আল্লাহ সমুদ্রকে কিভাবে সৃষ্টি করেছে

        

 আল্লাহ্ বলেনঃ

وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا - 

        আল্লাহ্ সমুদ্রকে তোমাদের অনুগত করেছেন তা থেকে তোমরা সদ্য মৎস্য- মাংস খাও।

 (সূরা নাহলঃ আয়াত ১৪ এর অংশ)

        'আল্লাহ্ সমুদ্র সৃষ্টি করেছেন আর তাকে বহু কল্যাণের উৎস হিসাবে বিশাল ও বিরাট করেছেন। আর তাকে স্থলভাগের চতুর্দিকে এমনভাবে পরিবেষ্টিত করে দিয়েছেন, যাতে স্থলভাগ আর পাহাড় পর্বত তার মুকাবিলায় একটি ক্ষুদ্র দ্বীপের ন্যায় মনে হয়। চারদিকে পানি আর পানি। আর সে অনুসারে সমুদ্রের জীব- জানোয়ার অর্থাৎ স্থলভাগের জীবজন্তু থেকে সমুদ্রের জীবজন্তু কয়েক গুণ বেশী। সমুদ্রে আল্লাহ্ এমন সব বিস্ময়কর বস্তু সৃষ্টি করেছেন, যা আল্লাহর অসীম কুদরতেরই স্মরণ করিয়ে দেয়। সমুদ্রে জীব-জন্তু, মণি-মুক্তা আর সুগন্ধি দ্রব্য যত অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়, স্থলভাগে তত পাওয়া যায় না। আবার সমুদ্রে এমন সব বিরাটকায় জন্তু রয়েছে, যদি তার দেহের অংশ বিশেষ পানির উপরে ভাসে তবে তা পাহাড়ের টিলা বলে সন্দেহ হয়। স্থলভাগে যেমন পাখী, ঘোড়া, গরু প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণীর জীব-জন্তু রয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশী পাওয়া যায় সমুদ্রে। বরং সমুদ্রে যত বিভিন্ন শ্রেণীর প্রাণী দেখা যায় স্থলভাগে তা দেখা যায় না। তারপর আল্লাহ্ তার অসীম ক্ষমতা ও কুদরতে সেগুলির জীবন ধারণের উপায় উপকরণ সৃষ্টি করেছেন, যদি সেগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হয় তবে কয়েক খণ্ড বিরাট গ্রন্থের প্রয়োজন হবে।

        আল্লাহ্ কি কৌশলে মোতিকে ঝিনুকের গর্ভে সৃষ্টি করেছেন। আর মারজানকে সমুদ্রের তলায় পাথুরে চটানের নাচে কিভাবে সংরক্ষিত করেছেন।

আল্লাহ্ বলেনঃ

يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانَ -

সমুদ্র থেকে মোতি আর মারজান বের হয়।    (সূরা রহমানঃ আয়াত ২১)

        কুরআনে উল্লেখিত 'মারজান' সম্পর্কে কোন কোন জ্ঞানী লোক বলেছেন যে, সেটাও এক ধরনের মোতি, তবে অনেকটা সরু আর ছোট। আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের পরে আল্লাহ্ বলেনঃ

فَبِأَيِّ الْآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ . 

        অতঃপর তোমরা আল্লাহর কোন কোন দানকে অস্বীকার করবে?

(সূরা রহমানঃ আয়াত ২৩)

'আলা-ই' অর্থ আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ। এমনি আম্বর প্রভৃতি বহু মূল্যবান সামগ্রী আল্লাহ্ সমুদ্রে পয়দা করেছেন। পানির উপরে বিরাট নৌকা ও জাহাজ ভেসে চলার প্রতি লক্ষ্য কর। এর দ্বারা মানুষ তাদের কত প্রয়োজন মেটায়।

আল্লাহ্ এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলেনঃ

ندر ت والْفُلْكِ التي تجرى في البحر بما ينفع الناس -

     জাহাজগুলি সমুদ্রে চলাচল করে যাতে লোকের লাভ হচ্ছে।

(সূরা বাক্বারাঃ আয়াত ১৪৬ এর অংশ)

        আল্লাহ্ সমুদ্রের উপর মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছেন। মানুষ তার বুকের উপর দিয়ে মাল বোঝাই বড় বড় জাহাজ নিয়ে দেশ-দেশান্তরে যাতায়াত করে থাকে, যদি মানুষ যানবাহনের এ সুযোগ লাভ না করত তবে জীবনযাত্রা সুকঠিন হতো, এক দেশ থেকে অন্য দেশে এত মাল ও পণ্যদ্রব্য আনা নেওয়া সম্ভব হতো না। এতে মানব জীবনে দুঃসহ অবস্থা সৃষ্টি হতো।

        আল্লাহ্ কুদরতের প্রতি লক্ষ্য কর, তিনি পানি কিরূপ তরল এবং বহমান করে সৃষ্টি করেছেন। ইহা এরূপ অভিন্ন এবং সংমিশ্রণশীল, যেন সারা দুনিয়ার পানি একটি দেহ। ইহা যেমন সহজে পরস্পরে মিশ্রিত হয় তেমনি সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়। এক পানি অন্য পানির সাথে মিলিত হয়ে অভিন্ন হয়ে যায়। আবার তা বিচ্ছিন্ন করাও সহজ। পানির বহমানতা আর তরলতার কারণে এর উপর যানবাহন চলা সম্ভব হয়েছে।

        আল্লাহ্ এসব নেয়ামত আর দানসমূহের প্রতি যারা লক্ষ্য না করে, তাদের জ্ঞানের প্রতি আক্ষেপ। অথচ সৃষ্ট সব কিছুর মধ্যেই আল্লাহর মহাশক্তি আর কৌশলের সুস্পষ্ট নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে।

وَفِي كُلِّ شَيْءٍ لَهُ آيَةً - تَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ وَاحِدٌ .

    প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর নিদর্শন যা তাঁর একত্বের সাক্ষ্য দান করছে।

        আল্লাহর এ সব সৃষ্টি যেন ডেকে ডেকে বলছে, হে মানুষ, তোমাদের চোখ থেকে অজ্ঞতার আবরণ দূর করে অন্তরচক্ষু দিয়ে দেখ, আমি কত কিছু উপকারী জিনিস সৃষ্টি করেছি, আর এক আমি ব্যতীত আর কি কেউ সৃষ্টিকর্তা আছে। অথচ তোমরা আমার সাথে শরীক করছ। এইসব হচ্ছে সেই এক লা-শরীক আল্লাহরই সৃষ্টি, যিনি মানবজাতির উপকারের জন্য এসব সৃষ্টি করেছেন।

Post a Comment

0 Comments