নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুগত বাহিনীকে ওহুদ পাহাড়ের সামনের অঙ্গনে একত্রিত করে বুহ্য রচনা করলেন। আনসারদের মধ্য থেকে পরামর্শ দেয়া হলো, 'হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের মিত্র ইয়াহুদীদেরকে আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে বললে হয় না?'
আনসারদের এই পরামর্শ দেয়ায় কারণ হলো, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে যে চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন, তার মধ্যে একটি ধারা ছিল, কোন বাইরের শক্তি দ্বারা যদি মদীনা আক্রান্ত হয়, তাহলে সবাই সম্মিলিতাবে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। চুক্তির এই ধারার কথা স্মরণ করেই আনসারদের পক্ষ থেকে ঐ পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। আল্লাহর নবী তাঁদের পরামর্শের উত্তরে বলেছিলেন, 'ইয়াহুদীদের দিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই।'
'আল কোরআনের রাজ প্রতিষ্ঠিত হবে ইয়াহুদীদের সহযোগিতায় এ অভিপ্রায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কখনো ছিল না।' চুক্তি অনুযায়ী ইয়াহুদীরা সাহায্য করতে বাধ্য ছিল। কিন্তু তিনি তাদের সাহায্য গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি জানতেন, তিনি যদি আজ ইয়াহুদ্বীদের সাহায্য গ্রহণ করেন, তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত এটা একটি কালো দলিল হয়ে থাকবে মুসলমানদের জন্য। তাছাড়া বিষধর সাপকে বিশ্বাস করা গেলেও ষড়যন্ত্রকারী ইয়াহুদীদের বিশ্বাস করা যায় না। তারা মুসুল্লিম বাহিনীর ভেতরে অবস্থান করে ইসলামের শত্রুদেরকে সহযোগিতা বা মুসলিম বাহিনীকে হত্যা করতো না, এমন নিশ্চয়তা তো ছিল না।
মুসলিম সৈন্যদেরকে তিনি আদেশ দিলেন, 'আমি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শুরু করবে না মদীনার আনসাররা নিজের চোখে দেখছিল, তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আবাদ করা ক্ষেতগুলো মক্কার কুরাইশরা পশুপাল দিয়ে খাওয়াচ্ছে। এই দৃশ্য তাদের কাছে ছিল অসহনীয়। কিন্তু সিপাহসালারের অনুমতি না থাকার কারণে তাঁরা কিছুই বলতে পারছিল না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে ৫০ জনের তীরান্দাজ বাহিনীর সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। তাঁকে চিহ্নিত করার জন্য তাঁর মাথার সাদা কাপড় দেয়া হয়েছিল।
তাঁকে নির্দেশ দিলেন, 'শত্রু পক্ষের অশ্বারোহী বাহিনীকে তুমি তীর দিয়ে প্রতিরোধ করবে। যুদ্ধে আমরা জয়ী হই বা পরাজিত হই, কোন অবস্থাতেই তোমার পেছন থেকে কেউ যেন আক্রমন করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখবে। তুমি তোমার নিজের স্থানে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে, কোনক্রমেই তোমাদের পেছন থেকে কেউ যেন আক্রমন করতে না পারে।'
হযরত যুবায়ের ইবনে আওয়াম রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া হলো। যাদের দেহে বর্ম ছিল না, এদের নেতৃত্ব দেয়া হলো হযরত হামজা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর ওপর। এরপর আল্লাহর নবী স্বয়ং দুটো বর্ম পরিধান করলেন। যুদ্ধের পতাকা উঠিয়ে দিলেন তরুণ সাহাবী হযরত মুসআব রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুয় হাতে। এই সাহাবীর গর্ভধারিণী মাতা তখন কুরাইশদের সাথে ওহুদের ময়দানেই মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এসেছে। বদর যুদ্ধে কুরাইশদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এই ওহুদের প্রান্তরে তারা সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগালো। তারাও মুসলিম বাহিনীর মতই সৈন্যদের বুহ্য রচনা করেছিল। বদরের তুলনায় এবার তাদের প্রস্তুতি ছিল কয়েকগুণ বেশী। তাদের সৈন্যদের মধ্যে এবার শৃংখলাও ছিল লক্ষনীয়। বাহিনীর কিছু অংশের নেতৃত্ব দেয়া হয়েছিল খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে, আর কিছু অংশের নেতৃত্ব দেয়া হয়েছিল আবু জাহিলের সন্তান ইকরামাকে। তীরান্দাজ বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া হয়েছিল আব্দুল্লাহ ইবনে রাবিয়াকে। অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব ছিল স্বয়ং আবু সুফিয়ানের হাতে। পতাকা দেয়া হয়েছিল তালহার হাতে।
দুইশত ঘোড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, যেন জরুরী প্রয়োজন দেখা দিলে কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রথমে তারা যুদ্ধের কোন বাজনা না বাজিয়ে তাদের নারীর দলকে সামনের দিকে এগিয়ে দিলো। কুরাইশদের এই হিংস্র নারীরা নানা ধরণের উস্কানীমূলক কবিতা আবৃত্তি করতে করতে দফ্ বাজিয়ে কুরাইশ বাহিনীর সামনে দিয়ে ঘুরে গেল।
0 Comments