আল্লাহ্ বলেনঃ
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ -
আর আমি মানুষকে মাটির পিণ্ড দ্বারা তৈরী করেছি। (সূরা মোমেনঃ আয়াত ১২)
আল্লাহ্ যখন মানবকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণের ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি তার সৃষ্টির ব্যবস্থা এভাবে করলেন যেন এক এক থেকে ক্রমান্বয়ে বংশধারা সৃষ্টি হয়। সুতরাং পুরুষ আর নারী এ দু' শ্রেণীতে মানুষ সৃষ্টি করা হলো। আর তাদের মধ্যে আল্লাহ্ সৃষ্টি করে দিলেন পারস্পরিক ভালবাসা ও আকর্ষণ। আর তা একে অন্যের অন্তরে এমনভাবে বদ্ধমূল করে দিলেন যে, তারা পরস্পরে গভীর আকর্ষণে বিচলিত হয়। তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে দিলেন পারস্পরিক কামনা, যাতে দাম্পত্য জীবনে পরস্পর একত্রে বসবাস করতে পারে। মানব দেহে একটি নির্দিষ্ট অংশ সৃষ্টি করেছেন, যার সাহায়্যে গর্ভে বীর্য ঢেলে দিতে পারে। সেখানে এসে বীর্য থেকে ক্রমান্বয়ে মানবদেহ রূপান্তরিত হয়। মানবদেহ গঠিত হতে কয়েকটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। অর্থাৎ বীর্য থেকে রক্ত, জমাট রক্ত থেকে মাংসপিণ্ড, তারপর অস্থি, তার উপরে গোস্তের আবরণ, তাকে শিরা-উপশিরা জাল দ্বারা বেষ্টন করে মানবদেহের আকারে রূপান্তরিত করা হয়। তারপর কান, চোখ ও দেহের অন্যান্য অংশ সৃষ্টি হয়। পরে এতে শক্তির সঞ্চার হয়। চক্ষের দৃষ্টিশক্তি এমন এক বিস্ময়কর ব্যাপার, যা ব্যাখ্যা করা দুঃসাধ্য। চক্ষু সাত স্তরে গঠিত। তার প্রত্যেক স্তরের কাজ ভিন্ন এবং তার আকারও ভিন্ন। যদি তার একটি স্তরও নষ্ট হয়ে যায় তবে চক্ষের দৃষ্টিশক্তি লোপ পাবে। চক্ষের চতুর্দিকে সূক্ষ্ম পলকগুলির প্রতি লক্ষ্য কর, চক্ষের ন্যায় নাজুক অংগের হেফাজতের জন্য এগুলি সৃষ্টি করা হয়েছে। একে আল্লাহ্ দ্রুত উঠানামার শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। চোখের দিকে ক্ষুদ্র কোন কিছু আসতে দেখা মাত্র পলকগুরি দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে আর বিরপদাশংকা থেকে চক্ষুকে রক্ষা করে। বায়ুতে উড়ন্ত ধূলা-বালি থেকে চক্ষুকে বাঁচায়, পলক দুটি যেন চোখের দুখানি কপাট, প্রয়োজনে খুলে যায় আবার প্রয়োজন মত বন্ধ হয়ে চোখকে আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা করে।
চোখের হেফাজত ছাড়াও পলক সৃষ্টির মধ্যে চেহারার এবং চোখের সৌন্দর্যও নিহিত রয়েছে। এ কারণে পলকের পশমগুলি পরিমাণ মত সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি খুব লম্বা হতো তা হতো চোখের পক্ষে পীড়াদায়ক আর যদি খুব ছোট হতো তা হতো চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। চোখের পানিকে আল্লাহ্ লবণাক্ত করে সৃষ্টি করেছেন, যাতে চোখের ভিতরের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। পলকের উভয় পার্শ্ব কিছুটা নিম্নমুখী ঝুঁকানো, যাতে চোখের পানি চোখের কোণ দিয়ে বয়ে যেতে পারে। চোখের ভূগুলি যেমন চোখকে হেফাযত করে, তেমনি চেহারার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। ঝালরের ন্যায় সজ্জিত পশমগুলি চেহারাকে অপরূপ শোভায় শোভিত করে। মাথা আর দাড়ির কেশগুচ্ছ আল্লাহ্ এভাবে সৃষ্টি করেছেন, যা একটা নির্দিষ্ট নিয়মে বর্ধিত হয়, মানুষ তা কেটে-ছেটে চেহারা ও আকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে। মুখ আর জিহবা আল্লাহর সুনিপুণ কারিগরির দুটি নিদর্শন। মুখ বন্ধ করার জন্য কপাট স্বরূপ দু'খানা ওষ্ঠ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের সময় খোলা যায় আর যখন প্রয়োজন থাকে না তখন তা বন্ধ রেখে ক্ষতিকর দ্রব্য মুখে প্রবেশ করা থেকে রক্ষা করা যায়। তা ছাড়া দাঁত আর মাড়ির হেফাযতও ওষ্ঠের দ্বারা হয়ে থাকে। ওষ্ঠ না হলে মুখ দেখতে বিশ্রী আর তার হেফাযতও হতো না। কথা বলার সময় ওষ্ঠের সাহায্য প্রয়োজন। ওষ্ঠের সঞ্চালনে বর্ণ উচ্চারণ করা হয়। বর্ণের সাহায্যে শব্দের সৃষ্টি হয়; আর তার সাহায্যে মানুষ মনের ভাব ব্যক্ত করে।
ওষ্ঠের সাহায্যে পানাহারে সুবিধা হয়। মুখের মধ্যে খাদ্য নাড়াচাড়া করার বেলায় ওষ্ঠের সাহায্য প্রয়োজন।
দন্তপাটির গঠন দেখ। আল্লাহ্ কিভাবে তা গঠন করেছেন। দাঁতগুলি বত্রিশ খণ্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। সবগুলি খণ্ড একখানা হাড় করে তৈরী করা হয় নাই। যদি তা হতো, তবে তা হতো ভারি অসুবিধাজনক। দাঁতগুলি যেভাবে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন তাতে দু' একটি দাঁত নষ্ট হলে বাকীগুলি ব্যবহার করা যায়। যদি দাঁত একখানা অভিন্ন হাড় হতো তবে তা সম্ভব হতো না। মুখের শ্রী সৌন্দর্য ছাড়াও দাঁত দ্বারা অনেক কাজ করে থাকি। দাঁত ছাড়া আহার করাই কঠিন হতো। কোন শক্ত দ্রব্য খাওয়া চলতো না। দাঁত এমন মজবুতভাবে গড়া যে, কঠিন ও শক্ত হাড়গুলি দাঁতের সাহায্যে চুরমার করা যায়। এ কারণে মাড়ির গোশত বিশেষ শক্ত করে তৈরী করা হয়েছে। নরম হলে দাঁতগুলি সুদৃঢ় আর কাজের উপযুক্ত হতো না। খাদ্য উত্তমরূপে চর্বিত হওয়ার প্রয়োজন এই যে, খাদ্যদ্রব্য পেটে দিয়ে তা সহজে হজম হয়ে শরীরে পুষ্টির সৃষ্টি করে। আর দেহকে কর্মক্ষম ও শক্তিশালী করে তোলে। দেহ-বিজ্ঞানীদের মতে খাদ্য পরিপাকের কয়েকটি স্তর রয়েছে। তার প্রথম স্তর হচ্ছে মুখ। তাকে প্রথম পরিপাক বলে। দাঁতের দুই পার্শ্বে শক্ত মাড়ি রয়েছে, এর সাহায্যে শক্ত দ্রব্য চর্বণ করা যায়। ইহারা সুদৃঢ় গোড়ালী বিশিষ্ট মোতির মালার ন্যায় পরস্পর সন্নিহিত। দু'পাটি দাঁত মুখের মধ্যে অতি সুন্দর দেখায়।
মুখের গহবরে আল্লাহ্ তরল লালা এমনভাবে গুপ্ত রেখেছেন, যা খাদ্যদ্রব্য চর্বণের সময় নির্গত হয়। আর তা খাদ্যের সাথে মিশে হজম ক্রিয়ায় সহায়তা করে। তা যদি অন্য সময়ে মুখ ভরে থাকত তবে কথাবার্তা বলা হতো ভারী অসুবিধা, আর মুখ খোলাই হতো কঠিন। কেননা, মুখ খুলতেই তা বের হয়ে পড়তো সুতরাং তা খাদ্য চর্বণের সময় বের হয়ে হজমের সহায়তা করে আর খাবার পরে লালা নির্গত হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে আল্লাহর অশেষ নৈপুণ্যের পরিচয় বিদ্যমান। অবশ্য পরে এতটা লালা থেকে যায়, যা কণ্ঠনালী সিক্ত রাখে, শুকিয়ে না যায়। যদি কণ্ঠনালী শুকিয়ে যেত তবে কথা বলা হতো দুঃসাধ্য। এমনকি কণ্ঠনালী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে শ্বাস গ্রহণ করা হয়ে পড়তো অসম্ভব, ফলে প্রাণনাশ অনিবার্য হয়ে পড়তো। আবার আল্লাহর হেকমত আর কুদরতের প্রতি লক্ষ্য কর। তিনি মানুষের আহার করার জন্য জিহ্বায় স্বাদ গ্রহণের শক্তি নিহিত রেখেছেন, যাতে সে রুচিকর খাদ্য গ্রহণ করে আর অরুচিকর ও বিস্বাদ খাদ্য বর্জন করে। স্বাদের কারণে খাদ্য হয় আরামদায়ক আর সুখকর, আর সুস্বাদু খাদ্য অতি সহজে হজম হয়।
