রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বন্দী জীবন

        মক্কার ইসলাম বিরোধী নেতৃবৃন্দের আপন ঘরেই ইসলামের রক্ষক প্রস্তুত হলো। বড়বড় নেতাদের আপন সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ইসলাম গ্রহণ করেছিল। শুরু থেকে এত বাধা এত প্রতিরোধ, লোমহর্ষক নির্যাতনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রবল গতিতে ইসলাম তার আপন লক্ষ্য পানে দুর্বার বেগে অগ্রসর হচ্ছিল। মক্কার দুই প্রধান বীর হযরত হামজা ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুম ইসলাম কবুল করে ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইসলাম তখন যেনো মক্কার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। এ অবস্থায় কাফিরা ইসলাম ও মুসলমান এবং তাদের প্রতি যারা সহানুভূতিশীল তাদের বিরুদ্ধে চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। বনী হাশিম এবং বনী আবদিল মুত্তালিব বংশ ছিল বিশ্বনবীর প্রতি সহানুভূতিশীল। সুতরাং এই দুই গোত্রের মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই অন্যান্য গোত্রের শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। কারণ অন্যান্য গোত্র এই দুই গোত্রের কাছে দাবী করেছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আমাদের হাতে উঠিয়ে দেয়া হোক, তাকে আমরা হত্যা করি। তাহলে তাঁর ইসলামের বিপ্লবী কার্যক্রম এমনিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সে দাবী ঐ দুই গোত্র গ্রহণ করেনি।

        তাঁরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং ঐ দুই গোত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ঘৃণ্য চুক্তিনামা প্রস্তুত করলো। সে চুক্তিতে লিখিত ছিল, 'মুহাম্মদ (সাঃ) বনী হাশিম এবং বনী আবদিল মুত্তালিবের সাহায্য সহযোগিতায় কুরাশদেরই শুধু নয়-গোটা মক্কার জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করেছে। পক্ষান্তরে তাকে হত্যাও করা যায়নি। তাঁর আদর্শ বিজয়ী হলে মক্কার সমস্ত গোত্রের সম্মান-মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বিনষ্ট হবে। এই ধরণের অনাকাংখিত অবস্থায় তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলো যে, বনী হাশিম এবং বনী আবদিল মুত্তালিবের মুসলিম এবং অমুসলিম কারো সাথেই কোনরূপ সম্পর্ক রক্ষা করা যাবে না। তাদের সাথে বিয়ে, ব্যবসা, ধার দেনা, কথা-বার্তা তথা কোন ধরণের সম্পর্ক রক্ষা করা যাবে না। কেউ তাদেরকে কোন খাদ্য বা পানীয় দিয়ে সাহায্য করতে পারবে না। কেউ যদি তা-করে, গোপনেও কেউ যদি তাদেরকে কোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।'

        সমস্ত গোত্রের পক্ষ থেকে এই চুক্তিপত্র লিখে তা কা'বার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। চুক্তিপত্র লিখেছিল মনসুর ইবনে আকরামা। যে হাত দিয়ে সে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে চুক্তিপত্র লিখেছিল, মহান আল্লাহ সে হাতের শাস্তিও তাকে দিয়েছিলেন। তাঁর হাতের আঙ্গুলে পক্ষাঘাত হয়েছিল। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের বংশের আবু লাহাব ও তাঁর পরিবার ছিল এই চুক্তির আওতার বাইরে। কারণ সে স্বয়ং ঐ ঘৃণ্য চুক্তি সম্পাদনকারীদের পক্ষে ছিল। যাদের বিরুদ্ধে চুক্তি করা হয়েছিল এই চুক্তির ফলে তাঁরা কি যে অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়েছিল ইতিহাসের পৃষ্ঠায় তা লিপিবদ্ধ রয়েছে।

         সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই চুক্তির কারণে শুধু বিশ্বনবী এবং মুসলমানরাই দুঃসহ অবস্থার ভেতরে নিপতিত হয়নি। তখন পর্যন্ত ঐ দুই গোত্রের একটি বিরাট জনগোষ্ঠী ইসলাম কবুল করেনি, তাঁরাও বর্ণনাতীত দুঃখ যন্ত্রণার মধ্যে নিপতিত হয়েছিল। মুসলমানদের সাথে সাথে তাঁরাও দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অনাহারে থেকেছে, গাছের পাতা ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের শিশুগণও মুসলিম শিশুদের সাথে ক্ষুধার যন্ত্রণায় আকাশ-বাতাস দীর্ণ-বিদীর্ণ করে আর্তনাদ করেছে।

