রব্ব-এর ব্যবস্থাপনায় কোন অংশীদার নেই

        সেই প্রাচীনকাল থেকেই একশ্রেণীর মানুষ ধারণা করে নিয়েছে যে, আল্লাহ একা তাঁর সৃষ্টিকার্য ও সৃষ্টি জগতের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেননা। এসব কাজ সম্পাদন করার ব্যাপারে তাঁর সাহায্যকারী রয়েছে। তাঁর সন্তান রয়েছে এবং তারা তাকে সাহায্য করে অথবা তিনি ফেরেস্তা, জ্বিন, দেবদেবী এবং মানুষের মধ্যে যারা ওলী তাদেরকে আল্লাহ নিজের সার্বভৌম কর্তৃত্বের বিভিন্ন বিভাগ এবং নিজের রাজত্বের বিভিন্ন এলাকা তাদের ব্যবস্থাপনায় দিয়ে দিয়েছেন। অমুক ওলীর হাতে আল্লাহ ধন-ভান্ডারের চাবিকাঠি উঠিয়ে দিয়ে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। অমুক দেবতার পূজা-অর্চনা করলে ধন-ঐশ্বর্য লাভ করা যাবে। অমুকের মাজারে মানত করলে রোগ থেকে মুক্তি ও মনের আশা পূরণ হবে। অর্থাৎ আল্লাহ স্বয়ং তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের বোঝা বহনে অক্ষম হয়ে এদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দিয়েছেন। মূর্খ ও অজ্ঞলোকদের এসব ধারণার প্রতিবাদ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذُ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكَ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيُّ مِّنَ الذُّلَّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا -

        বলো সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি কোন পুত্রও গ্রহণ করেননি। তাঁর বাদশাহীতে কেউ শরীকও হয়নি এবং তিনি এমন অক্ষমও নন যে কেউ তাঁর সাহায্যকারী ও নির্ভর হবে। আর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো-চূড়ান্ত শ্রেষ্ঠত্ব। (সূরা বনী ইসরাঈল-১১১)

        সৃষ্টির কোন কিছুতেই কারো কেন অংশীদার নেই, রাব্বুল আলামীন এসব ব্যাপারে কারো সাহায্য গ্রহণ করেন না এবং কারো পরামর্শ গ্রহণ করারও কোন প্রয়োজন তাঁর নেই। সমস্ত কিছুর তত্বাবধানকারী একমাত্র তিনিই। কোরআন বলছে-

مَالَهُمْ مِّنْ دُونِهِ مِنْ وَ لِي وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَداً -

         পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত সৃষ্টির তত্ত্বাবধানকারী তিনি ব্যতীত আর কেউ নেই এবং নিজের শাসন কর্তৃত্বে তিনি কাউকে শরীক করেন না। (সূরা আল কাহফ-২৬)

        মহান আল্লাহই এ বিশ্ব-জাহানের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক এবং তাঁর শাসন ক্ষমতায় কারো কোন সামান্যতমও অংশ নেই। তিনি ব্যতীত অন্য কোন রব্ব বা মাবুদ নেই। মানুষ যাকে মাবুদ বা রব্ব-এ পরিণত করে, সে এ কথা মনে করেই করে যে তার কাছে কোন শক্তি আছে যে কারণে সে আমাদের কল্যাণ ও অকল্যাণ করতে সক্ষম এবং আমাদের ভাগ্যের ওপর লাভ-ক্ষতির প্রভাব বিস্তার করতে পারে। শক্তিহীন ও প্রভাবহীন সত্তাদেরকে আশ্রয়স্থল করতে কোন একান্ত নির্বোধ ব্যক্তিও সম্মত হতে পারে না।

