মহান আল্লাহ তা'য়ালা মানুষের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক, অভিভাবক এবং বন্ধু, এর পরেই নবীদের স্থান। অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালার পরেই মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু পৃথিবীতে আগমনকারী নবী-রাসূল। তাঁরা যখন দেখেন মানুষ সত্য পথ ত্যাগ করে ভুল পথে চলছে এবং পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। তখন তাঁরা অস্থির হয়ে পড়েন। মানব দরদী হিসেবে তাঁরা মানুষকে সংশোধন করার জন্য চেষ্টা-সাধনা করতে থাকেন। মানুষ তাদের এই পরম বন্ধুর সাথে বড় বিচিত্র আচরণ করে। নবী-রাসূল যখন মানুষের ভুল সংশোধন করার চেষ্টা শুরু করেন, তখন এই মানুষ তাদের কথা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদেরকে বিদ্রুপ, কারাগারে নিক্ষেপ, শারীরিক নির্যাতন, দেশ থেকে বহিষ্কার এবং ক্ষেত্র বিশেষে হত্যাও করেছে। এরপরেও তাঁরা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করেছেন। তাঁরা তাদের দায়িত্ব পালন থেকে ক্ষণিকের জন্যেও বিরত হননি।
নবী-রাসূলের ইন্তেকালের পরে তাদের প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শে তাঁরই অনুসারীগণ সামান্য স্বার্থের কারণে পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল সে কিতাবের ভেতরে পরিবর্তন করা হয়েছে। অনুসারীগণ নিজেদের মনগড়া কথা সেই কিতাবে নবীর কথা বলে লিপিবদ্ধ করেছে। আল্লাহর ইবাদাত করার বিভিন্ন নতুন পদ্ধতির বিষয় লিপিবদ্ধ করেছে। কেউ কেউ স্বয়ং নবীর কবরের পূজা করা আরম্ভ করেছে। অনেকে এমন মন্তব্য করেছে যে, স্বয়ং আল্লাহ নবীর রূপ ধারণ করে আমাদের মাঝে অবতার (Incarnation of a human body) হিসেবে আগমন করেছিলেন।
অনেকে নিজেদের নবীকে স্বয়ং আল্লাহর সন্তান বলে ঘোষণা করেছে। নবী এবং তাঁর মায়ের কল্পিত মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করেছে। আফসোস! যারা এসেছিলেন পৃথিবী থেকে মূর্তি উৎখাত করতে, আর তাদের ইন্তেকালের পরে তাঁর অনুসারীরা তাদের মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করেছে। এমনভাবে তারা তাদের নবীর শিক্ষা এবং জীবন বিকৃত করেছে, ঐ নবীর শিক্ষা যে কি ছিল বর্তমানে তা খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত দূরহ ব্যাপার। নবীর প্রকৃত জীবন যে কেমন ছিল তাও জানার কোনো উপায় তারা রাখেনি। একমাত্র নবী করীম (সা:) এর আনিত জীবন বিধান বা তাঁরই শিক্ষা মহান আল্লাহ তা'য়ালার অসীম রহমতে অবিকৃত রয়েছে এবং তিনি তাঁর শেষ নবীর শিক্ষা কিয়ামত পর্যন্ত স্বয়ং সংরক্ষণ করবেন।
নবী-রাসূলের আগমনের উদ্দেশ্য কী
পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী, মানুষ যখনই মহান আল্লাহর বিধানের মোকাবিলায় ভিন্ন বিধানকে প্রাধান্য দিয়েছে, তখনই নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্রষ্টার হিদায়াত ও পথনির্দেশ অমান্য করে ভিন্ন বিধানের ভিত্তিতে নিজেদের সার্বিক জীবন ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপিত করেছে তখনই প্রকৃত বিপর্যয় এবং অশান্তি অনাচার দেখা দিয়েছে। অত্যাচার, শোষণ, জুলুম, প্রতারণা ও বঞ্চনার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষের আর্তনাদ মহান আল্লাহর রহমতের দরিয়ায় তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ তা'য়ালা মানুষকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে নবী-রাসূল প্রেরণ করার ফলে তাঁরা সার্বিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করেছেন। পূর্ব প্রতিষ্ঠিত জুলুমমূলক ব্যবস্থা উৎখাত করে মহান আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে সার্বিক বিপর্যয় রোধ করেছেন।
নবী-রাসূল পৃথিবীর কোনো নেতার নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য বা কোনো শাসকের অধীনে অবস্থান করার জন্য আগমন করেন না এবং এ অবস্থা তাঁর নবুয়্যাত ও রিসালাতের মর্যাদার পরিপন্থী। তাঁরা আগমন করেন মানুষের শাসক হিসেবে। সকল শ্রেণীর মানুষ নবীর আনুগত্য করে তাঁর নির্দেশ অনুসারে সমাজ ও দেশ পরিচালনা করবে, এই উদ্দেশ্যেই তাঁরা আগমন করেন। পৃথিবীর মানুষ বিশৃংখলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, ফলশ্রুতিতে দেখা দিবে ভাঙ্গন ও ধ্বংস। এ অবস্থায় মানুষ যেনো এ অজুহাত দেখাতে না পারে যে, এ সকল কর্মকাণ্ড করলে যে শাস্তি নেমে আসবে এ কথা আমরা জানতাম না। যদি জানতাম তাহলে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতাম। মহান আল্লাহ বলেন-
0 Comments