        বিশ্বনবীর পক্ষের দুই গোত্র অবরোধের কবলে পতিত হবার পরে তাঁরা দ্রুত একটি বৈঠক করলো। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো, শহরে এই অবস্থায় তাঁরা বাস করতে থাকলে কোনক্রমেই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারবে না। সুতরাং অন্য কোথাও যেয়ে অবস্থান করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করা যাবে না, এতে কষ্ট বৃদ্ধি পাবে। ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাঁরা শিয়াবে আবি তালিবে গিয়ে অবস্থান করাই যুক্তিযুক্ত মনে করলো। শিয়াবে আবি তালিব নামক জায়গাটা ছিল মক্কার একটি পাহাড়ের এলাকা। সেখানে বনী হাশিমের লোকজন বসবাস করতো। এলাকাটি ছিল সমস্ত দিক থেকে সুরক্ষিত পাহাড়ি দূর্গের মত। তাদের ধারণা ছিল, এখানে থাকলে তাঁরা বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করতে পারবে। এ ঘটনা ছিল নবুওয়াত লাভের সাত বছরের সময় মহরম মাসে। ঐ দুই গোত্রের মুসলিম অমুসলিম সবাই বিশ্বনবীর সাথে এই দুঃসহ অবস্থা হাসি মুখে বরণ করে নিল।

        এই ধরণের বিপদ যে আসবে তা ঐ দুই গোত্র উপলব্ধি করতে পারেনি। বিপদ ছিল আকস্মিক। এ কারণে তাঁরা প্রস্তুতি গ্রহণের কোন সুযোগ পায়নি। তাদের কাছে খাদ্যদ্রব্য যা ছিল তাই নিয়ে তাঁরা পাহাড়ের ঐ দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। সামান্য কয়েক দিনের ভেতরেই তাদের সমস্ত খাদ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর তখনই বিপদ মূর্তিমান আকার ধারণ করেছিল। একটি দুটো দিন নয়-দীর্ঘ তিনটি বছর অনাহারে চরম কষ্টের ভেতরে তাদেরকে ঐ শিয়াবে আবি তালিবে বন্দী জীবন-যাপন করতে হয়েছিল।

        ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময়ে তাঁরা নিম গাছের পাতা খেয়ে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করেছেন। পশুর শুকনো চামড়া তাঁত্ম আগুনে সিদ্ধ করে খেয়েছেন। মা খেতে পারেননি, ফলে তাদের বুকের দুধ শুকিয়ে গিয়েছে, সন্তান দুধ না পেয়ে করুণ কন্ঠে আর্তনাদ করেছে। গিরি দূর্গে শিশু-কিশোরগণ প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আর্ত চিৎকার করেছে আর তাদের চিৎকার শুনে ইসলাম বিরোধিরা হেসেছে। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, গাছের পাতা তাঁরা খেয়েছেন। ফলে তাদের মল পশুর মলের মত হয়ে গিয়েছিল। হযরত সায়াদ বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে একদিন খাদ্যের সন্ধানে বের হলাম। কোথাও কিছুই যোগাড় করতে পারলাম না। পশুর এক টুকরা চামড়া কুড়িয়ে পেলাম। তাই এনে আগুনে সিদ্ধ করে আমরা আহার করলাম।

