মহানবী (সঃ)-এর বেহেশত ও দোজখ ভ্রমণ

নামাজের আদেশ লাভ

        মহানবী (সঃ) ইরশাদ ফরমান- "আমার গুনাহগার উম্মতদেরকে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা। যখন তার রহম ও করমের আঁচলে আবদ্ধ করে দিলেন এবং শিরক ছাড়া সকল প্রকার গুনাহগার উম্মতদেরকে ক্ষমার শুভ সংবাদ শুনালেন। তখন আমার খুশীর সীমা ছাড়িয়ে গেল। ঐ সময় আমি আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়লাম। কারণ আমার উন্মতের প্রতি মহান আল্লাহর সর্ব প্রকার রহমত এবং বখশিশের কথা তদুপরি প্রত্যেক গুনাহগার উন্মতের নাজাত লাভের শুভ সংবাদ। ঠিক এমনি সময়ে আমার কানে কলমের কথার আওয়াজ ভেসে আসল তার সাথে মহান প্রভুর ইরশাদ হচ্ছে- "হে নবী (সঃ)। আমি দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আপনার উপর এবং আপনার উন্মতের উপর ফরজ করে দিলাম যা আদায় করার মাধ্যমে আপনার মিরাজের কথা স্মরণ হবে এবং আপনার উম্মতের জন্যও এ মর্যাদা লাভ হবে প্রত্যেক নামাজ আদায় করার সময়।

        মহানবী (সঃ) ঐ সময় যেহেতু আল্লাহর মেরাজের মহব্বতে নিমজ্জিত ছিলেন। তাই পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়া এবং তা আদায়ের জন্য কি ধরনের কষ্ট হবে তা আর মোটেই অনুভব হয়নি। তাই তিনি কোন রূপ কথা না বলে মেরাজ থেকে ফেরার পথে উন্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে ফিরে আসলেন।

মহানবী (সঃ)-এর বেহেশত ভ্রমণ

            দু'বন্ধুতে নিবিড় ও ঘনিষ্ট আলাপ আলোচনার পর আল্লাহর তার প্রিয় বন্ধুকে বেহেশত সফর করে দেখার জন্য অনুরোধ করলেন। সেখানে যেসব সৃষ্টি কীর্তি রয়েছে, তা প্রিয় দোস্তকে অবলোকন করানোই আমন্ত্রণের মূখ্য উদ্দেশ্য। মহানবী (সঃ) মালায়ে আলা থেকে নেমে সিদরাতুল মুনতাহায় এলেন। এখানে তার জন্য হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসে প্রবেশ করলেন।

        এখানে প্রবেশ করে বিশ্ব নবী (সঃ) ভারী খুশি হলেন। এর নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী বাইরে যেতে চাইবে না। এর বারটা দেয়াল খাঁটি সোনায় নির্মিত। এর চারটি দ্বারা রয়েছে। উক্ত দ্বারের একটিতে সোনার হরফে লেখা আছে-

منْ وَالَّذِي يُقْرِضُ اللَّهُ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفُهُ أَضْعَافًا كَثِيرًا .

        অর্থাৎঃ "যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে জ্বরযে হাসানা প্রদান করে। আল্লাহ তায়ালা তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন।"

        এরপর তিনি বেহেশতের দারোয়ান "রিদওয়ান" কে দর্শন করলেন। তিনি একটি ইয়াকুত পাথর নির্মিত আসনে বসে আছেন। তার ডানে বামে অসংখ্য ফেরেশতা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা রাসূল (সঃ) ও জিব্রাইল (আঃ)-কে সালাম করলেন। এসব ফেরেশতা সৌন্দর্যের আধার। এদের মতো তো এতো সুন্দর, মনোরম ফেরেশতা আর কোথাও দেখিনি ভাই। আর কারোর অপরূপ কি এদের মতো আছে?"

        প্রত্যুত্তরে হযরত জিব্রাইল আমীন (আঃ) বললেন- "বন্ধু আমার। এরূপ অতুলনীয় রূপ একমাত্র আপনার উম্মতের মধ্যে তাদেরই হবে যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং বিনম্রভাবে তারই আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। তারা মূলতঃ আল্লাহর তৈরি জান্নাতে বসবাস করবেন। তাদের চেহারা এসব রূপক ফেরেশতাদের চাইতে হাজার গুণ বেশি সুন্দর হবে।