খাদ্যদ্রব্য তাজা, বাসি, ঠাণ্ডা, গরম সব কিছু জিহ্বাই যাচাই করে।
আল্লাহ্ বলেনঃ
আমি কি তার জন্য দুই চোখ জিহ্বা আর ওষ্ঠ দেইনি? (সূরা বালাদ)
আল্লাহ্ মানুষকে দুটি কান দিয়েছেন। কানের অভ্যন্তরে এক প্রকার তরল দ্রব্য রয়েছে, যা শ্রবণ শক্তিকে সংরক্ষণ করে। আর কীট প্রভৃতি অনিষ্টকর প্রাণী যাতে কানে প্রবেশ না করে। কানের ছিদ্রের উপরে এক-একটি ঝিনুকাকৃতি পাখা সৃষ্টি করা হয়েছে, যা শব্দকে সংযত করে কানের ছিদ্রে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। কানের পাখায় আল্লাহর এমন তীক্ষ্ণ অনুভূতি দান করেছেন যে, কোন ক্ষতিকর প্রাণী বা কোন কিছু কান স্পর্শ করা মাত্রই টের পায়। কানের ছিদ্রকে বক্র এবং পেঁচানো করে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে শব্দ দীর্ঘ হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে আর কোন কীট পোকা প্রভৃতি সহসা কানের ভিতরে ঢুকে পড়তে না পারে। পেঁচানো পথে ভিতরে যেতে বিলম্ব হয়। আর তা বের করা বা ধ্বংস করা সম্ভব হয়।
নাকের প্রতি লক্ষ্য কর! মুখমণ্ডলের মধ্যখানে উন্নত নাসিকাটি কি সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। তাঁর দুটি ছিদ্রে ঘ্রাণের অনুভূতি শক্তি সংরক্ষিত করা হয়েছে। যদ্বারা খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের ঘ্রাণ অনুভব করা যায়। ইহার সাহায্যে লাভ করা যায় খোশবুর আনন্দ আর নাক বন্ধ করে রক্ষা পাওয়া যায় বন্ধু থেকে।
নাসিকার সাহায্যেই নির্মল বায়ু সেবন করে প্রাণকে সজীব করা সম্ভব হয়। আর দেহের অভ্যন্তরীণ তাপও এর ফলে বৃদ্ধি পায়। এই নাসারন্ধ্র মানুষের বহু প্রয়োজনে আসে। শব্দ নির্গমনে জিহ্বার সাহায্যে স্বর উচ্চারণ শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচল এসব ব্যাপারে নাসারন্ধ্র কাজে আসে। কোন কোন লোকের নাসারন্ধ্র খুব সরু, আবার কারো কারো খুব বড়, কোনটি দীর্ঘ, কোনটি বা হ্রস্ব, এসব বিভিন্নতার কারণেই স্বরের তারতম্য হয়। এ কারণে দুজনের স্বর কখনও এক রকম হয় না। যেমন দু'জনের আকৃতি কখনও এক হয় না, তেমনি দু'জনের স্বর কখনও এক রকম হয় না। স্বর শুনে লোক চেনা যায়। যেমন চেনা যায় একজনের চেহারা দেখে। এই বিভিন্নতার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর সুনিপুণ কারিগরির নিদর্শন। এই বিভিন্নতা আল্লাহ্ রোজে আযল থেকেই করে রেখেছেন। হযরত আদম আর হাওয়ার আকৃতির মধ্যেও ছিল বিভিন্নতা, সেই বিভিন্নতা তাদের আওলাদের মধ্যেও চলে আসছে। আল্লাহর সুনিপুণ কুদরতের পরিচয় রয়েছে এই বিভিন্নতার মধ্যে। এই পার্থক্যের কারণে আমরা বেঁচে যাই বহু মুশকিল থেকে।
আল্লাহ্ মানুষকে দু'খানা হাত দিয়েছেন, যার প্রয়োজনীয়তা শুমার করা কঠিন। হাত দু'খানা দ্বারা মানুষ করে উপার্জন আর প্রতিরোধ করে দুশমন। চওড়া পাঞ্জা, পাঁচটি আঙ্গুল এক সারিতে তৈরী করেছেন। পঞ্চম বা বৃদ্ধাঙ্গুলি কিছু একটু দূরে; যা প্রত্যেকটি অঙ্গুলির সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে। হাতের এই গঠন নৈপুণ্যের পরিবর্তে দুনিয়ার সকল লোক একত্রিত হয়েও যদি হাতকে অন্য গঠনের তৈরী করার পরিকল্পনা করে, তা এর চেয়ে উত্তম ও কার্যকর রূপ কখনো সম্ভব হবে না। হাতের এই গঠনের সাহায্যে মানুষ যা কিছু ধারণ করতে, উঠাতে-নামাতে ও দিতে-নিতে পারে। হাতের তালু বিস্তার করলে হাতকেএকখানা থালার ন্যায় বানিয়ে নেওয়া যায়, আবার মুষ্টিবদ্ধ করে শত্রুকে আঘাত করা যায় বা ভয় দেখানো যায়। আবার অঞ্জলী বানিয়ে পানি পান করার কাজে ব্যবহার করা চলে। চলে তার দ্বারা চামচের কাজ, আবার ঝাড়ুর কাজও করা যায় হাত দ্বারা।
আঙ্গুলের মাথায় নখ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে যেমন বেড়েছে আঙ্গুলের সৌন্দর্য, তেমনি তা দিয়ে হেফাজত হয় আঙ্গুলগুলি। আবার কোন জিনিস হাতে তোলার ব্যাপারে নখের সাহায্য দরকার; নখ ব্যতীত মাটি থেকে ক্ষুদ্র জিনিসগুলি তোলা সম্ভব হতো না। শরীর চুলকাতে নখের সাহায্য নেওয়া হয়।
দেখ, নখ শরীরের কত ক্ষুদ্র অংশ এবং এটাকে খুবই নিকৃষ্ট বলে গণ্য করা হয় কিন্তু তারও বহু উপকারিতা রয়েছে।
আঙ্গুলের মাথায় যদি নখ না থাকে আর শরীরে খুব চুলকানি হয় তবে তার কি নাজেহাল অবস্থা হয়। নখের কার্যকারিতা কত ব্যাপক সুন্দর।
নখকে আল্লাহ্ না হাড়ের ন্যায় শক্ত না গোশতের ন্যায় নরম করে সৃষ্টি করেছেন। নখ বর্ধনশীল, ভঙ্গে পুনঃ জন্মে বেশী বেড়ে গেলে কেটে ফেলা হয়। নিদ্রায়, জাগরণে চুলকাতে হাত আপনা থেকে সেখানে যায়, আল্লাহ্ একে এই কার্যকারিতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ্ মানব দেহের দুটি রান আর দু'খানি নালা সৃষ্টি করেছেন। সেগুলি প্রসারিত করা যায়। তার সাথে সৃষ্টি করেছেন দু'খানি পা। তার উপর ভর করে দাঁড়ান যায়, তার সাহায্যেই চলাফেরা করতে হয় আর দৌড়ানোর সময় দৌড়ানো যায়। পায়ের আঙ্গুলেও নখ রয়েছে, যার ফলে আঙ্গুলের শোভা বর্ধন হয়েছে আর হেফাজতের কাজও হয়ে থাকে। এসবই আল্লাহ্ মানবদেহের নাপাক বীর্য দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। শরীরের অস্থিগুলিও আল্লাহ্ সেই অপবিত্র বীর্যে তৈরী করেছেন। অস্থিগুলি দেহের খুঁটি স্বরূপ। তার উপর সারাটি দেহ নির্ভরশীল। অস্থিগুলির গঠন ও আকৃতি লক্ষ্য কর, তা কত রকমের বাঁকা, সোজা, লম্বা,গোলাকৃতি নিরেট ফাঁপা, চওড়া, সরু, হালকা, আর ভারী প্রভৃতি নানা গঠনের অস্থি রয়েছে মানব দেহে। হাড়গুলির সন্ধিস্থলে রয়েছে এক প্রকার তরল লালার ন্যায় পদার্থ, যাতে করে অস্থিগুলি রক্ষা পায় আর উঠানামা ও বাঁকা-সোজা করা সহজ হয়। তাছাড়া সেগুলির রয়েছে আরো বহু উপকারিতা।