        কোন দিক থেকে কেউ যেন গিরিদূর্গে সাহায্য প্রেরণ করতে না পারে এ জন্য ইসলাম বিরোধী শক্তি যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছিল। তাঁরা পালা করে গিরিদূর্গের প্রবেশ পথসমূহে প্রহরার ব্যবস্থা করেছিল। কোন লোক যদি গিরিদূর্গ থেকে বাইরে এসে কোন জিনিস ক্রয় করার জন্য মূল্য নির্ধারণ করতো তাহলে ঠিক তখনই ইসলাম বিরোধিরা অধিক মূল্য প্রদান করে সে দ্রব্য ক্রয় করে নিত। কোন সময় দূর্গের ভেতর থেকে কোন ব্যক্তি বাইরে এলে তাকে প্রহার করে রক্তাক্ত করে দেয়া হত। হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা যিনি মায়ের গর্ভ হতে এই পৃথিবীতে এসে কোন দিন অভাব শব্দের সাথে পরিচিত হননি। দিনের পর দিন তাঁকে অনাহারে থাকতে হয়েছে। ক্ষুধার যন্ত্রণা তিনি হাসি মুখে সহ্য করলেও তাঁর ভেতরটা নিঃশেষে ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। অবরোধ জীবনের অবসানের পরেই এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। বিশ্বনবীর চাচা আবু তালিবের ভেতরেও কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। ক্ষুধার দানব বিশ্বনবীর এই দুই পরম প্রিয়জন চাচা আবু তালিব আর জীবন সাথি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহাকে নিঃশেষ করে দিয়েছিল।

        হিশাম একদিন যুহাইর ইবনে আবু উমাইয়ার কাছে যেয়ে বললেন, 'তুমি নিজে সমস্ত দিক দিয়ে সুখে আছো। পেটভরে আহার করছো আরামে ঘুমাচ্ছো। তুমি কি জানো তোমার আত্মীয়-স্বজনগণ বন্দী অবস্থায় গিরিদূর্গে কিভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে? যারা তাদেরকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে, তাদের কোন আত্মীয়কে এভাবে যদি তুমি কষ্ট দিতে তাহলে তাঁরা কি তা মেনে নিত-না তোমার সাথে ঐকমত্য পোষণ করতো?' যুহাইর ইবনে উমাইয়ার যেন বিবেক জাগ্রত হলো। সে জবাব দিল, 'একা তো আমার কোন ক্ষমতা নেই। কিছু লোকজন আমি সাথে পেলে ঐ চুক্তি বাতিল করে দিতাম?'

        হিশাম বললো, 'আমি তোমার সাথে আছি, তুমিও জনসমর্থন যোগাড় করো আমিও 'করি।' হিশাম মুতয়িম ইবনে আদির কাছে যেয়ে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে আসল কথা উত্থাপন করলো। বললো, 'হে মুতয়িম! বনী আবদে মানাফের লোকজন অনাহারে নির্যাতন ভোগ করে মৃত্যুবরণ করবে আর তুমি কি সে দৃশ্য দেখে নীরবে দর্শকের ভূমিকা পালন করবে? যারা আজ তাদেরকে বন্দী করে চরম নির্যাতন চালাচ্ছে, তাঁরা কাল যে তোমার ওপরে সেই ধরণের নির্যাতন চালাবে না, এর তো কোন নিশ্চয়তা নেই।

        এভাবে হিশাম বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে আলাপ আলোচনা করে জনমত গঠন করলেন। তারপর ঐ চুক্তির বিরুদ্ধে তিনি মক্কার হাজুন নামক এক পাহাড়ের পাদদেশে একটা সমাবেশের আয়োজন করলেন। যথা সময়ে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো আগামী কাল সকালে তাঁরা সবাই তাদের কাছে যেয়ে প্রকাশ্যে চুক্তির প্রতি বিদ্রোহ করবে, যারা বনী হাশিম এবং বনী আবদিল মুত্তালিব গোত্রকে বন্দী রাখার পক্ষে। এ সংবাদ গিরিদূর্গেও পৌছেছিল। গোটা মক্কায় ব্যাপারটা প্রচন্ড আলোড়ন জাগালো। চুক্তির প্রতি বিদ্রোহকারী দল পরের দিন মূল্যবান পোষাকে সজ্জিত হয়ে কা'বাঘরে গেল। কা'বা ঘর তাঁরা সাত বার তাওয়াফ করে উপস্থিত জনতার সামনে ভাষণ পেশ করলো।

        ভাষণে তাঁরা বললো, 'মক্কার অধিবাসীগণ! আমরা পেটভরে আহার করছি, তৃষ্ণায় আকণ্ঠ পানি পান করছি। আমাদের সন্তান সন্ততিগণ ফুর্তিতে আছে। ওদিকে বনী হাশিম এবং বনী আবদিল মুত্তালিবগণ কি অবস্থায় তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করছে তা কি আমরা অনুভব করেছি? তাদের সাথে কেউ কোন সম্পর্ক রাখতে পারবে না এটা চলতে দেয়া হবে না। মহান আল্লাহর শপথ! আমরা এমন চুক্তি মানিনা, যে চুক্তির বলে মানুষ অত্যাচাচিত হয়। এই চুক্তি আমরা অবশ্যই ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলবো।'