        এ জন্য আল্লাহ বলেন, সমস্ত শক্তির অধিকারী আমি আল্লাহ-আমিই রব্ব। লাভ-ক্ষতি যা হয়ে থাকে তা আমারই নির্দেশে হয়ে থাকে। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, যারা আমাকেই একমাত্র রব্ব হিসাবে গ্রহণ করেছে, তারা বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করার জন্য অন্য কোন কিছুর সামনে মাথানত করে না। একমাত্র আমার সামনেই মাথানত করে। তাদের হাত যখন নজরানা পেশ করে তখন তা আমার জন্যই পেশ করে। কোনকিছু কোরবানী দিতে হলে আমার উদ্দেশ্যেই দিয়ে থাকে। তাদের কণ্ঠ থেকে কোন প্রশংসা বের হলে তা আমার উদ্দেশ্যেই বের হয়। তাদের প্রার্থনার প্রয়োজন হলে আমার কাছেই প্রার্থনা করে। কারণ একমাত্র আমাকেই তাঁরা রব্ব হিসাবে গ্রহণ করেছে। সুতরাং, আমার রাজত্বে কাউকে শরীক করো না।

        মহান রব্ব হলেন শক্তির পূর্ণতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ, তিনি বিশ্বজাহানের প্রতিটি জিনিস সৃষ্টিকারী ও তার ক্ষমতা নির্ধারণকারী। তিনি বড়ই উন্নত ও শ্রেষ্ঠ; সমগ্র রাজত্ব তাঁরই কর্তৃত্বাধীন। তাঁর ক্ষমতায় অংশীদার হবার যোগ্যতা ও মর্যাদা কারো নেই এবং থাকতে পারে না। কারণ তাঁর সত্তা সব ধরনের শিরকের গন্ধমুক্ত। তাঁর সমজাতীয় কোন শক্তির অস্তিত্ব কোথাও নেই। তাঁর সত্তার সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন দৃষ্টান্ত ও সমকক্ষ বা তুলনীয় কেউ নেই। তাঁর কোন ধ্বংস নেই-পরিবর্তন নেই। তাঁর স্থলাভিষিক্তের জন্য কোন পুত্রেরও প্রয়োজন নেই এবং তাঁর ক্ষমতার ভাগ দেয়ারও কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ বলেন-

الذي لَهُ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكَ فِي الْمُلْكُ -

        যিনি পৃথিবী ও আকাশের রাজত্বের মালিক, যিনি কাউকে পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেননি, যাঁর সাথে রাজত্বে কেউ শরীক নেই। (সূরা আল ফুরকান-২)

        অতএব আল্লাহর রবুবিয়াতের সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। একমাত্র তাঁকেই রব্ব হিসাবে গ্রহণ করে যাবতীয় ব্যাপারে তাঁর ওপরেই ভরসা করতে হবে। মানুষ অন্য মানুষের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে ভরসা করে প্রতারিত হয়। কিন্তু আল্লাহর ওপরে ভরসা করে ঠকার কোন সম্ভাবনাই নেই। তাঁর ওপরেই বান্দাকে ভরসা করতে হবে। আল্লাহ বলেন-

وَكَفَى بِرَبِّكَ وَكِيلاً -

        এবং ভরসা করার জন্য তোমার রব্বই যথেষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল-৬৫) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্পর্কে অজ্ঞ ও মূর্খ মানুষ যে অংশীদারিত্বের ধারণা পোষণ করে, আল্লাহ তা'য়ালা সেসব থেকে মুক্ত। যে কোন ধরনের দুর্বলতা ও শির্কের পঙ্কিলতা থেকে রাব্বুল আলামীনের সত্তা পাক ও পবিত্র। পবিত্র কোরআনের সূরা সা-ফফাতে বলা হয়েছে-

 سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ وَسَلَّمٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

        তারা যেসব কথা তৈরী করছে তা থেকে পাক-পবিত্র তোমার রব্ব, তিনি মর্যাদার অধিকারী। আর সালাম প্রেরিতদের প্রতি এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনেরই জন্য।

Post a Comment

0 Comments