অধ্যয়ন, সাধনা ও অনুধাবনের উপযুক্ত পরিবেশ হলো নির্জনতা। একাজগুলো নির্জন পরিবেশ ব্যতীত সুষ্ঠুরূপে সম্পাদন হতে পারে না। জনকোলাহলপূর্ণ পরিবেশে একাগ্রতা সৃষ্টি হয় না। এ জন্য উল্লেখিত কাজগুলো সম্পাদন করার উপযুক্ত পরিবেশ হলো রাতের নির্জনতা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ জন্য রাতকে অত্যন্ত বেশী গুরুত্ব দান করেছেন। রাতে নামাজ আদায় ও কোরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন-
إِنْ نَاشِئَةَ الَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطَأَ وَأَقْوَمُ قِيلاً
প্রকৃতপক্ষে রাতে শয্যা ত্যাগ করে ওঠা আত্মসংযমের জন্য অত্যন্ত বেশী কার্যকর এবং কোরআন যথাযথভাবে পাঠ করার জন্য যথার্থ। (সূরা মুয্যাম্মিল-৬)
যে কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সম্পাদন করা হবে, সে কাজ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হবে। কাজের ভেতরে যদি প্রদর্শনেচ্ছা বিদ্যমান থাকে, তাহলে সে কাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে কবুল করার প্রশ্নই ওঠে না। কিয়ামতের ময়দানে এমন অনেক শহীদকে দেখা যাবে, সে জিহাদের ময়দানে জীবন দান ঠিকই করেছে, কিন্তু তার শাহাদাত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ছিল না। তার মনে এ উদ্দেশ্য সক্রিয় ছিল যে, মানুষ তার বীরত্ব দেখবে, তার মৃত্যুর পরে তাকে জাতিয় হিরো হিসাবে সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হবে, এ উদ্দেশ্যেই সে জিহাদের ময়দানে জীবন দান করেছিল। আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি তো আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জীবন দান করোনি, তুমি জীবন দিয়েছিলে তোমার সুনাম বৃদ্ধি করার আশায়। তোমার মৃত্যুর পরে পৃথিবীতে মানুষ তোমার সুনাম করেছে। সুতরাং, তুমি তোমার প্রাপ্য লাভ করেছো। আজ তোমার প্রাপ্য হলো জাহান্নাম।
এভাবে অনেক নামাজীকে, রোজা পালনকারীকে, হজ্জ আদায়কারীকে, দানকারীকে বলা হবে, লোকে তোমাকে নামাজী বলবে, পরহেজগার বলবে, হাজী সাহেব বলবে, এসব লক্ষ্যে তুমি নামাজ-রোজা-হজ্জ আদায় করেছো। দানবীর উপাধি লাভের আশায় দান করেছো। তোমার কোন কাজ আমাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ছিল না। সুতরাং আজ আমার কাছ থেকে তোমাদের প্রাপ্য কিছুই নেই।
মহান আল্লাহ রাতকে এ জন্য বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন যে, রাতের নির্জনতায় আরামের শয্যা ত্যাগ করে মানুষ যখন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে সেজদা দেয়, সে সেজদার মধ্যে প্রদর্শনেচ্ছা থাকে না। নির্জন নিস্তব্ধ নিঝুম পরিবেশে আল্লাহর কিতাব বান্দাহ যখন পাঠ করে আল্লাহকেই শোনায়, তখন সে পাঠের ভেতর দিয়ে এক অনাবিল জান্নাতী আবেশের সৃষ্টি হয়।
তাছাড়া কোরআন অধ্যয়নের জন্য রাতই উপযুক্ত সময়। এ সময়ে কানে কোন কোলাহল আসে না, পৃথিবীতে জীবন ধারণ করার কোন উপকরণের চিন্তায় মনভারাক্রান্ত থাকে না। মন-মস্তিষ্ক থাকে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত-উন্মুক্ত। আল্লাহর কোরআন এ সময়ে অধ্যয়ন করে অনুধাবন করার তখনই উপযুক্ত সময়। রাতের ইবাদাতের মর্যাদাও আল্লাহর কাছে অনেক বেশী। রাতে নামাজের জন্য শয্যা ত্যাগ করে ওঠা এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ কাজ। গোটা দিনের কর্মক্লান্ত দেহ-মন এ সময় বিশ্রাম কামনা করে। এ সময়ে দেহ-মনকে বিশ্রাম লাভের সুযোগ না দিয়ে নামাজ আদায়-কোরআন তেলাওয়াত অবশ্যই সাধনার বিষয়। এ সাধনা মানুষের