        মহানবী (সঃ) বলেন- "এরপর আমি আমার সাথীকে নিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করলাম। দরজায় রিদওয়ান ও অন্যান্য ফেরেশতারা রয়ে গেল। বেহেশতে পদার্পণ করেই আমি অনুভব করলাম যে, এটা একক মৃত্তিকায় তৈরি নয়। এটা নির্ভেজাল মিশক আম্বরের। আমার মনে হলো আমি যেন অন্য জগতে এসেছি। সব চিন্তা ভাবনা আমার মুহূর্তে দূর হয়ে গেল। প্রতিটি বেহেশতের নিম্ন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চারটি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এসব দেখে আমি বিমুগ্ধ বিমোহিত হলাম।"

        এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- "ধর্মভীরুদের জন্যে যে বেহেশতের ওয়াদা করা হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো, সেখানে থাকবে স্বচ্ছ পানির নদীগুলো, সাদ্দ অপরিবর্তনীয় দুধের নহরগুলো, পরিষ্কার মধুর স্রোতাস্বিনীগুলো আর পানকারীদের জন্য সুস্বাদু পবিত্র শরাবের নদীগুলো।"

        অতঃপর মহানবী (সঃ)-কে বেহেশতের চার কোণের বৃক্ষরাজি দেখানো হলো। সেগুলো ছিল স্বর্ণের তৈরি আর তার ডাল পালা ছিল মোতি জহরতের। এসব মন ভুলানো দৃশ্য দেখে পেয়ারে নবী জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন- "এসব নয়নাভিরাম বৃক্ষ রাজি কি?"

        উত্তরে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন- "এসব বৃক্ষ হচ্ছে সেই সব জান্নাতী লোকদের ছায় ও আশ্রয়স্থল যারা সুদৃঢ় প্রত্যয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করেছে এবং সৎ কাজ করেছে। এসব গাছের ফল তারা আহার করবে।"

        দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে এক স্থানে পেয়ারে নবী অবলোকন করলেন গগণচুম্বী ইমারত। প্রতিটি মহলে হাজার হাজার তাবু। তাবুগুলো মণি-মুক্তোর তৈরি। তা এতো সাদা যে, বাইরে থেকে ভেতরের সব কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ভেতরে স্বর্ণের তৈরি উঁচু উঁচু আসন বিছানো। বিছানো বিছানার উপর বহু সুদর্শন হুর ও গেলমান বসে রয়েছে। এরা সব মনোমুগ্ধকর। এদের কান খাড়া রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে জান্নাতী লোকদের খেদমতের জন্যে উদগ্রীব রয়েছে। এজন্যেই তাদের সদা জাগ্রত দেখা যাচ্ছে।

মহানবী (সঃ)-এর দোজখ ভ্রমণ

        মহানবী (সঃ) বেহেশত ভ্রমণ করে ফিরে আসছিলেন। তখন হযরত জিব্রাইল (আঃ) আরজ করলেন- "হে আল্লাহর হাবীব। আপনি দোজখ দেখে যাবেন না?" একথা শুনে সম্মতি জানিয়ে মহানবী (সঃ) বললেন- "হ্যাঁ, তবে চলুন একবার দোজখ স্বচক্ষে দেখে আসি।"

        মহানবী (সঃ) ইতিবাচক অভিমত দেয়ার সাথে সাথে আল্লাহ্র আদেশে দোজখের পর্দা উন্মোচিত হলো। দেখা গেল সেখানে অত্যন্ত বিরাট লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে এবং একে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অসংখ্য সাপ-বিচ্ছু কিলবিল করছে। বিষধর সর্পগুলো ফণা তুলে রয়েছে। গাধার মতো বিরাট বিষ্ণুগুলো কামড়ে দেয়ার জন্য সদ্যা ব্যস্ত। বৃশ্চিকগুলো মারাত্মক আকারে এদিক সেদিক উঠে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন ওগুলো এখনি হুল বসিয়ে দেবে। আরও অসংখ্য আযাবের হাতিয়ার এখানে রাখা হয়েছে।

        এসব ভয়াবহ দৃশ্য দেখে দয়ার নবী ভীত হলেন। তাই আল্লাহর ইচ্ছায় দোজখের পর্দা পড়ে গেল এবং মুহূর্তে তা মহানবীর চোখের আড়াল হলো। এসব দৃশ্য দেখে মহানবী (সঃ) বলে উঠলেন-

اللهم احفظنا اللهم احفظنا .

        অর্থাৎ ঃ "হে আল্লাহ্! দোজখের এ বিভীষিকাময় শান্তি থেকে আমাদের রক্ষা করুন।" কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, তিনি নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ে।ছলেন-

اللهمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ جَهَنَّمُ .

        অর্থাৎঃ "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের শাস্তি থেকে পানাহ চাচ্ছি। আমাকে জাহান্নামের শান্তি থেকে রক্ষা করুন।"


Post a Comment

0 Comments