মানুষ জীবনের তাকিদে এবং নানা প্রয়োজনে তার দেহের মুখাপেক্ষী। তার দেহকে নানাভাবে সঞ্চালিত করতে হয়। আল্লাহ্ তার প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে অস্থি পৃথক পৃথক বহু খণ্ডে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। যেন আবশ্যক মত অনায়াসে শরীর নাড়াচাড়া করা যায়। এসব অস্থি খণ্ড খণ্ড না হয়ে যদি সারা দেহে অখণ্ড একখানা অস্থি হতো তবে ওঠা-বসা চলাফেরা করা, বাঁকা হওয়া বা সোজা হওয়া হতো অসম্ভব। অস্থিগুলি পরস্পর সংযুক্ত করার জন্য শিরা- উপশিরা ও মাংসের ছাউনী দেয়া হয়েছে। অস্থিগুলি পরস্পর জুড়িয়ে রাখার জন্য উভয়টির প্রান্তদেশ মেলানযুক্ত করা হয়েছে, যাতে একটি অন্যটির সাথে উত্তমরূপে জুড়ে থাকতে পারে। মোটকথা, আল্লাহ্ এই অস্থিগুলিকে এমন নৈপুণ্য ও কৌশলে সংযোজিত ও সংগঠিত করেছেন যে, মানুষ দরকার মাত্রই তার দেহকে যেমন ইচ্ছা সঞ্চালিত করে নিজ কাজ সমাধা করতে পারে।
মানুষের মস্তকের গঠন লক্ষ্য কর। এটি মোট ১৫৫ খানা হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। অস্থিগুলি পরস্পর বিভিন্ন আকৃতির। আল্লাহ্ তার অসীম কুদরতে এগুলি এমনভাবে জুড়ে দিয়েছেন, যাতে গোটা মস্তকটি তৈরী হয়েছে। মাথার খুপড়ির অংশে ছয়খানি হাড় রয়েছে। উপরের অংশে ১২৪ খানা আর দু খানা নীচের জোড়ায়। বাকী দাঁতগুলি রয়েছে যদ্বারা খাদ্য-দ্রব্য পেষণ করা হয়। ঘাড়কে আল্লাহ্ মস্তকের দণ্ড হিসাবে তৈরী করেছেন, যা সাতখানা গোলা ফাঁপা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। সেগুলি একটির উপর অপরটি রক্ষিত। এতে যে হেকমত আর কারিগরি রয়েছে, তা বর্ণনা করতে গেলে অনেক দীর্ঘ হবে। ঘাড়ের নিম্ন প্রান্ত পিঠের মেরুদণ্ডের উপর স্থাপিত। সেগুলি হচ্ছে ৩৪ খানি হাড়, যেগুলি একের পর এক কোমর পর্যন্ত প্রলম্বিত। কোমরে তিনখানা অস্থি রয়েছে। পিঠের অস্থি নীচের দিকে লেজ বিশিষ্ট হাড়ের সাথে যুক্ত। সেখানেও তিনটি অস্থি খণ্ডের গঠিত। পৃষ্ঠদেশের হাড়গলি পাঁজর, বক্ষ, কাঁধ, হাত, পা ও নিতম্বের সাথে অতি নিপুণতার সাথে সংযোজিত। মানব দেহে মোট ২৪৮ খানা অস্থি রয়েছে। অবশ্য ফাঁকা স্থান পূর্ণ করার জন্য যে ক্ষুদ্রাকৃতির হাড়গুলি রয়েছে তা এ হিসাবের বাইরে।
আল্লাহর অসীম কুদরত আর হেকমতের প্রতি লক্ষ্য কর। যিনি বীর্যের ন্যায় অপবিত্র পদার্থের দ্বারা এসব সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে আল্লাহর অপার মহিমা আর অসীম কুদরতের নিদর্শন। আল্লাহ্ যে নৈপুণ্য আর কৌশল দ্বারা মানব দেহ গঠন করেছেন, তাতে কোন হ্রাস বৃদ্ধির অবকাশ নেই। যদি তা হতো তবে তা হতো মানুষের পক্ষে কঠিন সমস্যা। চিন্তাশীলদের জন্য এতে রয়েছে মহাশিক্ষা ও আল্লাহর নিদর্শন। দেহের অভ্যন্তরভাগের গঠন নৈপুণ্য আর শৃঙ্খলার প্রতি মনোনিবেশ কর। দেহের অস্থিগুলি যাতে প্রয়োজনের সময় নড়াচড়া ও উঠানামা করতে পারে বাঁকা-সোজা হতে পারে আর এজন্য কতগুলি জিনিস সৃষ্টি করা হয়েছে, এগুলির সংখ্যা মোট ৫২৯। এগুলি মাংসপেশী ও ঝিল্লী দ্বারা গঠিত। এগুলি কোনটা ছোট, কোনটা বড়, কোনটা চওড়া আবার প্রয়োজনানুযায়ী কোনটা সরু। এর ২৪টি চোখের পলক সঞ্চালনে বিভিন্ন কাজে লাগে। যদি এর একটিরও কম হতো তবে চোখের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হতো এবং দৃষ্টিশক্তি অকেজো হয়ে পড়তো। এমনি প্রত্যেক অঙ্গের জন্য বিভিন্ন অংশ রয়েছে। প্রয়োজনমত কোনটি ছোট আর কোনটি বড়। তারপর শিরা, উপশিরা, পেশী, ঝিল্লী প্রভৃতির সৃষ্টি সেগুলোর স্থান এবং তার ব্যাখ্যা আরো অধিক বিস্ময়কর। সে গুলির প্রকৃতির গুণাগুণ এবং কার্যকারিতা যা রয়েছে তা আমাদের জ্ঞানের অতীত।
এগুলির সৃষ্টি কৌশল আর অন্যান্য প্রাণী থেকে বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য কর। আল্লাহ্ মানুষকে সোজা ও সরল গঠনে সৃষ্টি করেছেন। যেন বসার সময়ও তার উত্তম গঠন ও আকৃতি বহাল থাকে। এ অবস্থায় সে দু'হাত দিয়ে অনায়াসে কাজ করতে পারে। অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় উপুড়মুখী করে আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেন নি। যদি অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় উপুড়মুখী করে সৃষ্টি করতেন, তবে তার পক্ষে অনেক কাজই করা সম্ভব হতো না।
মানব সৃষ্টির ভিতর বাহিরের প্রতি সার্বিকভাবে নজর কর। আল্লাহর কুদরতের বিস্ময়কর নিদর্শন রয়েছে তার গঠন নৈপুণ্যের মধ্যে। মানব দেহের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গগুলি কেমন নিখুঁত আর স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আহারে তাহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি শক্তি সঞ্চয় করে। আল্লাহ্ মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি এক নির্দিষ্ট আকারে নিয়ন্ত্রিত করেছেন। খাদ্যের প্রাচুর্য ও আধিক্যের কারণে যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি অস্বাভাবিকভাবে লম্বা, স্কুল আর ভারী হতো তবে চলা-ফেরা এবং কাজ-কর্ম করা তার পক্ষে সম্ভব হতো না। এটা আল্লাহর অসীম দয়া আর অপার করুণা যে, তিনি মানুষের প্রত্যেকটি জিনিসকে পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত রেখেছেন, নতুবা তার জন্য ঘরবাড়ী, পোশাক-পরিচ্ছদ আর পানাহার সর্বক্ষেত্রেই সৃষ্টি হতো অচলাবস্থা। মানবদেহের প্রতি লক্ষ্য করি, আর তার গঠন নৈপুণ্যের কথা চিন্তা করি যে তার দেহে আল্লাহর কুদরতের কতো কারিগরি লুকায়িত রয়েছে।
অতঃপর আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র প্রভৃতি অগণিত সৃষ্টির মধ্যে তার কতো কুদরত, কতো হেকমত নিহিত রয়েছে তা ভেবে বিস্ময়ের সীমা থাকে না। সেগুলির আকৃতি, প্রকৃতি, বিভিন্ন গঠন, একটি থেকে আর একটির পার্থক্য ও ব্যবধান, মাশরিক মাগরিবের দূরত্ব প্রভৃতি সবই সেই সর্বশ্রেষ্ঠ কুশলীর স্রষ্টার অতুলনীয় কুদরত ও হেকমতের সাক্ষ্য। এসব লক্ষ্য করে বলতে বাধ্য হই যে, আসমান জমিনের একটি ক্ষুদ্র অংশও আল্লাহর কুদরতের আর সৃষ্টির বহির্ভূত নয়, বরং তার প্রতিটি অণু পরমাণুর মধ্যে সীমাহীন হেকমত নিহিত রয়েছে। সেগুলি আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানের অগোচর।
"হার অরকে দস্তুরিস্ মারিফাতি কিরদিগার।”
প্রতি পত্র পল্লবে রয়েছে আল্লাহর পরিচয়ের সাক্ষ্য।
আল্লাহ্ বলেনঃ
তোমাদের সৃষ্টি করা কঠিন না, না আসমান সৃষ্টি, তাকে উঁচু তারপর সমতল করা কঠিন কাজ?