কুপ্রবৃত্তি দমন করা ও নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি প্রবল কার্যকর পন্থা সন্দেহ নেই। এভাবে যে ব্যক্তি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং নিজের দেহ-মনের ওপর প্রবল প্রতিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে, নিজের যাবতীয় শক্তিমত্তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ব্যবহার করতে সমর্থ হয়, সে ব্যক্তি সর্বাধিক দৃঢ়তার সাথে ইসলামী আন্দোলনে অগ্রসর হতে এবং পৃথিবীর বুকে এ আন্দোলনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ভূমিকা রাখতে পারে।
রাতের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত মানুষের কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য সৃষ্টির একটি কার্যকর পদ্ধতি। কারণ গভীর রাতে বান্দাহ ও আল্লাহর মধ্যে প্রতিবন্ধক ও অন্তরাল সৃষ্টিকারী কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। এ সময়ে বান্দাহ আল্লাহর কাছে যা বলে, তা তার হৃদয়ের অতল তলদেশ থেকে উত্থিত কথাগুলোই বলে থাকে। এসবে কোন ধরনের প্রদর্শনেচ্ছার স্পর্শ থাকে না। রাতের ইবাদাত হলো মানুষের বাইরের চরিত্র আর ভেতরের প্রকৃত চরিত্রে সাম স্যতা সৃষ্টির উৎকৃষ্ট মাধ্যম। ব্যক্তি দিনের আলোয় মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজে, কোরআন তেলাওয়াতে সময় ব্যয় করতে পারে। কিন্তু গভীর রাতে যখন সবাই গভীর সুসুপ্তিতে নিমগ্ন থাকে, তখন ব্যক্তি সবার অগোচরে কোরআন তেলাওয়াত করে, নামাজ আদায় করে, এগুলো সে করে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যেই।
দিনের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত রাতের নামাজ-কোরআন তেলাওয়াতের তুলনায় অনেক সহজ। ঘুমে দু'চোখ যখন বন্ধ হয়ে আসতে চায়, দেহ ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে চায়, এসব কিছুকে উপেক্ষা করে মানুষ যখন নামাজে-তেলাওয়াতে নিমগ্ন হয় এবং এটা যদি অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন মানুষের ভেতরে অবিচলতা ও স্থিতিশীলতার গুণাবলী সৃষ্টি হয়। ইসলামী আন্দোলনের ময়দানে সে অধিক দৃঢ়তা সহকারে এগিয়ে যেতে থাকে। বাতিল সৃষ্ট যাবতীয় কঠিন পরিস্থিতি, সে অবিচলতা ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়।
কোরআন তেলাওয়াতের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উপকারিতা
মানুষ যে কোন কর্মই সম্পাদন করুক না কেন, সে কর্মের একটি ফল অবশ্যই সে লাভ করে থাকে। যে কাজে কোল ফল লাভ করা যাবে না, জ্ঞান-বিবেকসম্পন্ন কোন মানুষের পক্ষে সে কাজে আত্মনিয়োগ করা সম্ভব হয় না। মানুষ তার শ্রমের বিনিময় লাভ করবে, মনে আশা নিয়েই সে শ্রমদান করে থাকে। অনুরূপ আল্লাহর কোরআন তেলাওয়াতকারী ও নামাজ আদায়কারী যদি তেলাওয়াত ও নামাজের মাধ্যমে কোন ফল লাভ না করে, তাহলে এটা বুঝতে হবে, তার কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ আদায় যেমনভাবে হওয়া উচিত, তেমনভাবে হচ্ছে না। ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠীর লোমহর্ষক নির্যাতনের মুখে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষের শক্তি অবিচলতা ও দৃঢ়তা মাত্র দুটো জিনিসের মাধ্যমে অর্জন করতে সক্ষম হয়। তার একটি যথাযথভাবে নামাজ আদায় এবং অপরটি কোরআন অধ্যয়ন।