        আবু জেহেল প্রতিবাদ করে বললো, 'তোমরা মিথ্যা কথা বলছো, ঐ চুক্তি বাতিল করা হবে না।' চুক্তির প্রতি বিদ্রোহী দল সমস্বরে তীব্র প্রতিবাদ করে বললো, 'মিথ্যাবাদী তুমি। এই চুক্তি আমরা মানিনা। আমরা আল্লাহর কাছে এই চুক্তির সাথে সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা করছি এবং আমাদের পক্ষ থেকে এই চুক্তি বাতিল বলে ঘোষণা করছি।'

        দুই পক্ষে চুক্তি বাতিল বা বহাল রাখা নিয়ে ভীষণ ঝগড়ার সৃষ্টি হলো। ওদিকে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচা আবু তালিবকে প্রেরণ করেছিলেন গোপন একটা কথা বলে। উভয় দলে যখন মারামারি হবার উপক্রম হলো তখন আবু তালিব এসে বললেন, 'তোমরা যে চুক্তি করেছো তা আল্লাহর পছন্দ নয়। আমার কথা সত্য না মিথ্যা তা তোমরা প্রমাণ করে দেখতে পারো। তোমরা ঐ চুক্তি পত্র দেখতে পারো। দেখো তা পোকায় খেয়ে শেষ করে দিয়েছে। আমার কথা যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কোন রূপ সহযোগিতা করবো না। আর আমার কথা যদি সত্য হয় তাহলে সমস্ত অবরোধের অবসান এখানেই ঘটবে।'

        এ সময়ে মুতয়িম নামক চুক্তি বিরোধী একজন দ্রুত এগিয়ে গিয়ে চুক্তি পত্রটা কা'বার দেয়াল থেকে নিয়ে এলো। দেখা গেল আল্লাহর নাম লিখা অংশটুকু ব্যতীত আর সমস্ত অংশ পোকায় খেয়ে শেষ করে দিয়েছে। ইসলাম বিরোধিরা তখন বাধ্য হয়েছিল লজ্জায় মুখ ঢাকতে কিন্তু এত বড় নিদর্শন দেখেও মহাসত্য গ্রহণ তাদের ভাগ্যে হলোনা। চুক্তির বিরোধিরা বিজয়ী হলো, তাঁরা নিজেরা অগ্রসর হয়ে গিরিদূর্গ থেকে সবাইকে মুক্ত করে আনলেন। মক্কার কয়েকজন যুবক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে প্রহরা দিয়ে কা'বায় এনেছিল। তিনি সেখানে নামায আদায় করেছিলেন। এই বন্দী দশায় থাকতেই বিশ্বনবীর চাচা হযরত আব্বাসের এক স্ত্রীর গর্ভে হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের চাচা তখন পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ না করলেও চাচী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

        সন্তান প্রসব করার পরে তিনি সে সন্তান এনে রাসূলের কাছে দিলেন। বিশ্বনবী সে সন্তান অর্থাৎ তাঁর চাচাত ভাইয়ের মুখে নিজের পবিত্র মুখের লালা দিয়েছিলেন। এমনই এক মহাভাগ্যবান শিশু ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুম যে, পৃথিবীতে এসে মায়ের স্তন পান করার আগে আল্লাহর নবীর মুখের পবিত্র লালা মোবারক পান করেছিলেন। আল্লাহর নবী তাঁর জন্য প্রাণভরে দোয়া করতেন। শিশু আব্দুল্লাহকে তিনি খুবই আদর করতেন। সবসময় নিজের কাছেই রাখতেন। কিন্তু হিজরতের সময় বছর কয়েকের জন্য এই শিশুর সাথে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটলেও আল্লাহর কুদরত তাদেরকে আবার এক করে দিয়েছিল। সাহাবায়ে কেরামদের ভেতরে তাঁর মত স্মৃতি শক্তি এবং গভীর জ্ঞানের অধিকারী, পবিত্র কোরআনের সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় উদ্ঘাটনকারী আর একজনও ছিল না।

Post a Comment

0 Comments