(সূরা নাজিয়াত)
যদি পৃথিবীর সকল মানুষ আর জ্বিন একত্রিত হয়ে পূর্ণ শক্তি ব্যয় করে বীর্য দ্বারা জীবন, শ্রবণশক্তি বা দর্শনশক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাদের পক্ষে তা কখনো সম্ভব হবে না। আল্লাহ্ তার অসীম কুদরতে মানুষকে মাতৃগর্ভে সৃষ্টি ও প্রতিপালন করেছেন তার আকৃতি দিয়েছেন এবং পরিমিত ও প্রয়োজনীয় অঙ্গ দান করেছেন। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির পরিমিত রূপ দান করেছেন। দেহের বাহির ভিতরে পুষ্টি সাধন ও বর্ধনের জন্য। খাদ্যের ব্যবস্থা এবং তা সুকৌশলে উদরে প্রবেশের জন্য রাস্তা সৃষ্টি করেছেন। দেহের অভ্যন্তরে কিভাবে হৃদপিণ্ড, কলিজা, প্লীহা, জরায়ু, মুত্রাশয়, আঁত প্রভৃতি সৃষ্টি করেছেন। এগুলি আবার নির্দিষ্ট আকারে অবয়বে যথাস্থানে সংরক্ষিত করেছেন। সেগুলির প্রত্যেকটি নিজ নিজ কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেহ শক্তিলাভ করে টিকে থাকে।
খাদ্য পরিপাকের জন্য পাকস্থলীকে উত্তম উপদানের তৈরী করা হয়েছে। পাকস্থলীতে খাদ্যদ্রব্য সহজে পরিপাক হওয়ার জন্য তাকে দন্তের সাহায্যে মিহিন করে উদরে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে পরিপাক করতে পাকস্থলীর উপর খুব বেশী চাপ না পড়ে। খাদ্যের সারাংশ দ্বারা রক্ত উৎপাদনের জন্য কলিজা কাজ করে থাকে আর প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে খাদ্য পৌঁছায়। প্লীহা আর গুর্দা কলিজার কাজের সহায়ক। প্লীহার কাজ হচ্ছে রক্তে খাবার অংশ সংগ্রহ করা আর পীতকে রক্ত থেকে পৃথক করে ফেলা। গুর্দা খাদ্যের জলীয় অংশ সংগ্রহ করে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের করে দেয়। কলিজা সারা দেহে রক্ত পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। রক্তের সারাংশ যা মাংসের সারবস্তু থেকে সূক্ষ্ম আর নির্মল তা হৃদপিণ্ডে সঞ্চিত থাকে ঠিক যেন একটি পাত্রের ন্যায়, যাতে রক্তের সারাংশ সঞ্চিত থাকে আর প্রয়োজন মত দেহের বিভিন্ন অংশে বন্টিত হয়। এসবই আল্লাহর অপার কুদরত, যা চিন্তা করলে বিস্ময়ের সীমা থাকে না। আর সেগুলির পূর্ণ ব্যাখ্যা করা এবং অনুধাবন করা মানব শক্তির বাইরে।
গর্ভাশয় সৃষ্টি, তার মধ্যে সন্তান সৃষ্টি ও বৃদ্ধি, প্রয়োজন মতে সেখানে তার খাদ্য পৌঁছা-সবই আল্লাহ্র অসীম কুদরতের নিদর্শন। তারপর সন্তানের জন্য মায়ের প্রাণে ভালবাসা সৃষ্টি, যার কারণে সে সন্তান বুকে নিয়ে প্রতিপালন করে। আর এই ভালবাসার কারণেই মা সন্তানের প্রতি সহস্র প্রাণ কুরবান করতে এবং কষ্ট স্বীকার করতে রাজী। যদি আল্লাহ্ মায়ের প্রাণে সন্তানের জন্য এহেন দরদ সৃষ্টি না করতেন, তবে মা এত কষ্ট স্বীকার করতেন না এবং কষ্টের কারণে সন্তানের প্রতি বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হতো। সন্তান যখন বড়ো হয়, তার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ সবল ও শক্তিমান হয় তখন আল্লাহ্ তার মুখে দাঁত গজিয়ে দেন। তখন সে দুধ ছেড়ে অন্য খাদ্য খেতে শুরু করে। কেননা, দাঁত অন্য খাদ্য গ্রহণে তাকে সাহায্য করে থাকে। এভাবে সন্তানের মধ্যে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি ও চেতনা জাগ্রত হয়। এমনিভাবে একদিন তার জ্ঞান-বুদ্ধি পূর্ণতা লাভ করে।
আল্লাহর কুদরতের প্রতি লক্ষ্য কর, যখন সে পয়দা হয় তখন সে থাকে একেবারেই অবোধ ও অজ্ঞ। না থাকে তার জ্ঞান, না হুশ, না ভালমন্দ বিবেচনার শক্তি। যদি জন্মের সাথে সাথে তার জ্ঞান হতো তবে দুনিয়ার এসব নতুন নতুন জিনিস দেখে সে তাজ্জব বনে যেত। তারপর সে তার নিজের প্রতি লক্ষ্য করত। কিভাবে তাকে নেকড়ায় করে কোলে তোলা হয়, কিভাবে দোলনায় রেখে প্রতিপালন করা হয়। অবশ্য তার দেহ কোমল আর নাজুক হওয়ার কারণে এসব কিছু তার জন্য প্রয়োজন। কিন্তু সাথে সাথে যদি শিশুর জ্ঞানোদয় হতো বহু বিষয়েই সে বিরোধ করত, অবাধ্য হতো এবং কলহ করত, এতে তার প্রতি মায়ের স্নেহমমতা হ্রাস পেত এমনকি তাকে যথারীতি প্রতিপালন করাই দুঃসাধ্য হতো। সুতরাং আল্লাহর হেকমতের বিধান এই যে, মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। আর ক্রমান্বয়ে সে দুনিয়ার সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে আর সচেতন হয়। শিক্ষা করে প্রত্যেকটি জিনিসের আবশ্যকতা ও ব্যবহার। যখন তার মধ্যে যৌন চেতনার উন্মেষ ঘটে, যা বংশ বৃদ্ধির কারণ বালকের মুখমণ্ডলে কেশ গজায় যাতে পুরুষ আর নারীর মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয। বিকশিত হয় তার অঙ্গে যৌবনের রূপ-লাবণ্য। আর যখন আসে বার্ধক্য তখন চেহারার রূপ-লাবণ্য যায় বিলীন হয়ে।
বালিকার চেহারাকে আল্লাহ্ করেছেন কেশমুক্ত। যাতে তার মুখমণ্ডলে যৌবনের কান্তি বিকাশ পেতে পারে আর পুরুষের জন্য তা হয় আকর্ষণীয়। ভবিষ্যৎ বংশ রক্ষার রহস্য এর ভিতর নিহিত রয়েছে।
সৃষ্টির এই শৃঙ্খলা আর কুদরতের মহিমা কি শুধুই বৃথা আর উদ্দেশ্যহীন। জ্ঞান কি একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ্ যা তার অপার মহিমা আর কুশলতায় সৃষ্টি করেছেন তা এমনিই নিরর্থক সৃষ্টি? তা কখনও হতে পারে না। অবশ্যই এর পশ্চাতে মহান উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, যা তার সৃষ্টির রহস্যের মধ্যে প্রচ্ছন্ন।
যখন মাতৃগর্ভে সন্তান স্থিত হয় তখন যদি সে রক্তের সারাংশ খাদ্য হিসাবে না পেত তবে সে কি গর্ভে শুকিয়ে মরতো না? যেমন পানির অভাবে তরু-লতা শুকিয়ে মরে যায়।
গর্ভে সন্তান পূর্ণতা লাভের পর যদি প্রসূতি প্রসব বেদনায় অস্থির না হতো আর যথাসময়ে সন্তান ভূমিষ্ট না হতো মা ও সন্তান উভয়েই মৃত্যুমুখে পতিত হতো। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর যদি শিশু প্রয়োজনীয় খাদ্য দুধ ইত্যাদি না পায় তবে শিশু কি ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মারা যাবে না? যদি যথাসময়ে শিশুর দাঁত না গজায় আর শক্ত দ্রব্য গিলে গিলে খেতে শুরু করে তবে তা হজম করতে না পেরে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। যদি ছেলের মুখে যথাসময়ে কেশ না গজাবে তবে তা দেখতে হতো মেয়ের মতো আর বালকের মতো। দাড়ি না হলে চেহারারার সৌন্দর্য, সৌম্যতা আর গাম্ভীর্য ফুটে উঠত না। এসবই মহীয়ান আল্লাহর অশেষ দান আর অনুগ্রহ ব্যতীত আর কিছুই সম্ভব নয়।