কারণ নামাজ ও কোরআন আন্দোলনের কর্মীদেরকে এমন সুগঠিত চরিত্র ও উন্নত অনুপম বেতার অধিকারী করে গড়ে তোলে এমন শক্তি তার ভেতরে সঞ্চারিত করে, যে শক্তির সাহায্যে সে বাতিলের প্রবল কঠোরতা ও নির্যাতনের মোকাবেলায় শুধু টিকেই থাকে না, বাতিলের গতিকে স্তব্ধ করে দিতেও সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষ এ শক্তি তখনই অর্জন করতে পারে, যখন সে কোরআনের শব্দগুলো পাঠ করেই ইতি-কর্তব্য পালন করে না, বরং কোরআন প্রদর্শিত শিক্ষাসমূহ যথাযথভাবে অনুধাবন করে তা বাস্তবায়িত করার জন্য চেষ্টা সাধনায় নিয়োজিত হয়। কোরআনের শিক্ষা তার দেহের শিরা উপশিরায় প্রবাহিত করে। নামাজের বিষয়টিও ঠিক তেমনি। একটার পর আরেকটা সেজদা আর শারীরিক কসরতের মধ্যে নামাজকে সীমাবদ্ধ না রেখে যারা নামাজের শিক্ষাকে নিজ জীবনে বাস্তবায়িত করে, তখনই নামাজ তার ভেতরে শক্তি সৃষ্টি করে। এই শক্তির বলেই সে আল্লাহর পছন্দের বিপরীত পথ থেকে নিজেকে হেফাজত করতে সক্ষম হয়।
কোরআন তেলাওয়াতকারীর তেলাওয়াত কণ্ঠনালী অতিক্রম করে তার মনের গহীনে যদি পৌছতে না পারে, তার হৃদয়তন্ত্রীতে যে তেলাওয়াত আঘাত করতে সক্ষম হয় না তাকে জিহাদের ময়দানে বাতিল শক্তির মোকাবিলায় ঐ তেলাওয়াত শক্তি সরবরাহ করা তো দূরের কথা, তার ঈমান ঠিক রাখার শক্তিই সরবরাহ করতে সক্ষম হয় না। এ ধরনের কোরআন তেলাওয়াতকারীগণ মানুষের কাছে পরহেজগার হিসাবে সুনাম অর্জন করলেও সে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি মোটেও অর্জন করতে সক্ষম হয় না। এই শ্রেণীর কোরআন তেলাওয়াতকারী সম্পর্কেই বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
يقرأون القرآن ولا يجاوز حناجرهم - يمرقون من الدين مروق السهم من الرمية
তারা কোরআন তেলাওয়াত করবে কিন্তু কোরআন তাদের কন্ঠনালীর নীচে অবতরণ করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমনভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়। (বোখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা)
প্রকৃতপক্ষে যে তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের পরে ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা, বাস্তব জীবনে চরিত্র ও কর্মনীতিতে কোরআনের কোন প্রভাব দেখা যায় না; কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না, কোরআনের বিপরীত কোন কর্মকান্ড ত্যাগ করে না, আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় না, কোরআন যা হালাল করেছে, তা হালাল বলে গ্রহণ করে না, কোরআন যা হারাম করেছে, তা থেকে বিরত থাকে না, কোরআনের বিপরীত রাজনীতি ত্যাগ করে না, কোরআন যাদেরকে বন্ধু বলে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে, তাদেরকে পরিত্যাগ করে না, একজন মুসলমানের কোরআন তেলাওয়াত-অধ্যয়ন এমন হতে পারে না। হযরত সুহাইব রূমী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেন-
ما امن بالقرآن من استحل محارمه
কোরআন কর্তৃক হারাম জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে, সে কোরআনের প্রতি ঈমান আনেনি।
যারা কোরআন তেলাওয়াত-অধ্যয়ন ও কোরআনের তাফসীর শোনার পরেও নিজেদের চরিত্র সংশোধন করতে সক্ষম হয়নি, আত্মিক উন্নতি হয়নি, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোন চেষ্টা-সাধনা করেনি, তাদের তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন কোরআনের প্রতি বিদ্রুপ করার শামিল। এ ধরনের লোকগুলো আল্লাহর মোকাবেলায় যেমন নিজেদেরকে বিদ্রোহী করে তোলে তেমনি নিজেদের বিবেকের কাছেও চরম নির্লজ্জ হিসাবে নিজেকে প্রকাশিত করে। এ লোকগুলোর চরিত্র বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। কারণ যে ব্যক্তি এ কিতাবকে আল্লাহর বাণী বলে স্বীকৃতি দেয় এবং তা পাঠ করে কোরআনের শিক্ষা সম্পর্কে অবগত হয়, তারপরও সে আল্লাহর পছন্দের বিপরীত কর্মকান্ডে জড়িত হয়, সে তো সরাসরি আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করে বসে। এরা আল্লাহর কোরআনে সূরায়ে ইমরাণে পাঠ করেছে-
