মানুষের প্রতি নবী-রাসূলের আহ্বান কেমন ছিল

মানুষের প্রতি নবী-রাসূলের আহ্বান

        মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সংশোধন করার জন্য যে সংখ্যক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই মানুষকে একই দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রত্যেক নবীই বলেছেন, 'হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব করো। তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই'। আমরা দেখি বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদগণ মানুষকে নিজ দলে আকৃষ্ট করার জন্য মুখরোচক কথাবার্তা বলে জনগণকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। অথবা সাময়িক কোনো সমস্যার দিকে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।

        কিন্তু নবী-রাসূলের কর্মপদ্ধতি এমন ছিলো না, তাঁরা দেশের কোনো সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে আন্দোলন করেননি। অর্থনৈতিক মুক্তির শ্লোগান দিয়ে মানুষের সামনে অবতীর্ণ হননি। কৃত্রিম কোনো বিষয় তাঁর জাতির সম্মুখে বড় করে দেখাননি। তাঁরা প্রথমেই বলেছেন, 'হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব করো। তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই'। এ কথা শোনার সাথে সাথে নবীর পরিবার, সমাজ, দেশবাসী কেনো তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তা চিন্তা করে দেখার বিষয়। 'ইলাহ' শব্দ দিয়ে তাঁরা কি বুঝিয়েছেন যে, নবীদেরকে নির্যাতিত হতে হয়েছে। প্রত্যেক নবীর প্রতিই নির্যাতন করা হয়েছে শুধুমাত্র এই 'ইলাহ্' বলার কারণে। আমাদেরকে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে 'ইলাহ্' শব্দ দ্বারা আসলে কি বুঝায়।

        যে শক্তি এই পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরের, ভেতরের সকল প্রাণী ও অন্যান্য বস্তুর যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করেন, আরবী ভাষায় সেই শক্তিকে 'ইলাহ' বলে। মানুষের সকল প্রয়োজন যিনি পূরণ করেন, সমাজ, পরিবার, দেশ পরিচালনার জন্য যিনি আইন দান করেন এবং যার আইনই একমাত্র চলতে পারে তিনিই হলেন 'ইলাহ্'। যে কোনো প্রয়োজনে মানুষ যাঁর মুখাপেক্ষী হয়, যিনি মানুষকে সাহায্য করবেন এবং মানুষ যাঁর কাছে সাহায্য চাইবে তিনিই 'ইলাহ্'। সুতরাং সমাজের কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তি, শোষক- শাসক যখন বুঝেছে, নবীর এ কথা গ্রহণ করলে নিজের কর্তৃত্ব বলতে আর কিছুই থাকবে না, সকল কর্তৃত্ব আল্লাহ তা'য়ালার জন্য ত্যাগ করতে হবে, তখনই তারা নবীর সাথে তথা ইসলামী আন্দোলনের প্রতি শত্রুতা করেছে এবং বর্তমানেও করছে- আগামীতেও করবে।

        ইতিহাস কথা বলে, প্রত্যেক নবীর সাথেই তৎকালিন সমাজের প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্ব ও দেশের শাসক শ্রেণীর সাথে 'ইলাহ' সম্পর্কে বিতর্ক হয়েছে। পবিত্র কুরআন বিবৃত এ সকল কাহিনী অন্য কোনো পৃথিবীর নয় বরং যে পৃথিবীতে মানুষ বাস করছে, মানুষের সাথে যে পৃথিবী সম্পর্কিত সেই পৃথিবীরই ঘটনা এবং এ সকল ঘটনা মানুষের সাথে সম্পর্কিত। নবী-রাসূল যে দেশে এবং জাতির মধ্যে আগমন করেছেন তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা নানা ধরণের সমস্যা ছিল। এসব উপস্থিত সমস্যা সমাধানেরও প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নবী-রাসূলগণ এ ধরনের সাময়িক ও স্থানীয় সমস্যাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র একটি সমস্যা সামনে রেখেছেন এবং সে সমস্যা 'ইলাহ' কেন্দ্রিক।

        তাঁরা অন্য কোন সমস্যা জাতির সামনে তুলে না ধরে প্রধান সমস্যা অর্থাৎ কৃত্রিম 'ইলাহ্'-সমূহের দাসত্ব ত্যাগ করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে 'ইলাহ' হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বলেছেন। নবী করীম (সা:) প্রথমে এভাবে আহ্বান জানিয়েছিলেন, 'হে মানুষ! বলো আল্লাহ ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো ইলাহ নেই। তাহলে তোমরা কল্যাণ লাভ করবে'।

