আল্লাহ অগ্নিকে কিভাবে সৃষ্টি করেছে

 


        আল্লাহ্ বলেনঃ

افَرَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ وَانْتُمُ انْشَأْتُمْ شَجَرَتَهَا ام نَحْنُ الْمُنْشِئُونَ - نَحْنُ جَعَلْنَاهَا تَذْكِرَةً وَ مَنَا عَاللْمُقْوِينَ. فَسَبِّحُ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ .

        দেখতো। আগুন, যা তোমরা জ্বালাও তার বৃক্ষ কি তোমরা পয়দা করেছ, না আমি পয়দা করেছি? আমিই তা পয়দা করেছি, স্মরণ করার জন্য আর ব্যবহারের জন্য। সুতরাং তোমরা মহান প্রতিপালকের গুণ-গান কর।

(সূরা ওয়াকেয়াঃ আয়াত ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪)

        আগুনের ন্যায় উপকারী পদার্থ সৃষ্টি করে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অশেষ অনুগ্রহ করেছেন। আর তার প্রাচুর্য হতো সৃষ্টির পক্ষে বড় বিপদের কারণ-এ কারণে আল্লাহ্ পরম কৌশলে অগ্নিকে এভাবে সংরক্ষিত করে রেখেছেন যে, প্রয়োজনের সময় তা হাসিল করা যায় তারপর আবার তা নির্বাপিত ও অদৃশ্য হয়ে যায়। অগ্নিকে কোন কোন পদার্থের ভিতর এভাবে লুকায়িত রেখেছেন যে প্রয়োজনের সময়ই তা যেন পাওয়া যায়। এভাবে আমরা তার ক্ষতি আর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারি।

        আমাদের জীবন ধারণের বেলায় অগ্নির রয়েছে অশেষ কার্যকারিতা। আগুন ছাড়া কি করে সম্ভব হতো খাদ্যদ্রব্য পাকানো? আমাদের খাদ্যাদি আগুন ছাড়া কখনো ব্যবহারযোগ্য হতে পারতো না। খাদ্যের বিভিন্ন অংশ আগুনের জ্বাল ব্যতীত একটি অপরটির সাথে মিশ্রিত হয়ে আমাদের জন্য উপকারী খাদ্য তৈয়ার হতে পারতো না। যদি আল্লাহ্ অগ্নি পয়দা না করতেন তবে আল্লাহ্র সৃষ্ট বহু জিনিস আমরা কিরূপে ব্যবহার করতে সক্ষম হতাম? অগ্নি ব্যতীত স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, লৌহ, সীসা প্রভৃতি দ্রব্য আমরা কোন কাজে লাগাতে পারতাম না, অগ্নির সাহায্যে স্বর্ণ, রৌপ্য ও অন্যান্য ধাতব পদার্থ গলিয়ে আমরা অলংকার, অস্ত্র শস্ত্র ও পাত্রাদি তৈয়ার করি। খনিজ দ্রব্য আল্লাহর এক বিশেষ দান। আর সেগুলির ব্যবহার শিক্ষা দিয়ে আল্লাহ্ আমাদের প্রতি অশেষ অনুগ্রহ করেছেন। এজন্য আল্লাহর দরবারে আমাদের সীমাহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়।

আল্লাহ্ বলেনঃ

اعْمَلُوا آلَ دَاوَ ذَشُكْرًا -

        হে দাউদের বংশধর, 'তোমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে কাজ কর।'

(সূরা সাবা)

        লৌহই ধর, লৌহ অগ্নিতে গলিয়ে আমরা কি কি কাজের জিনিস তৈরী করি, শত্রুর হাত থেকে বাঁচবার জন্য কি কি যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করে থাকি, সে সব জিনিস ও যুদ্ধাস্ত্রের বিবরণ লিখতে যাই তাতে অনেক পৃষ্ঠা প্রয়োজন হবে। আল্লাহ্ বলেনঃ

وَ انْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدُهُ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ .

        আমি লোহা সৃষ্ট করেছি যাতে রয়েছে মহাশক্তি আর লোকের বহু উপকার।

 (সূরা হাদীদঃ আয়াত ২৫-এর অংশ)

لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْ بَأْسِكُمْ فَهَلْ أَنْتُمْ شَاكِرُونَ .

        তা হচ্ছে যুদ্ধে তোমাদের আত্মরক্ষার সম্বল। সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর?

(সূরা সাবা)

        লোহা দ্বারা আমরা কৃষিকাজের যন্ত্রাদি তৈরী করি, পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর কেটে আনি। এমনকি সে যন্ত্রের সাহায্যে পাহাড় বিধ্বস্ত করে দেই আর তা সমতল করে তৈরী হয় চলার পথ। এভাবে অজস্র জিনিস যা আমরা লোহা দিয়ে তৈরী করি, তা সম্ভব হয় অগ্নির সাহায্যে। অগ্নি যদি না হতো তবে উপরোক্ত আসবাবপত্র আর যন্ত্রাদি আমরা তৈরী করতে সক্ষম হতাম না। আবার বিভিন্ন ধাতু দ্বারা তৈরী মুদ্রা বিনিময় করে আমরা ব্যবসা বাণিজ্য চালাই ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করি তা থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম। আমাদের সাজ- সজ্জার উপকরণ ও অলংকারাদি তৈরী হতো না। আর ধাতব দ্রব্যাদির ব্যবহার থেকে আমরা একেবারেই বঞ্চিত থেকে যেতাম।

        অগ্নিতে আল্লাহ্ আলো ভরে দিয়েছেন। রাত্রির অন্ধকারে যখন আমরা অকর্মণ্য ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি তখন অগ্নির সাহায্যে প্রদীপ জ্বেলে আমরা অন্ধকার দূর করি আর স্বস্তি ও সাহস অর্জন করি। মজলিস মাহফিলে নানা ধরনের প্রদীপ জ্বেলে আলোকিত করি আর গভীর অন্ধকারে আগুন জ্বেলে আমরা ভয়-ভীতি থেকে রক্ষা পাই। অগ্নি জ্বেলে হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করা হয়ে থাকে। যুদ্ধের সময় অগ্নি অস্ত্ররূপে ব্যবহার করা হয়, অগ্নি ব্যবহারের শেষ নেই। অগ্নি জ্বেলে আমরা যুদ্ধের সময় দুর্গাদি রক্ষা করে থাকি। আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রতি লক্ষ্য কর-অগ্নির মধ্যে তিনি মানুষের জন্য কত উপকার নিহিত রেখেছেন। এমন একটি অপরিহার্য পদার্থের অধিকার আমাদের হাতের মুঠোয় ছেড়ে দিয়েছেন; যখনই ইচ্ছা তা জ্বেলে কাজ করি আবার তা নিভিয়ে রেখে দেই।


Post a Comment

0 Comments