খন্দকের যুদ্ধ ইতিহাস

        হিজরী পাঁস সালে ইসলামের ইতিহাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধের মূলেও ছিল ষড়যন্ত্রকারী ইয়াহুদী সম্প্রদায়। তারা মদীনা থেকে বহিষ্কৃত হয়ে গোটা আরবে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি গোত্রকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেছিল। যে সমস্ত গোত্র মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল, তারা তাদেরকে বাধ্য করেছিল চুক্তিভঙ্গ করতে। প্রথমে তারা গিয়েছিল মক্কায় কুরাইশদের কাছে। কুরাইশদেরকে তারা বলেছিল, মুসলমানদেরকে যদি তারা মদীনা থেকে উৎখাত করতে চায় তাহলে তারা যে কোন ধরণের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

        কুরাইশরা তাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করেই ইয়াহুদীদের পরিকল্পনা মত ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল। ইয়াহুদীরা গাতফান গোত্রে গিয়ে তাদেরকে লোভ দেখালো, যদি তারা মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে তারা খায়বরে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক দিয়ে দিবে। এভাবে তারা সমস্ত গোত্রে ভ্রমণ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরবের গোত্রগুলোকে একত্রিত করে ১২ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী এবং প্রচুর রসদ সংগ্রহ করেছিল। এই বিশাল বাহিনী তারা তিনভাগে বিভক্ত করে পৃথক পৃথক সেনাপতি নির্বাচিত করেছিল।

        খন্দকের যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য একটি বিরাট পরীক্ষা। এতবড় বিশাল বাহিনী এবং এ ধরণের ভয়াবহ অবস্থার মোকাবেলা মুসলমানরা ইতোপূর্বে আর কোনদিন করেনি। পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকগণ খন্দকের যুদ্ধকে Battle of the Confederates বা 'সম্মিলিত শক্তিসমূহের যুদ্ধ' নামে অভিহিত করেছে। ইসলাম, মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র এবং মুসলমানরা টিকে থাকবে কিনা-এসব প্রশ্ন তখন অনেকের মনেই উদয় হয়েছিল। কারণ, গোটা আরবের এমন কোন গোত্র বাকি ছিল না, কুরাইশদের চাপে যারা এই যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেনি। মদীনার আশপাশে যারা যাযাবর বেদুঈন ছিল, কুরাইশরা তাদেরকেও তাদের সাথে সহযোগিতা করতে বাধ্য করেছিল।

        তারপর ছিল, মদীনার অভ্যন্তরে মুনাফিক গোষ্ঠী ও ইয়াহুদীদের গোত্র বনী কুরাইজা। ইয়াহুদীদের আরো দুটো গোত্র বনী কাইনুকা ও বনী নজীরকে অপকর্মের জন্য মদীনা থেকে বহিষ্কার করার কারণে বনী কুরাইজা গোত্র মুসলমানদের প্রতি প্রচন্ডভাবে অসন্তুষ্ট এবং শত্রু ভাবাপন্ন ছিল। সুতরাং মদীনার অভ্যন্তরের ইয়াহুদীদের জন্য মুসলমানদের ওপরে চরম প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিল খন্দকের এই যুদ্ধ। এক কথায় বলতে গেলে এক আল্লাহ ব্যতীত মুসলমানদের আর দ্বিতীয় কোন সাহায্যকারী ছিল না। ইতোপূর্বের যুদ্ধসমূহে সারা আরব এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়নি, এবারের যুদ্ধে যেভাবে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতির সংবাদ জেনে তিনিও দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। প্রায় তিন হাজার সৈন্য সংগ্রহ করা হলো। আল্লাহর নবী পরামর্শ করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের এক বৈঠক আহ্বান করলেন। হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু পরামর্শ দিলেন, মদীনার যেদিকটি অরক্ষিত- সেদিকে পরিখা খনন করার জন্য। মদীনার তিনদিক ছিল খেজুর গাছ এবং বাড়ি ঘরে পরিপূর্ণ। সিরিয়া যেদিকে অবস্থিত সেদিক ছিল উন্মুক্ত। হযরত সালমান ফারসীর পরামর্শ গ্রহণ করে আল্লাহর নবী পরিখা খননের উপকরণ যোগাড় করলেন।