        সুতরাং এ থেকে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায় পৃথিবীতে সমস্যার সৃষ্টি তখনই হয়, যখন মানুষ একমাত্র আল্লাহকে রব ও ইলাহ্ হিসেবে মানে না। এর পরিবর্তে নিজেকে, সমাজপতি, প্রচলিত প্রথা, নিজ পরিবার, সমাজের আইন, দেশের শাসক, দেশের নানা ধরণের নীতি, দৃষ্টির সামনের সাময়িক স্বার্থ, ধর্মনেতা তথা প্রকৃত রব ব্যতীত অন্য কোনো কিছুকে নিজের মাবুদ বা ইলাহ তথা রব হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছে, তখনই দেশে, সমাজে, ব্যক্তি জীবনে, রাষ্ট্র জীবনে নানা ধরণের সমস্যার আবির্ভাব ঘটেছে। এ কারণে নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারী ইসলামী নেতৃত্ব দেশের, সমাজের সকল সমস্যা উপেক্ষা করে প্রধান সমস্যার দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

        নবী-রাসূলগণ জানতেন সকল সমস্যার স্রষ্টা হলো মাত্র একটি। সুতরাং এই সমস্যার সমাধান হলে অন্য সমস্যাসমূহ এমনিতেই বিলীন হবে। এই সমস্যার সমাধানের ওপর জীবনের অন্যান্য যাবতীয় সমস্যার সমাধান নির্ভরশীল। এ কারণে তাঁরা তাদের সমগ্র জীবন এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ব্যয় করেছেন। হযরত ঈসা (আ:) যখন বনী ইসরাঈলদের কাছে আগমন করেছিলেন তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন-

وَلأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ الَّذِي حُرِّمَ عَلَيْكُمْ وَجِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ قَفَ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوْنِ إِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ طَ هَذَا صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٌ

        তোমাদের ওপর হারাম করে রাখা হয়েছে এমন কতিপয় জিনিসও আমি তোমাদের জন্যে হালাল করে দেবো এবং তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে (এই) নিদর্শন নিয়েই এসেছি, অতএব তোমরা আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'য়ালা আমার এবং তোমাদেরও মালিক, অতএব তোমরা তাঁর দাসত্ব করো আর এটাই হলো একমাত্র সহজ সরল পথ। 

(সূরা ইমরাণ-৫০-৫১)

        হযরত ঈসা (আ:) তাঁর জাতিকে কোন্ কথার দিকে আহ্বান জানিয়েছেন মহান আল্লাহ নবী করীম (সা) কে ওহীর মাধ্যমে শুনিয়ে দিয়েছেন। তিনিও মানুষকে একমাত্র মহান আল্লাহ তা'য়ালাকেই রব হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন। মহান আল্লাহর উলুহিয়াত এবং রবুবিয়াতই হলো প্রধান বিষয়। মানুষ মুখে আল্লাহকে স্বীকৃতি দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ-রোজা ও হজ্জ আদায় করছে, কিন্তু সে ব্যক্তি মানুষের বানানো আদর্শ অনুসারে দেশের অর্থনৈকিত সমস্যার সমাধান করার জন্য চেষ্টা করছে। সে এমন রাজনীতি করছে, যে রাজনীতি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। এর পরিষ্কার অর্থ হলো তারা আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজী, আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এই কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে সে নামাজ-রোজা ও হজ্জ আদায় করছে। কিন্তু সে আল্লাহর রবুবিয়াত এবং উলুহিয়াত গ্রহণ করতে রাজী নয়। আল্লাহকে সে আইন ও বিধান দাতা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী নয়। Law Giver হিসেবে সে পৃথিবীর এক শ্রেণীর দার্শনিককে গ্রহণ করছে। এই ধরণের ব্যক্তিদের জন্য নিজেকে আল্লাহর গোলাম হিসেবে দাবী করার অবকাশ আল্লাহর বিধানে উপস্থিত নেই।