চিন্তা কর, মানুষের যৌন চেতনা কিভাবে সৃষ্টি হয়? পুরুষাঙ্গ কিভাবে জরায়ুতে বীর্য দান করে এবং সেই উত্তেজনা যাহা ধমনী হইতে বীর্য নিসঃরণ করার জন্য সৃষ্টি হয়।
অনুরূপভাবে ইহার বিপরীত বা স্ত্রী-যোনী এবং উহার কার্যকারিতা লক্ষ্য কর। এইরূপ মানব দেহের প্রতিটি কাজের প্রতি লক্ষ্য কর। আল্লাহ্ দেহের প্রতিটি অঙ্গ কি কাজের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলি কিভাবে যথারীতি কাজ করে যাচ্ছে এবং সে কাজের উদ্দেশ্য, তার গঠন ও আকৃতি দান করেছে। চক্ষু দেখার জন্য, হাত স্পর্শ করার ও ধারণ করার জন্য, পা চলাফেরার ও দৌড়ানোর জন্য, পাকস্থলী খাদ্য পরিপাক করার জন্য, কলিজা উদরের পরিপাক করা খাদ্যের পরিত্যক্ত অংশ ছাঁকার জন্য এবং প্রয়োজন মত তা বন্টন করার জন্য, মুখ আহার করার এবং কথা বলার জন্য। মোট কথা, তুমি দেহের প্রতিটি বিষয় যখন চিন্তা করবে, তখন বুঝতে পারবে যে, ইহা আল্লাহর অসীম কুদরতেরই প্রতিবিম্ব।
চিন্তা কর, ভুক্তদ্রব্য পাকস্থলীতে পৌঁছার পর কিভাবে উহা পরিপাক হয়। খাদ্যের সারাংশ হৃৎপিণ্ডে পৌঁছাইয়া দেয়। উহা সূক্ষ্ম অন্ত্রীর সাহায্যে হৃৎপিণ্ডে গিয়ে উপস্থিত হয়। স্নায়ুতন্ত্রীগুলিকে সূক্ষ্ম করে সৃষ্টি করা হয়েছে যেন খাদ্যে নির্দোষ পদার্থ ব্যতীত কোন দুষিত পদার্থ হৃদপিণ্ডে গিয়ে না পৌঁছে যা দেহের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে এই সূক্ষ তন্ত্রীগুলি প্রায় ঝিল্লিীর স্থলবতী। এগুলি পরিপাক খাদ্যদ্রব্য ছেঁকে প্রয়োজনীয় ও বিশুদ্ধ অংশ হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে দিতে পারে। হৃৎপিণ্ড একে রক্তে পরিণত করে। আল্লাহর হেকমতে খাদ্যদ্রব্য এভাবেই রক্তে পরিণত হয়। এখন থেকে রক্ত সূক্ষতন্ত্রীর সাহায্যে সর্বাঙ্গে সরবরাহ হয়। খাদ্যের সারাংশ এভাবে উৎপন্ন হওয়ার পর অবশিষ্ট যে নিকৃষ্ট পদার্থ থেকে যায়, তা যে যে অঙ্গের সেগুলি সেখানে পৌঁছে বাকী মল-মূত্ররূপে যথাস্থানে সঞ্চিত হয়। হৃদপিণ্ড যেন দেহের সেরা পাত্র, সেখানে দেহের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য সঞ্চিত হয় আর দরকার মতো তা সর্বত্র সরবরাহ হয়।
মানুষের দেহের এমন একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও দেখা যায় না, যা অনাবশ্যক বা যার সৃষ্টি অর্থহীন।
চক্ষু আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন দেখার জন্য আর প্রত্যেকটি জিনিস চেনার জন্য। রূপ-রং এর পার্থক্য, ছোট-বড়ো, উঁচু-নীচুর ব্যবধান' চক্ষু না হলে করা সম্ভব হতো না। এই যে আলো, যদি চোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকতো তবে কি কাজে আসতো এ আলো? আলো থাকলেই তবে চোখের কাজ। কারণ আলোর সাহায্যে চোখ দেখতে পায়। বিভিন্ন রং-এর সৃষ্টি এজন্য যে, চোখ বিভিন্ন রং এর পার্থক্য অনুভব করতে পারে।
কান আল্লাহ্ এজন্য সৃষ্টি করেছেন যে, তার সাহায্যে শব্দ শুনা যায়। যদি শব্দ হতো আর কান তা শ্রবণ করতে না পারত বা কানই আদৌ না হতো তবে শব্দের উপকারিতা কি ছিল? এমনি প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজনীয়তা। ইন্দ্রিয় আর অনুভূতির মধ্যে এমন সম্পর্ক যে, ইন্দ্রিয় ব্যতীত অনুভূতি অর্থহীন আলো আর বায়ুরও ঠিক সেই একই অবস্থা। যদি আলো না থাকত তবে দর্শনেন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়তো। যদি বায়ু না থাকত তবে কানে শব্দই পৌঁছতো না।
অন্ধ আর বধিরের অসুবিধা চিন্তা করে দেখ। আল্লাহর এ দু'টো নেয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে তাদেরকে কি কি মুসিবত ভুগতে হয়। অন্ধ যখন পা ফেলে চলতে থাকে তখন সে জানে না কোথায় তার পা পড়বে। সে বিপজ্জনক গর্তেই পা ফেলছে, না কোন অনিষ্টকর প্রাণীর উপরই পা ফেলছে অথবা তার সামনে কি রয়েছে সে তার কিছুই জানে না। সামনে থেকে যদি কোন মহা আপদ-বিপদও আসতে থাকে তাও তার দেখবার উপায় নেই। সৃষ্টির বহু দান অবদান থেকে সে বঞ্চিত। এই রূপ রং এর দুনিয়াও তার কাছে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কালো, সাদা, লাল, হলদে তার কাছে সবই সমান।
শ্রবণ শক্তি থেকে যে বঞ্চিত সে বেচারা তো কথার মাধুর্যই অনুভব করতে পারে না। শব্দে যে একটা মাধুর্য আর আকর্ষণ রয়েছে তা সে উপভোগ করতে পারে না। হৃদয়গ্রাহী শব্দ অথবা কর্কশ ও অপ্রিয় শব্দের মধ্যে পার্থক্য করার সাধ্যও তার থাকে না! কানে শব্দ প্রবেশ করলেই তার তারতম্য অনুভব করা সম্ভব হতে পারে, কিন্তু যে বধির সে তো তার কল্পনা করতে পারে না। কোন লোক সভায় বসা থাক বা কেউ তাকে লক্ষ্য করে কিছু বলুক সবই সমান। সে মজলিসে উপস্থিত থেকেও অনুপস্থিত, জীবিত থেকেও সে মৃতপ্রায়।
আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর নেয়ামত জ্ঞান থেকে বঞ্চিত, অর্থাৎ উন্মাদ পাগল তার অবস্থা তো পশু থেকেও নিকৃষ্ট। পশু তো ভালমন্দ কতকটা পার্থক্য করতে পারে কিন্তু পাগল তাও পারে না, কেননা সে জ্ঞান থেকেই বঞ্চিত।
এবার আল্লাহ্ প্রদত্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির প্রতি সামগ্রিকভাবে নজর কর আর মানুষের শ্রবণ, দর্শন, স্পর্শ, স্বাদ গ্রহণ প্রভৃতি শক্তির প্রতি লক্ষ্য কর, যার সাহায্যে সে জীবনের যাবতীয় প্রয়োজন মিটায়। যদি এসব শক্তির একটির অভাব হতো তবে তার কাজকর্মে সৃষ্টি হতো দারুণ বাধা বরং তা হতো তার জন্য একটা বিরাট দুর্ঘটনা।
আল্লাহ্ যাকে তার কোন একটি ইন্দ্রিয় থেকে বঞ্চিত করেছেন, সে নিশ্চিতভাবে নিদারুণ পরীক্ষার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এসব নেয়ামতের কি মূল্য তা সে এ অভাবের দ্বারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। অতঃপর তার ধৈর্য অবলম্বন করা ব্যতীত আর করার কি থাকে? এই অভাবের ফলে তার জীবনে যেসব বিপদ আর মুসিবত দেখা দেবে তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করে যেতে হবে যাতে সে আখেরাতে তার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রতিদান লাভ করতে পারে।