        আরববাসী ইতোপূর্বে কখনো যুদ্ধের এই কৌশল দেখেনি। এই কৌশল দেখে তারা অবাক হয়ে গিয়েছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং খননের সীমানা নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি প্রতি দশজনকে ত্রিশ ফুট গর্ত খননের আদেশ দিলেন। পরিখার গভীরতা ছিল পনের ফুট। তিন হাজার স্বেচ্ছাবক ও স্বয়ং আল্লাহর নবী একত্রে শ্রম দিয়ে বিশ দিনে এই খনন কাজ সমাপ্ত করেছিলেন। ধারণা করা হয় এই পরিখা ৭৫০০ ফুট দীর্ঘ ছিল। সময় ছিল শীতকাল। তার ওপরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। মুসলমানদের কাছে তেমন খাদ্যও ছিল না। এই অবস্থার মধ্যেই তাঁরা অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন।

        পূর্ণ উদ্যোমে কাজ চলছে। সাহাবায়ে কেরাম যিনি যা পারছেন, তাই এনে আল্লাহর রাসূলকে এবং সঙ্গী-সাথীদেরকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছেন। হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু জানেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনাহারে আছেন। তাঁর বাড়িতে সামান্য খাদ্য রয়েছে। আল্লাহর রাসূল অনাহারে আছে আর তিনি কেমন করে সে খাদ্য আহার করবেন? তিনি বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে কিছু রুটি প্রস্তুত করতে বললেন এবং একটা ছাগল জবেহ করলেন। তারপর চুপিসারে আল্লাহর নবীকে জানালেন, কিছু আহাবের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার্ত সাথীদের রেখে একা আহার করবেন, তা হয় না। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে ডেকে বললেন, 'জাবির আমাদেরকে কিছু আহার করাতে চায়, তোমরা আমার সাথে এসো।'

        হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নবীর এমন আচরণ দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তিনি এ কি করলেন! সামান্য কয়েকটি রুটি, আর এতগুলো মানুষ, কি দিয়ে কি হবে! তিনি বাড়ির দিকে ছুটলেন এবং স্ত্রীকে সব কথা জানালেন। আল্লাহর বান্দি বিচলিত না হয়ে বললেন, 'আল্লাহর নবী কেন এমন করলেন, তা তিনিই জানেন।'

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর একহাজার সাথীকে নিয়ে হযরত জাবিরের বাড়িতে গেলেন। তিনি খাদ্যপাত্রে নিজের পবিত্র হাত দিয়ে খাদ্য বন্টন করতে থাকলেন। হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষুধার্ত সাহাবায়ে কেরাম পেটপুরে আহার করার পরেও খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়ে গেল। আল্লাহর নবীর নেতৃত্বে পরিখা খনন শেষ হবার পরে সৈন্য সমাবেশের আয়োজন করা হলো। পেছনের দিকে পাহাড় রেখে সেন্য সমাবেশ করা হলো। অভ্যন্তরীণ ইয়াহুদীদের আক্রমনের আশংকায় নারী ও শিশুদেরকে মদীনা শহরের শক্তিশালী দূর্গে প্রেরণ করা হলো এবং শহরের নিরাপত্তার জন্য দুইশত সুদক্ষ যোদ্ধা মোতায়েন করা হলো। মদীনার ইয়াহুদী গোত্র বনী কুরাইজা তখন পর্যন্ত নিরপেক্ষই ছিল। বনী কুরাইজার নেতা ছিল কা'ব ইবনে আসাদ। ইতোপূর্বে বহিষ্কৃত বনী নজীর গোত্রের নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব এলো বনী কুরাইজা গোত্রের নেতা কা'বের কাছে।

        কা'ব প্রথমে তার সাথে সাক্ষাৎই করতে চায়নি। অনেক অনুরোধের পরে সে সাক্ষাৎ করতে রাজি হয়েছিল। হুয়াই ইবনে আখতাব তাকে বলেছিল, 'আমি সারা আরবকে ঐক্যবদ্ধ করে মদীনা আক্রমন করার জন্য বিরাট এক বাহিনীর সমাবেশ ঘটিয়েছি। এবার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারীদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে। তুমিও চুক্তিভঙ্গ করে আমাদের সাথে যোগ দাও।'