        পবিত্র কোরআনের উল্লেখিত আয়াত থেকে আমাদের সামনে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, পৃথিবীর অন্যান্য নবী-রাসূলের মতই হযরত ঈসা (আঃ) এর দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল তিনটি। তিনিও এই তিনটি বিষয়ের দিকে তাঁর জাতিকে আহ্বান করেছেন। তাঁর আহ্বানের প্রথম কথা ছিল, সকল ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ। অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব Sovereignty, Supreme Authority, Supreme Power যা একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। এ কারণে দাসত্ব তাঁরই জন্য নিবেদিত। তাঁরই দাসত্ব করতে হবে। তাঁর আনুগত্যের ভিত্তিতে পৃথিবীতে মানব জীবনের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, সভ্যতা সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপিত হবে এই কথাটির ওপরে।

        তাঁর আহ্বানের দ্বিতীয় কথা ছিল, সার্বভৌম Sovereignty ক্ষমতাসম্পন্ন অধিপতির Viceroy প্রতিনিধি হিসেবে আমার আদেশ মেনে চলতে হবে, আমার আনুগত্য করতে হবে। আমাকেই একমাত্র নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

        হযরত ঈসা (আ:) এর আহ্বানের তৃতীয় কথা ছিল, পৃথিবীতে মানব জীবনের বৈধ ও অবৈধের সীমারেখা মহান আল্লাহর আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট হবে। অর্থাৎ কোনটি হালাল ও হারাম তা আল্লাহর বিধান জানিয়ে দিবে। আল্লাহ তা'য়ালার আইনের মোকাবেলায় পৃথিবীর অন্যান্য সকল আইন বাতিল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ Law Giver হলেন একমাত্র মহান আল্লাহ। কোন্ কাজ মানুষের করণীয় এবং বর্জনীয় এ নির্দেশ দেয়ার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।

        এক শ্রেণীর তথাকথিত চিন্তাবিদ মনে করেন, প্রত্যেক নবী-রাসূলের আগমনের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন। তাঁরা সবাই একই উদ্দেশ্যে আগমন করেননি। যারা এ কথা বলেন, হয় তাদের কুরআন বুঝার ক্ষমতা নেই অথবা তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ কথা বলে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে সকল নবীর আহ্বান ছিল এক ও অভিন্ন। গোটা সৃষ্টি জগতের সকল ক্ষমতার অধিকারী যিনি সেই Supreme authority-এর কাছ থেকে নিয়োগ পত্র নিয়ে যিনিই তাঁর প্রজাদের কাছে আগমন করবেন, তাঁর আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে যে, তিনি প্রজাদেরকে বিদ্রোহ করা এবং স্বায়ত্ব শাসন পরিচালনা হতেও বিরত রাখবেন।

        আল্লাহর আইনের মোকাবেলায় অন্যদের আইন বাতিল বলে ঘোষণা দিয়ে এ আইন গ্রহণ করলে কি পুরস্কার লাভ করা যাবে এ সম্পর্কে তিনি সুসংবাদ দিবেন। আর যারা আল্লাহর আইন গ্রহণ করবে না, তাদেরকে তিনি ভয়ংকর শাস্তির কথা শোনাবেন। মহান আল্লাহ বলেন-

رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ طَ وَكَانَ اللهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

        রাসূলরা (ছিলো জান্নাতের) সুসংবাদবাহী ও (জাহান্নামের) ভয় প্রদর্শনকারী, (তাদের এ জন্যেই পাঠানো হয়েছিলো) যাতে করে রাসূলদের আগমনের পর আল্লাহ তা'য়ালার ওপর মানব জাতির কোনো অজুহাত খাড়া করার সুযোগ না থাকে; (সত্যিই) আল্লাহ তা'য়ালা মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। 

(সূরা নিসা-১৬৫)

        মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি কি উদ্দেশ্যে তাঁর নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। মানুষের সামনে যেন তাঁরা আল্লাহ তা'য়ালার বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন। আল্লাহর দাসত্ব কেনো করতে হবে তা তাঁরা যুক্তি প্রমাণ দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে দিবেন। কেননা, আল্লাহ তা'য়ালার আদালতে এ সকল মানুষ যখন উপস্থিত হবে তখন তাঁরা যেন এ কথা বলতে না পারে, আমাদের কাছে এমন কোনো ব্যক্তি আসেনি বা আমাদের কাছে এমন কোনো মাধ্যম ছিল না যার মাধ্যমে আমরা আপনার বিধান সম্পর্কে জানতে পারতাম। আমরা আপনার বিধান সম্পর্কে জানতে পারলে অবশ্যই আপনার আইন অনুসরণ করতাম।