আল্লাহর কুদরত আর রহমত লক্ষ্য কর। সর্বাবস্থায়ই তিনি তার বান্দার প্রতি দয়ালু। দান করার ক্ষেত্রে বান্দার কৃতজ্ঞতার জন্য আর বঞ্চিত করার বেলায় সবরের জন্য আল্লাহ্ পুরস্কৃত করবেন। মানুষের অঙ্গগুলির প্রতি লক্ষ্য কর। কোন অঙ্গ একটি মাত্র আর কোন অঙ্গ দু'দুটি। সে গুলির কাজ আর দায়িত্বের প্রতি লক্ষ্য কর, কিভাবে সেগুলি নিজ নিজ কাজ ও দায়িত্ব পালন করছে। মস্তকের প্রতি নজর কর, উহা মাত্র একটি। কিন্তু কত কাজ আর দায়িত্ব তার প্রতি ন্যস্ত। এগুলি ছাড়া যদি মস্তকের উপর অতিরিক্ত কোন চাপ পড়ে তবে তার প্রতি তা খুবই ভারী হয়ে পড়ে। মাথা যদি একটির পরিবর্তে দুটো হতো তবে একটি কথা বলার সময় অন্যটি নিষ্ক্রিয় থাকতে হতো আর যদি উভয় মিলে একটি কথা বলতো তবুও একটি বেকার থাকতো। আর যদি এক মস্তক এক কথা বলতো অন্যটির অন্য কথা আর দুটির মধ্যে বিভিন্নতা তবে বিষম সমস্যার সৃষ্টি হতো। কোনটি আসল কথা তা বোঝা দুঃসাধ্য হতো।
কিন্তু হাতের অবস্থা ভিন্ন। আল্লাহ্ মানুষকে দু'খানা হাত দিয়েছেন। হাত যদি একখানি মাত্র হতো তবে কাজ করতে ভারী অসুবিধা দেখা দিত। বস্তুতঃ হাত দু'খানা হওয়াই অপরিহার্য। যার এক হাত পঙ্গু বা বেকার তাকে জিজ্ঞাসা করলেই বোঝা যায় তার কাজ করতে কি অসুবিধা। এক হাতওয়ালা কোন অবস্থায়ই দু'হাত ওয়ালার মতো কাজ করতে পারে না। তারপর কষ্ট আর অসুবিধার কথা তো রয়েছেই।
এমনি দু'পা হওয়ারও যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট। যদি তা না হতো তবে মানুষ চলতেই পারতো না।
শব্দ সৃষ্টির অঙ্গটির গঠন নৈপুণ্যের প্রতি লক্ষ্য কর। আবার জিহ্বা, ওষ্ঠদ্বয় ও দাঁত বর্ণ এবং শব্দকে বর্ণে ও কথায় পরিণত করার কাজে সাহায্য করে থাকে। মুখে যদি এগুলো না থাকতো তবে আওয়াজ নষ্ট ও অকেজো হয়ে যাওয়ার দরুন কথা বলার কেমন অসুবিধা আর বিপর্যয় সৃষ্টি হত। আর শ্বাসনালী শব্দ বের করা ছাড়াও বায়ু ফুসফুস পর্যন্ত নিয়ে যায়। যাতে হৃৎপিণ্ডেরও আরাম হয়। যদি এই নালীর ব্যবস্থা না থাকত অথবা কিছু সময় তা বন্ধ করে রাখা হতো তবে হৃৎপিণ্ড অস্থির হয়ে পড়ত।
জিহবা দ্বারা খাদ্য গ্রহণে সাহায্য হয়। দাঁত দিয়ে খাদ্য চর্বণ ও পেষণে সাহায্য হয়। ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা খাওয়া আর পান করার সহায়তা হয়ে থাকে। আর মুখের জন্য ওষ্ঠ দুটি কবাটের কাজ করে থাকে। এসব বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি অসংখ্য কাজে এসে থাকে। যদি এতে কিছু মাত্র কমবেশী হত তবে তার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হতো আর অসম্ভব হয়ে পড়তো অনেক কাজ। সুতরাং আল্লাহ্ প্রতিটি অঙ্গ চূড়ান্ত নৈপুণ্য আর জ্ঞানের ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন। মগজের প্রতি লক্ষ্য কর। যদি তা খুলে ফেলা হয়, তবে দেখা যাবে পরস্পর খুব নিবিড়ভাবে সন্নিহিত, যাতে হঠাৎ কোন আঘাত পেলে তা থেকে রক্ষা পায়। এর উপরে রয়েছে খুপড়ির ঢাকনা, তা আবার কেশ দ্বারা আচ্ছাদিত যাতে মস্তকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর শীত গ্রীষ্ম থেকেও বেঁচে থাকা যায়। দেখ, আল্লাহ্ মগজের হেফাজতের জন্য কি কি ব্যবস্থা করেছেন। মগজের ন্যায় কোমল নাজুক জিনিস আল্লাহ্ কি উত্তমভাবে রক্ষা করেছেন, যা সকল অনুভূতির মূল। মস্তিষ্ক ছাড়া সকল অনুভূতিই অকেজো।
হৃৎপিণ্ড দেখ, উহা বুকের বদ্ধ খাচায় কিভাবে সংরক্ষিত। তার উপরে রয়েছে ঝিল্লীর পর্দা আর তার চতুর্দিক গোশত আর শিরা-উপশিরা দ্বারা সংরক্ষিত করা হয়েছে। দেহের মধ্যে এটিই সর্বপ্রধান অংশ। এটি দেহ রাজ্যের বাদশাহ, এজন্যই একে এভাবে সুরক্ষিত করে রাখা প্রয়োজন।
হলক অর্থাৎ গলা দেখ! তাতে দুটি রাস্তা রয়েছে। একটি শব্দ বের হবার জন্য, যাকে শ্বাসনালী বলে, এটি ফুসফুস্ পর্যন্ত প্রসারিত। দ্বিতীয়টি খাদ্যনালী, এটি পাকস্থলী পর্যন্ত প্রলম্বিত। গলায় একটি পর্দা রয়েছে, যাতে খাদ্য ফুসফুসে প্রবেশ করতে না পারে। আর ফুসফুস্কে পাখার ন্যায় তৈরী করা হয়েছে, যা হৃৎপিণ্ডকে বায়ু দ্বারা সজীব রাখে আর উত্তাপ ও বন্ধতার জন্য তার কাজে বাধার সৃষ্টি না হয়। আর বায়ুর অভাবে হৃৎপিণ্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে মানুষের জীবন নাশের কারণ না হয়। এ কারণে ফুসফুস্ত্রে ভিতরের ফাঁকা স্থান বায়ুপূর্ণ থাকে যাতে হৃৎপিণ্ড সর্বদা বায়ু লাভ করতে পারে।
পেশাব পায়খানার রাস্তার প্রতি লক্ষ্য কর! আল্লাহ্ কি কৌশলে আর. নিপুণতার সাথে তা তৈরী করেছেন। তা কেবল প্রয়োজনের সময় কাজ করে অর্থাৎ প্রস্রাব পায়খানার বেগ হলে তখনই তার কাজ, অন্য সময় তা থেকে কিছু নিঃসৃত হয় না। যদি সর্বাবস্থায় তা থেকে মলমূত্র নির্গত হতে থাক্ত তা হলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতো আর মানুষ কখনও পাক পবিত্র থাকতে পারত না। দেখ আল্লাহ্ মানুষের রানদ্বয় আর নিতম্ব কিভাবে তৈয়ার করেছেন। তাতে স্কুল সুপুষ্ট মাংস রয়েছে। যাতে লোকের বসার বেলায় কোন কষ্ট না হয়। মাংসবিহীন শীর্ণ ও ক্ষীণ মানুষের বসায় কষ্ট হয়। তাই এ'দুটি নরম গদির ন্যায়।
মানুষের লিঙ্গের প্রতি লক্ষ্য কর (লজ্জার কথা নহে, এটাও আল্লাহ্ বিশেষ উদ্দেশ্যে করেছেন)। যদি তা সর্বক্ষণ শিথিল আর ঢিলা থাকত তবে মানুষের পক্ষে গর্ভাশয়ে বীর্য ক্ষেপণ করা কি করে সম্ভব হত? আর যদি সর্বাবস্থায় তা উত্তেজিত থাকত তবে তা হতো ভারী অসুবিধাজনক। এজন্য আল্লাহ্ তাকে এভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, যথাসময়ে তা দৃঢ় ও উত্তেজিত হয়, অন্য সময় নিঃসাড় শিথিল হয়ে থাকে যেন এর অস্তিত্বই নেই।
গৃহের বা বাড়ীর মধ্যে পায়খানা করার স্থান সবচেয়ে অধিক আবৃত আর নির্জন হয়ে থাকে। কেননা মানুষ সেখানে গিয়ে হাজত সেরে অস্বস্তি আর উদ্বেগ থেকে উদ্ধার পায়। সেখানে সে উলঙ্গ হয়ে বসে। আল্লাহর কি হিকমত দেখ, তিনি মলদ্বারকে দেহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রচ্ছন্ন স্থানে সৃষ্টি করেছেন, তারপর মাংসল রান দ্বারা তাকে আরও প্রচ্ছন্ন করা হয়েছে যেন উলঙ্গ হলেও অনেকটা ঢাকা থাকে।