        চুক্তিভঙ্গ করতে অস্বীকার করে কা'ব বলেছিল, 'তুমি এমন এক মেঘমালা জমায়েত করেছো যে, তা বৃষ্টি বর্ষন করে পানি শুন্য হয়ে গেছে। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে এমন কোন ব্যবহার করেননি যে, আমাকে চুক্তি ভঙ্গ করতে হবে। তুমি চলে যাও।' কিন্তু হুয়াই ইবনে আসাদ ছাড়ার পাত্র ছিল না। নানা ধরণের মন ভুলানো কথাবার্তা দিয়ে কা'বাকে তার মতের পক্ষে নিয়ে এলো। অবশেষে ধনী কুরাইজাও চুক্তিভঙ্গ করলো। মুসলমানদের ওপরে বিপদের ওপরে বিপদ। একদিকে দশ বার হাজার অস্ত্রধারী সৈন্য মদীনা ঘিরে রেখেছে। অপরদিকে মদীনার অভ্যন্তরে সমরাস্ত্রধারী বিরাট ইয়াহুদী শক্তি। হিংস্র হায়েনার দল চারদিক থেকে মুসলমানদেরকে ছিন্নভিন্ন করার জন্য ছুটে আসছে। ঘরের শত্রু বিভীষণের দল ইয়াহুদী আর মুনাফিকের দল মদীনার ভেতরে বসে বিষাক্ত নিশ্বাস ত্যাগ করছে।

        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ পেলেন, বনী কুরাইজা চুক্তিভঙ্গ করেছে। তিনি সংবাদের সততা যাচাই করার জন্য লোক প্রেরণ করলেন। তাদেরকে তিনি বলে দিলেন, 'ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে ফিরে এসে সংকেতমূলক ধ্বনি দিয়ে আমাকে জানাবে। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে প্রকাশ্যে ঘোষনা করবে। তাঁরা বনী কুরাইজা গোত্রে গিয়ে দেখলো ঘটনা যা শুনেছিল, বাস্তব পরিস্থিতি তার থেকেও ভয়াবহ। নবীর প্রেরিত সাহাবায়ে কেরাম ইয়াহুদী নেতা কা'বকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু ইয়াহুদী নেতা তাদের সাথে রুঢ় আচরণ করে বিদায় করে দিল। সাহাবায়ে কেরাম ফিরে এসে আল্লাহর নবীকে জানালেন, 'আজাল ওয়া কারা'। অর্থাৎ আজাল ও কারা নামক স্থানে হযরত খুবাইব ও তাঁর সাথীদের সাথে যেভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ইয়াহুদীজাও তাই করেছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদ জেনে মুসলমানদেরকে জানালেন, "তোমরা শুভ সংবাদ গ্রহণ করো।'

        প্রকৃতপক্ষেই এটা ছিল মুসলমানদের জন্য আনন্দের সংবাদ। কারণ মদীনার অভ্যন্তরে ইয়াহুদীরা ছিল পরিধেয় বস্ত্রের ভেতরে সাপ পোষার মত। যে কোন মুহূর্তে তারা ছোবল হানতে পারে। এই ইয়াহুদীদের কারণে মুসলমানদের মধ্যে সবসময় একটা অজানা আতঙ্ক বিরাজ করতো। কখন কোন সময় কোনদিক থেকে কি অঘটন তারা ঘটায়। এবার যখন তারা স্বেচ্ছায় চুক্তিভঙ্গ করেছে, তখন তাদেরকেও মদীনা থেকে বহিষ্কার করার সুযোগ এসে গেল। তাদেরকে বহিষ্কার করলে মদীনায় ইসলামের শত্রুদের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবে শুধুমাত্র মুনাফিকরা। এরা এমনিতেই ভয়ে আধমরা হয়ে থাকবে। এ কারণেই আল্লাহর নবী সাহাবায়ে কেরামকে সুসংবাদের কথা বলেছিলেন।

