আজ আমি আমার বন্ধু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দলের সাথে মিলিত হবো। এ কথা বলতে বলতে তিনি শত্রু বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তিনি যেদিকেই যেতেন, সেদিকের শত্রুসৈন্যের রণবুহ্য ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেতো। যুদ্ধের ময়দানে তিনি এক সময় শাহাদাতের শরাবান তহুরা পান করে এই পৃথিবী ত্যাগ করলেন।

Post a Comment

0 Comments