কেশ আর নখের প্রতি নজর করে দেখ, সেগুলি বর্জনশীল। সেগুলি কেটে ফেলার মধ্যেও রয়েছে যুক্তি আর কল্যাণ। আল্লাহ্ নখ আর কেশ অনুভূতিহীন করেছেন, যাতে তা কর্তন করার সময় কষ্ট না হয়! যদি তাতে অনুভূতি থাকত তবে হয়তো বেদনা বা কষ্টের ভয়ে তা কাটা হতো না। ফলে, তা অনেক বড় হয়ে দেখতে বন্য জন্তুর মতো হতো।
তারপর কেশ গজাবার স্থানগুলির প্রতি লক্ষ্য কর। যদি চোখের ভিতরেও কেশ গজাতো তাতে মানুষ যেত অন্ধ হয়ে। কেননা, চোখের ন্যায় নাজুক আর সূক্ষ্ম অঙ্গ তা সহ্য করতে পারত না; যদি মুখের ভিতরে লোম হতো তাতে পানাহারের হতো নিদারুণ অসুবিধা আর স্বাদ যেত বরবাদ হয়ে। এমনি যদি হাতের তালুতে লোম হতো তবে স্পর্শ করা, ধরা প্রভৃতির আরাম হতে মানুষ বঞ্চিত হতো। আর তাতে বিঘ্ন সৃষ্টি হতো অনেক কাজে। এমনি যদি নারীর যোনীর অভ্যন্তরে লোম হতো তবে স্ত্রী সম্ভোগের সুখ হতে বঞ্চিত হতে হতো। এসব ব্যাপারে আল্লাহর কুদরতের প্রতি লক্ষ্য কর, তিনি প্রত্যেকটি জিনিস যথাস্থানে তৈরী করে মানুষের শান্তির ব্যবস্থা করেছেন। কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা জিনিস এমনভাবে সৃষ্টি করেন নাই যাতে মানুষের অশান্তি আর কাজে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। লক্ষ্য কর, আল্লাহ্ মানবদেহে পানাহার, নিদ্রা আর সহবাসের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছেন আর সেগুলির চাহিদা আর অনুভূতিও সৃষ্টি করেছেন।
আহার পানীয়ের চাহিদার সময় তৃষ্ণার সৃষ্টি হয়। পানাহার মানুষের জীবন ধারণের জন্য একান্ত প্রয়োজন।
নিদ্রাও মানুষের জন্য প্রাকৃতিক দাবী। নিদ্রা ব্যতীত মানুষের দেহ মনে শান্তি হয় না এবং শরীরে নতুন শক্তি ও কার্যোৎসাহ সৃষ্টি হয় না। দিবা রাত্রির মধ্যে কিছুক্ষণ নিদ্রা ভোগ করার পর তার দেহমনে আরাম, স্বস্তি আর নতুন কর্মশক্তি ফিরে আসে।
সহবাসের জন্য আসক্তি ও কামোদ্দীপনা হচ্ছে আমন্ত্রণ আর আহবান। যা বংশধারা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। যদি কামাশক্তির উদ্রেক না হতো তবে মানুষ অন্য কাজে লিপ্ত থাকত আর বংশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ভুলে যেত। এভাবে তার দৈহিক শক্তি হ্রাস পেত আর অবসাদ এসে বংশধারা বিলুপ্ত করে দিত।
দেখ, সহবাসের উদ্দেশ্য যদি শুধুমাত্র বংশরক্ষা হতো তবুও বংশ লোপ পেয়ে যেত; কেননা এমন অনেক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিত যার কারণে মানুষ উৎসাহী হতো না, ফলে তা বংশ বিলুপ্তির কারণ হতো। আল্লাহর হিকমতের প্রতি লক্ষ্য কর, তিনি মানুষের প্রকৃতিতে এমন কামোত্তেজনা দান করেছেন, যার কারণে মানুষ সহবাসের জন্য উদগ্রীব হয়, যার ফলে পরোক্ষভাবে সন্তান সৃষ্টি হয়।
দেহের বিন্যাস ও গঠনের প্রতি লক্ষ্য কর। দেহ যেন একটি রাজ্য, যেখানে চাকর কর্মচারী স্ব স্ব কর্মে নিয়োজিত। একের প্রতি এক কাজ ন্যস্ত রয়েছে তো অন্যে তার সহায়তায় হাজির। গৃহে যদি কোন ময়লা আবর্জনা সঞ্চিত হয় তবে নিয়োজিত খাদেম তা তৎক্ষণাৎ বের করে দিয়ে গৃহকে পরিষ্কার করে ফেলে। মনে কর বাদশাহতো সেই স্রষ্টা যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। আর মানবদেহ প্রাসাদ সদৃশ। দেহের হাত, পা, নাক, কান, চক্ষু এগুলি কর্মচারী বা সেবক তুল্য। যদি এগুলির মধ্যে একটিও কম হয়, তবে দেহের শৃঙ্খলা বিপর্যয় হয়ে যাবে। লেন-দেন, দেখা-শুনা, চলাফেরা, প্রভৃতি সব কাজই এলোমেলো হয়ে যাবে! না রাস্তা চিনে চলাফেরা করতে পারবে, না জ্ঞান দ্বারা উপকৃত করতে পারবে, না বাঁচাতে পারবে নিজেকে ক্ষতি থেকে। মোটকথা, কোন একটির অভাব হলে সব কাজই বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং মানব দেহে আল্লাহ্ যেসব নেয়ামত দান করেছেন সেগুলির প্রতি লক্ষ্য কর, যদি এগুলি না থাকে তবে মানব জীবনই অকেজো আর ব্যর্থ হয়ে যাবে।
আল্লাহর সৃষ্টির কৌশলের প্রতি লক্ষ্য কর। স্মৃতিশক্তি নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতি বড় নিয়ামত। আবার বিস্মৃতি-অর্থাৎ ভুলে যাওয়া এটাও আল্লাহর একটা নিয়ামত, একটা বিশেষ অনুগ্রহ। এতে বিরাট রহস্য নিহিত। যদি মানুষের মধ্যে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকত তবে মানুষ অনবরত দুঃখ-শোকে জর্জরিত থাকত আর দুঃখ-কষ্টে তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠতো। ফলে দুনিয়ার সব আনন্দ আর সুখ তার কাছে বিস্বাদ হতো। কোন কিছুতেই সে স্বাদ বা আনন্দ পেত না। কেননা, দুঃখ-কষ্টে তার মন এতই নিমগ্ন থাকত যে জীবনের প্রতিই সে বিমুখ হয়ে পড়ত। জালেমের অত্যাচার, হিংসুকের হিংসা ও দুর্ব্যবহার প্রভৃতি সর্বদা তার হৃদয়ে জাগরিত থেকে জীবনকে দুর্বিষহ করে রাখত। তাই দেখ, আল্লাহ্ স্মৃতি আর বিস্মৃতি দুইটি পরস্পর বিরোধী গুণ মানুষের মধ্যে দান করেছেন। আর দুটোর মধ্যে রয়েছে বহু কল্যাণ আর রহস্য।
আবার দেখ মানব চরিত্রে আল্লাহ্ এমন কতগুলি বিশেষ গুণ দান করেছেন, যেগুলো অন্য প্রাণীর মধ্যে নেই। যেমন লজ্জা, যা আল্লাহ্ একমাত্র মানুষকেই দান করেছেন। যদি মানুষের মধ্যে লজ্জা ও কুণ্ঠা না থাকত তবে সে গুনাহর কাজ থেকে কখনও বিরত হত না। কর্তব্য কাজ করত না, অতিথি মেহমানের কদর করত না, ভালো কাজে আগ্রহী হত না। আর মন্দ কাজ থেকে সরে থাকত না। কেননা অনেক কাজই লোক শরমের ভয়ে করে থাকে। আমানত আদায় করে, পিতামাতার সেবা করে, লজ্জাজনক কাজ থেকে ফিরে থাকে এসব কাজ বহু সময় লোকলজ্জার খাতিরে করে থাকে। সুতরাং দেখ, লজ্জার উপকারিতা আর বেহায়াপনার অপকারিতা কত। অন্যান্য বহু স্বভাবের কথা এভাবে চিন্তা করে দেখ। বাকশক্তি চিন্তা করে দেখ, এর কারণে মানুষ সকল প্রাণীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাকশক্তির সাহায্যে সে তাহার মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম হয় আর তা অন্যকে বোঝাতে পারে। এমনি অন্যের কথাও বুঝতে পারে। যদি আল্লাহ্ মানুষকে এসব গুণ না দিতেন তবে পরস্পর ভাবের আদান-প্রদান কিভাবে সম্ভব হতো?