        এসব অজুহাত যেন মানুষ আল্লাহ তা'য়ালার সামনে তুলতে না পারে, এ কারণেই মহান আল্লাহ প্রতিটি জনপদে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূলগণ মহাসত্যের আহ্বায়ক, সেই সাথে তাঁরা মানুষের আনুগত্য লাভের অধিকারী। তাদের আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন-

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ الله ط

        আমি যখনই কোনো (জনপদে) কোনো রাসূল পাঠিয়েছি, তাঁকে এ জন্যেই পাঠিয়েছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী (সেখানে) তাঁর (শর্তহীন) আনুগত্য করা হবে। (সূরা নিসা-৬৪) 

        নবী-রাসূল পৃথিবীতে আগমন করবেন এবং মানুষ তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে- এতেই মানুষের দায়িত্ব শেষ হয় না। নবীকে বিশ্বাস করবে সেই সাথে মানুষ অন্য কারো আইন মেনে চলবে বা নিজের ইচ্ছামত জীবন যাপন করবে, এটা সম্ভব নয়। এ উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ নবী-রাসূল প্রেরণ করেননি। বরং নবী-রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্যই হলো জীবন যাপনের জন্য যে বিধান তিনি নিয়ে আসেন, পৃথিবীর সকল বিধান বর্জন করে কেবলমাত্র সেই বিধান অনুসারেই জীবন যাপন করতে হবে। আর এটাই হলো নবী- রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের প্রকৃত অর্থ।

        নবী-রাসূল ও তাঁর অনুসারীদের আরো একটি দায়িত্ব হলো, তাঁরা আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান পৃথিবীর সকল বিধানের ওপরে বিজয়ী করবেন। অর্থাৎ পৃথিবীর সকল আদর্শ, মতবাদ, মতাদর্শ, আইন-কানুনের মোকাবেলায় ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন। আল্লাহর দেয়া আদর্শ রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশ বা পৃথিবী শাসন করবে। মহান আল্লাহ বলেন-

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ لَا وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ


        তিনিই (মহান আল্লাহ), যিনি তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট হিদায়াত ও সঠিক জীবন বিধান সহকারে তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন, যেন সে এই জীবন ব্যবস্থাকে (দুনিয়ার) সব কয়টি বিধানের ওপর বিজয়ী করে দিতে পারে, মুশরিকরা এ বিজয়কে যতো দুঃসহই মনে করুক না কেনো। (সূরা আত্ তাওবা-৩৩)

        আরবী দ্বীন শব্দ সম্পর্কে সীরাতে সরওয়ারে আলমে বর্ণনা করা হয়েছে, 'দ্বীন শব্দটিকে আরবী ভাষায় এমন জীবন ব্যবস্থা বা জীবন পদ্ধতির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে যার প্রতিষ্ঠাকারীকে সনদ ও অনুসরণযোগ্য বলে মেনে নিয়ে তার আনুগত্য করতে হয়'।

        পৃথিবীর সকল বিধান থাকবে আল্লাহর বিধানের অধীনে। আল্লাহর আইন প্রচলিত কোনো বিধানের অধীনে থাকবে এ উদ্দেশ্যে আল্লাহর বিধান পৃথিবীতে আগমন করেনি। অন্য কোন বিধানের অধীনে আল্লাহর আইন সামান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে অবস্থান করবে, এ উদ্দেশ্যেও আল্লাহর বিধান আগমন করেনি। পৃথিবীর সকল ধরনের মতবাদ মতাদর্শ আল্লাহ তা'য়ালার আইনের অনুগ্রহ কুড়িয়ে টিকে থাকার হলে টিকে থাকবে আর না হয় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'য়ালার আইন যিনি নিয়ে আসেন, তিনি পৃথিবী ও আকাশের বাদশাহ তথা অদ্বিতীয় ক্ষমতাশালীর প্রতিনিধি হিসেবে আগমন করেন। নবী-রাসূল নিজের বাদশাহ মহান আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চান। আল্লাহর বিধানের মোকাবেলায় পৃথিবীতে অন্য কোনো বিধান মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, এমন ধরনের কোনো বিধানের অস্তিত্ব পৃথিবীতে থাকবে না। নবী-রাসূলের আহ্বানের এটাই হলো মূল কথা।

Post a Comment

0 Comments