أَفَغَيْرَدِيْنِ اللهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ طوعًا وَ كَرْهًا وَ إِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
মানুষ কি আল্লাহর বিধান ত্যাগ করে অন্য বিধান অনুসন্ধান করে? অথচ আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে তা সবই স্বেচ্ছায় হোক এবং অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে (ইসলাম গ্রহণ করেছে)। আর তাঁরই দিকে সবাইকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
কোরআন তেলাওয়াত করছে, অধ্যয়ন করছে-জানতে পারছে এটা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তারপরও এ লোকগুলো কোরআনের বিপরীত মতবাদ মতাদর্শের অনুসরণ করছে, সেসব মতবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতা করছে; এরা তো আল্লাহর মোকাবিলায় বিদ্রোহীর ভূমিকা পালন করে। না জানার কারণে এমন করছে না বরং জেনে বুঝেই এরা এই ভূমিকা পালন করছে। এদের সম্পর্কে সূরা আ'রাফে বলা হয়েছে-
إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِايْتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ
নিশ্চিত জেনো, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে অস্বীকার করেছে এবং তার মোকাবেলায় বিদ্রোহের নীতি অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য আকাশের দরোজা কখনো খোলা হবে না। তাদের জান্নাতে প্রবেশ ততটাই অসম্ভব, যতটা অসম্ভব সূচের ছিদ্রপথে উটের গমন। কিয়ামতের ময়দানে আদালতে আখিরাতে স্বয়ং কোরআন এদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়টিকে আল্লাহর রাসূল তাঁর বক্তব্যে এভাবে উপস্থাপন করেছেন-
القرآن حجة لك او عليك
কোরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। (মুসলিম)
আল্লাহর এ কিতাবকে যদি যথাযথভাবে তেলাওয়াত করা হয়; অধ্যয়ন করে তা অনুসরণ করা হয় তাহলে এ কোরআন তার জন্য সাক্ষী ও প্রমাণ হয়ে দেখা দেবে। পৃথিবী থেকে আখিরাত পর্যন্ত চলার পথে যেখানে তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, সেখানেই কোরআন তার জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। কোরআনের তেলাওয়াতকারী ও অধ্যয়নকারী বলতে সক্ষম হবে, পৃথিবীতে আমি যে কাজই করেছি তা এই কিতাবের নির্দেশেই করেছি। যদি মানুষের কাজ প্রকৃতপক্ষেই কোরআনের আদর্শ অনুযায়ী হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীতেও কোন ইসলামী বিচারক তাকে গ্রেফতার করতে পারবে না এবং আখিরাতের ময়দানেও তাকে গ্রেফতার করা হবে না।
আর যে ব্যক্তি এই কোরআন থেকে জেনেছে, তাকে কোরআনের বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে চলতে হবে, কোরআনের রাজনীতি করতে হবে; কোরআন পরিবেশিত অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে, কোরআনের শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, কোরআনের বিচার নীতি অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করতে হবে। এসব জেনেও যে ব্যক্তি কোরআন বিরোধী কর্মনীতি অবলম্বন করবে, তখন এ কোরআন সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহর বিচারালয়ে এ কোরআন তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাকে আরো শক্তিশালী করবে। পরিশেষে তাকে অবশ্যই জাহান্নামে যেতে হবে।
0 Comments