আরশ বহনকারী ফেরেশতা দর্শন

 ফেরেশতাদের পঞ্চম মনজিল

        মহানবী (সঃ) আল্লাহর ফেরেশতা হযরত ইসরাফীল (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করার পর একটি বিশ্বয়কর জ্যোতি দেখতে পেলেন। তা ছিল ঝিলিক মারা চেহারা বিশিষ্ট। তিনি এরপর একটি নূর সাগরে উপনীত হলেন। এর চারদিকে দলবদ্ধভাবে ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পড়ছে। তাদের একজন নেতা ছিলেন। তিনি মহানবী (সঃ)-এর সোনার ফলকটি নূরের পর্দার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, তিনি একটি রহমতের লোহিত সাগরে নীত হয়েছেন। সেখানে অসংখ্য আল্লাহর ফেরেশতা তারই গুণ-গান গাচ্ছে আর থরথর করে কাঁপছে।

        অতঃপর আরও অনেক নূরের পর্দা অতিক্রম করে তিনি আরশের কাছে গেলেন। সেখানে তিনি দেখতে পেলেন যে, অসংখ্য ফেরেশতা আরশ বহন করছে। তাদের চেহারা বিকট, তারা যেন এক এক হাতের তালুতে সারা জাহান তুলতে পারে। তারা "লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” তাসবীহ পড়ে চলেছে এবং মুমিন বান্দাদের দোয়া করছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- "আরশ বহনকারী ফেরেশতারা মুমিন বান্দাদের ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে- "হে প্রভু। তোমার অনুগ্রহে ও জ্ঞান দ্বারা সর্ববস্তু তুমি পরিবেষ্টন করেছ।

        হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর নবী বলেছেন- আমি বিরাট স্থান অতিক্রম করে নানারূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে আরশে আলীমে উপনীত হলাম। সেখানে কোনও জন প্রাণীর আলাপ পেলাম না। এটা ছিল নীরব, নিস্তব্ধ। এতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তখন আল্লাহর দূত জিব্রাইল (আঃ)-এর আওয়াজ শুনতে পেলাম। তিনি আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন- "হে আল্লাহর প্রিয়তম নবয়। আপনি আরশে আলীমে পৌঁছেছেন। অতএব ভয়ের কোন কারণ নেই।"

কাবা কাওসাইন ভ্রমণ

        মহানবী (সঃ) বর্ণনা করেন যে, যখন আমি নূরের আবরণসমূহ অতিক্রম করতে ছিলাম আর আমার বাহন এক পর্দা হতে অন্য পর্দা অতিক্রম করছিল। এমনি ভাবে সত্তর হাজার নূরের পর্দা একে একে অতিক্রম করলাম। প্রত্যেক পর্দার দূরত্ব হলো পাঁচশত বছরের রাস্তার দূরত্বের সমান। এ সময় সবুজ রং এর একটি "রফরফ" নামক সিংহাসন আনায়ন করা হলো, যার উপর আমাকে বসানো হলো। ঐ সিংহাসনের উজ্জ্বল্যতা এবং নূর যার সামনে সূর্যের কোন অস্তিত্ব নেই। সেই রফরফ অসংখ্য মনজিল অতিক্রম করে "মাকামে কাবা কাওসাইন" এ আমাকে নিয়ে হাজির হলো।

আরশ বহনকারী ফেরেশতা দর্শন

        মহান আল্লাহর আরশে আলীমে যে সকল ফেরেশতাগণ বহন করে আছেন। আর যে সকল ফেরেশতা তার চতুষ্পাশে আছেন। সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেন-

الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشِ وَمِنْ حَوْلَهُ .

        এ আয়াতের তাফসীরে মহানবী (সঃ) চোখের দেখা হিসাবে ইরশাদ ফরমান- যে সকল ফেরেশতা আরশে আলীমকে বহন করে আছেন তাদের সংখ্যা কতো তা মহান আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। যাদের প্রত্যেক ফেরেশতা সাত আকাশ সাত জমিন হতেও বড়। তারা এত বড় যে যদি আকাশ জমিন তাদের হাতের তালুতে রাখা হয় তাহলে তা সরিষার দানা বরাবর মনে হবে। ঐ সকল ফেরেশতা সর্বদা

لا إِلَهَ إِلَّا الله .

এর তাসবীহ পাঠ করতে থাকেন।

    আর তারা আরশে আলীম ছাড়া অন্য কোন দিকে তাদের দৃষ্টি দেন না।

        মহানবী (সঃ) আরো ইরশাদ করেন- "আমি দেখলাম আরশ বহনকারী ও আশে পাশের সকল ফেরেশতারা অত্যন্ত উত্তেজনা সহকারে মহান আল্লাহ পাকের হামদ ও সানা পাঠে রত ছিলেন এবং তার সাথে আমার উম্মতের জন্য এভাবে দোয়াও করতে ছিলেন-

الدين يَحْمِلُونَ العربي ومن حوله يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِم و ومؤمنون به. وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْدَ كُلَّ نَنِي رَحْمَةً وَعِلْمًا ، فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابَرًا وَاتَّسَعُوا بِلِكَ وَفِيهِمْ عَذَابُ الرَّحِيمِ ، رَبَّنَا وَادْخِلَهُمْ جَنَّةٍ عَدْنِ النِي وَعَدَلَهُمْ . ومن صَلَحَ مِنْ أَمَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ ، وَريهِمْ إِنَّهُ أنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمِ.

Post a Comment

0 Comments