এমনি লেখনী শক্তির বিষয়ে চিন্তা কর, যার সাহায্যে আজ আমরা হাজার হাজার বৎসর পূর্বের ইতিহাস ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা জানতে পারি। আবার সহস্র সহস্র বৎসর পরে লোক আমাদের কথা জানতে পারবে এই লেখার সাহায্যে। সাহিত্য, ইতিহাস, গণিত প্রভৃতি শাস্ত্র সংরক্ষিত হয়ে আসছে। তুলে যাওয়া জ্ঞান আমরা পুস্তকের সাহায্যে শিখে নেই, পুনঃ ইয়াদ করি। যদি আল্লাহ্ আমাদের লেখার কৌশল শিক্ষা না দিতেন তবে আমরা পূর্ববর্তীদের জ্ঞান-বিদ্যা কিছুই হাসিল করতে পারতাম না, আর যা কিছু জ্ঞান-বিজ্ঞান সব ধ্বংস হয়ে যেত। এমনকি, মূর্খ ও বর্বর জীবনই আমাদের যাপন করতে হত। ফলে সমাজ,. রাষ্ট্র প্রভৃতি সব ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতো মহাসংকট।
অবশ্য বলা যেতে পারে যে, লেখা প্রভৃতি মানুষের সৃষ্ট শিল্প, এটা কোন প্রকৃতিগত বিষয় নয়। কেননা, পৃথিবীতে আরবী, রোমান ও অন্যান্য বিভিন্ন ভাষা রয়েছে। লেখায়ও তেমনি বিভিন্নতা দেখা যায়।
এখানে আমাদের বলার উদ্দেশ্য লেখার শক্তি। অর্থাৎ হস্ত ও অঙ্গুলির সাহায্যে বর্ণমালা লেখার শক্তি লাভ। সে শক্তি খোদারই দান।
এমনি কথা বলার বেলায় যদি মন ও চিন্তা ধারাবাহিরু না হতো তবে মানুষ কথা বলতেই পারতো না। সুতরাং দেখ, আল্লাহ্ মানুষকে কি নিয়ামত দান করেছেন।
অতঃপর লক্ষ্য কর, আল্লাহ্ মানুষকে ক্রোধ দান করেছেন। এর দ্বারা সে শত্রু, আর অনিষ্টকর দ্রব্য থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সচেতন হয়। আর হিংসাবৃত্তির দ্বারা নিজ স্বার্থ অর্জন করে। তবে এই ক্রোধ আর হিংসাবৃত্তিকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ব্যবহার করার প্রতি আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে। কেননা এর যে কোন স্বভাব যদি সীমা অতিক্রম করে তবে তা হবে নিশ্চিতভাবে শয়তানী স্বভাব। ফলে সে আল্লাহ্ থেকে হয়ে পড়বে দূরে। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে যখন সে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করতে অগ্রসর হবে তখন তাকে খুব সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। তবে হিংসাবৃত্তিকে দমন করে ঈর্ষা করতে পারে। কেননা হিংসার অর্থ হচ্ছে অন্যের ক্ষতি আর নিজের স্বার্থ কামনা করা আর ঈর্ষার বেলায় অন্যের ক্ষতির কামনা হয় না বরং তার সমকক্ষতা বা তদপেক্ষা ভাল হওয়ার প্রেরণা অনুভব করে।
আল্লাহ্ তাঁর অসীম কুদরত ও হিকমতে মানুষকে কতকগুলি উপকারী জিনিস দান করেছেন আর কতগুলি থেকে বিরত রেখেছেন। এতে রয়েছে মানুষের অশেষ উপকার আর কল্যাণ।
আল্লাহ্ মানুষের মধ্যে আশা-আকাঙক্ষা দান করেছেন, যার ফলে সংসার আবাদ রয়েছে আর বংশধারা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও গরীব লোকেরা শক্তিমান আর সম্পদশালী লোক থেকে স্বার্থ লাভ করে থাকে। শক্তিমান লোক দুনিয়াকে আবাদ করেছে, শহর নগরী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে আর এসব কাজে দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা পরোক্ষভাবে অসংখ্য স্বার্থ লাভ করছে।
মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি পূর্ব-পুরুষ কর্তৃক নির্মিত বাড়ী ঘর দালান কোঠা ও শিল্প দ্রব্যাদি না দেখত তবে তাদের ঘর-বাড়ী তৈরী হতো না বা তাদের কাছে এমন কোন কিছুই ছিল না, যা দ্বারা তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারত। সুতরাং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা তাদের কর্মেরই পটভূমি। এসব দেখে শুনে তাদের কর্মের উৎসাহ উদ্দীপনা দৃষ্টি হয়, আবার পরবর্তী লোক তাদের বংশধরদের জন্য এতসব রেখে যাবে, যার দ্বারা তারা জীবনের অসংখ্য উপকার লাভ করবে। আবহমান কাল ধরে এই ধারা অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। এসব মানুষের ভিতরে সৃষ্টিগত আশারই সুফল।
আবার কতগুলি বিষয় আল্লাহ্ মানুষের অগোচর ও অজ্ঞাত রেখেছেন যেমন তার আয়ু আর মুত্যুর খবর। যদি মানুষ তার আয়ুর খবর জানত আর তা হতো সংক্ষিপ্ত তবে তার জীবনের স্বাদ ও আশা বিস্বাদে ভরে যেত আর দুনিয়ার কোন কাজ কর্মেই তার মন উঠতো না, এমনকি বংশ রক্ষা অথবা ঘর-দোর নির্মাণের ব্যাপারে তার মোটেই কোন উদ্যোগ-উৎসাহ থাকতো না। আর যদি তার আয়ু কাল খুব দীর্ঘ হতো আর সে তা জানতো, তবে সে হয়ে পড়তো প্রবৃত্তির দাস, আর খোদার নির্ধারিত সীমা লংঘন করতো, নানা দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়তো কেননা মনে করতো তার মৃত্যু তো অনেক দূরে। ফলে সে ভুলে যেত তার মৃত্যুর কথা। সুতরাং আল্লাহ্ এই বিষয়টি মানুষের কাছ থেকে গোপন রেখেছেন, যাতে সর্বদা তার মনে মৃত্যুর আশঙ্কা লেগে থাকে, আর কুপথে অগ্রসর হলে যাতে খোদার ভয় অন্তরে জাগরিত হয়। আর মৃত্যুর পূর্বে সৎকাজ করার ধারণা সৃষ্টি হয়।
মানুষ যে সব জিনিস ভোগ উপভোগ করে সেগুলির প্রতি লক্ষ্য করে দেখ! আল্লাহ্ সে সবের ভিতরে কি কি কল্যাণ আর রহস্য নিহিত রেখেছেন, আল্লাহ্ খাদ্যদ্রব্যে কত লজ্জৎ আর স্বাদ নিহিত রেখেছেন। নানা প্রকার খাদ্য আর ভিন্ন স্বাদ রকমারি ফল-ফলাদি আর খুশবুর প্রতি লক্ষ্য কর। দেখ ফুলগুলির কি মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ আর অনেকগুলি দ্বারা তেল আতর প্রভৃতি তৈরী হয়। মানুষ সেগুলি শরীরে ও বস্ত্রে ব্যবহার করে সভা সমিতিতে যায়। তোমাদের বাহনগুলির প্রতি লক্ষ্য কর (এখানে পশুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে) দেখ। তা কত প্রকার, আর তার আরাম-উপকারিতা। হালাল পশুগুলি দেখ, উহার গোস্ত কত সুস্বাদু, আবার তার কতগুলি দ্বারা আমাদের কৃষি কাজে সাহায্য হয়। পানি সেচের কাজে সেগুলি আমাদের কত সাহায্য করে। (সে যুগে যান্ত্রিক সেব ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয় নাই।) পাখী জাতির প্রতি লক্ষ্য কর, সেগুলি কত শত রকমের। তাদের কুজন, সুরেলা গান শুনে মানুষের মন-প্রাণ মুগ্ধ হয়।
উদ্ভিদ, তৃণ-লতাগুলির প্রতি লক্ষ্য করে দেখ। এগুলির ভিতরে আল্লাহ্ রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের গুণ নিহিত রেখেছেন। রকমারি পোশাক-পরিচ্ছদ আর ঋতু ভেদে সেগুলির বিভিন্নতা লক্ষ্য কর। আল্লাহ্ মানুষকে জ্ঞানবুদ্ধি দান করেছেন। তাই তারা প্রকৃতির এসব জিনিস থেকে প্রয়োজন মেটাবার ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। মুদ্রাগুলির কথা চিন্তা কর, এগুলি দ্বারা মানুষ তার জীবনের অজস্র প্রয়োজন মিটায়। আল্লাহ্ কি হেকমত ওয়ালা আর কৌশলী, প্রকৃতির ভাণ্ডারে তিনি কত রহস্য নিহিত রেখেছেন, যা ভেবে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। লোকের চাহিদা আর প্রয়োজন অনুসার বিভিন্ন লোক প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিস থেকে উপকার লাভ করে। এই বিভিন্নতার কারণে কেউ ধনী আর কেউ দরিদ্র। ধনী আর গরীবের মধ্যে পার্থক্যও এ কারণেই হয়। আর এরই কারণে বিস্তার লাভ করে সভ্যতা।
এই প্রকৃতির ভাণ্ডারে বে-শুমার জিনিস আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। সেগুলির পুরো রহস্য উদ্ঘাটন করা আর বর্ণনা করা লোকের সাধ্যাতীত। সৃষ্টির রহস্য আর হিকমত একমাত্র সেই মহাজ্ঞানী আর কুশলী স্রষ্টাই জানেন, যার দয়া সর্বব্যাপী, যার জ্ঞান অসীম।
0 Comments