        পবিত্র কোরআনে সূরা আহযাবে এই খন্দক যুদ্ধের পূর্ণ চিত্র মহান আল্লাহ তুলে ধরেছেন। বলা হয়েছে, শত্রু চারদিকে থেকে এমনভাবে ঘেয়ে এসে মুসলমানদেরকে ঘিরে ধরেছিল যে, ভয়ে তোমাদের কলিজা মুখের কাছে এসে গিয়েছিল। তোমাদের চক্ষু বিষ্ফারিত হয়ে পড়েছিল। শরীরের রক্ত যেন হীম হয়ে আসছিল। তোমাদেরকে এক ভীষণ পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়েছিল। ঐতিহাসিকগণ মন্তব্য করেছে, মদীনার অভ্যন্তরে এবং চারদিকে শত্রুর পদভারে মদীনা নগরী থরথর করে যেন কাঁপছিল। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন নির্বিকার। তাঁরা মহান আল্লাহর রহমতের ওপর ছিলেন নিষ্ঠাবান।

        এই খন্দকের যুদ্ধে বেশ কিছু মুনাফিকও মুসলিম বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তারা নানা অজুহাত খুঁজছিল, কি করে যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করা যায়। এ কারণে তারা বারবার এসে রাসূলকে বিরক্ত করে বলছিল, 'আমাদের বাড়ি ঘরে নানা সমস্যা রয়েছে, পরিবার পরিজন অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। আপনি অনুমতি দিন, আমরা একটু বাড়িতে যাই।'

        মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে জানিয়ে দিলেন, 'তারা আসলে ভেগে যাবার বাহানা সন্ধান করছে।'

        এই মুনাফিকরা মুসলমানদের কাছে বলছিল, 'মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লোভ দেখিয়েছিল, আমরা রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের সমস্ত ধন-সম্পদের অধিকারী হবো, অথচ আজ অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, শত্রুর কারণে আমরা মলমূত্র ত্যাগ করার জন্যও বের হতে পারছি না।'

        হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর পরামর্শে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, অর্থাৎ পরিখা খনন করেছিলেন, তা দেখে শত্রুপক্ষ অবাক হয়ে পড়েছিল। তারা যে আশা নিয়ে সারা আরবকে ঐক্যবদ্ধ করে মদীনা আক্রমন করতে এসেছিল, আল্লাহর নবীর যুদ্ধ কৌশল দেখে তাদের আশার প্রদীপ নিভে গিয়েছিল। তারা বাধ্য হয়ে অবরোধের পথ অবলম্বন করেছিল।

        অবাক হবার মত অবস্থা ছিল সাহাবায়ে কেরামের। অনাহারে শরীর চলতে রাজী হচ্ছে না, পরিবার পরিজনের কি অবস্থা তাদের জানা নেই, তাদের সৈন্য সংখ্যাও নগন্য, যুদ্ধের রসদ পত্র নেই, ১০/১২ হাজারের এক হিংস্র বাহিনী তাদেরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার জন্য লোলুপ জিহ্বা বিস্তার করে আছে। জীবনের এই চরম মুহূর্তেও তাঁরা অটল। তাঁদের ভেতরে কোন ধরণের অস্থিরতা নেই, চেহারায় নেই ভীতির কোন চিহ্ন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা সেদিকেই যাচ্ছেন। রাসূলের নির্দেশ পালনে তাঁরা সামান্যতম গাফলতির পরিচয় দিচ্ছেন না। এই যুদ্ধে মুনাফিকদের আর দুর্বল ঈমানদেরকে আল্লাহর নবী স্পষ্ট চিনে নিয়েছিলেন।

        ইসলাম বিরোধিরা পরিখা পার হতে না পেরে পরিখার ওপার থেকেই মুসলমানদের ওপরে ব্যাপক আক্রমন শুরু করেছিল। আক্রমনের তীব্রতা এত বেশী ছিল যে, আকাশ আড়াল করে তীর আসছিল। একজন মুসলিম সৈন্যের এমন কোন সুযোগ ছিল না যে, তাঁরা মাথা উঁচু করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। দিনের পর দিন শত্রু বাহিনী মুসলমানদেরকে অবরোধ করে রেখেছিল। কোন কিছু আহার করা দূরে থাক মুসলিম সৈন্যগণ সামান্য পানি পানের সুযোগ পাচ্ছেন না। অবস্থা যখন চরমে পৌছলো তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, শত্রু বাহিনীর মধ্যে কোন গোত্রকে নিজের পক্ষে নিয়ে এলে তাদের ভেতরে ভাঙ্গন সৃষ্টি হবে।

Post a Comment

0 Comments