মানুষের একমাত্র রব্ব কে ?

        সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। তিনি কে? সে পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, তিনি সৃষ্টি জগতসমূহের রব্ব। মানুষের রব্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা কুরাইশে ঘোষণা করছে-

الَّذِي أَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوعٍ وَآمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٌ 

        যিনি ক্ষুধার সময় আহার দান করেন এবং ভয়-ভীতির সময় নিরাপত্তা দান করেন।

        স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা নিজেকে মানুষের রব্ব হিসাবে এভাবে তাঁর পরিচয় পেশ করেছেন-

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ

         প্রকৃতপক্ষে তোমাদের রব্ব সেই আল্লাহ-যিনি আকাশ ও যমীনকে ছয়টি কালে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আ'রাফ-৫৪)

        অতএব প্রশংসা করতে হবে তাঁর, যিনি মানুষের জন্য এ পৃথিবী সৃষ্টি করে তা বসবাসের উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই রাতের পর দিন নিয়ে আসেন, দিনের পর রাত নিয়ে আসেন। সূরা আ'রাফের ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

يُغْشِي اليْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتِ بِأَمْرِهِ

        তিনি রাতকে দিনের ওপর বিস্তার করে দেন। তারপর দিন রাতের পেছনে আবর্তিত হতে থাকে। তিনি সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহ সৃষ্টি করেছেন। এসব কিছু তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনিই রব্ব, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনিই এসব কিছু করেছেন। সুতরাং, এই মানুষের ওপরে অন্য কারো ক্ষমতা নেই যে, তারা আইন-বিধান দান করে। এমন কারো ক্ষমতা নেই যে, সে নিজেকে সার্বভৌম ক্ষমতার দাবী করতে পারে। আল্লাহ বলেন-

الا لَهُ الخَلْقُ وَالْأَمْرُ - تَبْرَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

        সাবধান, সৃষ্টি তাঁরই এবং সার্বভৌমত্বও তাঁরই। অপরিসীম বরকতময় আল্লাহ, সমগ্র সৃষ্টি জগতসমূহের মালিক ও প্রতিপালক। (সূরা আ'রাফ-৫৪)

        আল্লাহ বলেন, আমাকে ত্যাগ করে তোমরা অন্য যাদেরকে নিজেদের বিধানদাতা, আইনদাতা, সাহায্যকারী, প্রার্থনাকবুলকারী বলে মনে করেছো অর্থাৎ রব্ব বানিয়ে নিয়েছো, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। আমি আল্লাহ যদি তোমাদের ওপরে রাতকে প্রলম্বিত করে দেই, তখন তোমরা যাদেরকে রব্ব বলে গ্রহণ করেছো, সেই শয়তানের অনুসারী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্বার্থবাদী, দুনিয়া পুজারী পীর ও মাওলানা, যে মাজারে গিয়ে ধর্ণা দাও সে, এরা কি সক্ষম হবে রাতকে যথা নিয়মে পরিচালিত করতে? রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীর মাধ্যমে এ ধরনের লোকদেরকে প্রশ্ন করছেন-

قُلْ أَرَءَ يْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الَّيْلَ سَرْمَداً إِلَى يَوْمِ الْقِيمَةِ مَنْ الهُ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيْكُمْ بِضَيَاءِ

        হে নবী! তাদেরকে বলো, তোমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছো, আল্লাহ যদি কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের ওপরে রাতকে অব্যাহত রাখেন, তাহলে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন্ মাবুদ আছে তোমাদের আলো এনে দেবে?     (সূরা আল কাসাস-৭১)

        মহান আল্লাহ যদি কখনো এই অবস্থার সৃষ্টি সত্যই করেন, তাহলে এ পৃথিবীতে কারো কি এমন ক্ষমতা রয়েছে, ক্ষণিকের জন্য হলেও দিন এনে দেবে? অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর পছন্দ অপছন্দের প্রতি কোন সম্মান প্রদর্শন করে না। আল্লাহকে আইন ও বিধানদাতা বলে স্বীকৃতি দেয় না। তারা পৃথিবীর ঐ শ্রেণীর মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালায়, যারা শয়তানের গোলাম। এদের অনুসারীদেরকে বলা হচ্ছে-

قُلْ أَرَءَ يْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَداً إِلَى يَوْمِ الْقِيِّمَةِ مَنْ الهُ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيْكُمْ بِلَيْلِ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِ

        তাদেরকে প্রশ্ন করো, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, আল্লাহ যদি কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের ওপরে দিনকে অব্যাহত রাখেন তাহলে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন্ মাবুদ আছে তোমাদেরকে রাত এনে দেবে, যেন তোমরা তার মধ্যে বিশ্রাম করতে পারো? তোমরা কি ভেবে দেখো না? এটা তাঁরই অসীম অনুগ্রহ যে, তিনি তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন রাত ও দিন, যেন তোমরা রাতে শান্তি এবং দিনে নিজের রব্ব-এর অনুগ্রহ (রিক) সন্ধান করতে পারো। (সূরা আল কাসাস-৭২-৭৩)

        আল্লাহ বলেন, পানি ব্যতীত তোমাদের জীবন মুহূর্ত কাল চলতে পারে না। এ পানির ব্যবস্থা কি তারা করে যাদেরকে অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে তোমরা তাদেরকে নিজেদের রব্ব বানিয়ে নিয়েছো? তোমরা কি বোঝ না এদের কোন ক্ষমতা নেই? পৃথিবীর সমস্ত পানি যদি আমি শোষণ করে নেয়ার ব্যবস্থা করি, তোমরা অন্ধের মতো যাদের পেছনে ছুটছো, তারা কি তোমাদেরকে পানির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে? পবিত্র কোরআন বলছে-

قُلْ أَرَهَ يْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيْكُمْ بِمَاءٍ مُعِينٍ 

        এই লোকদেরকে বলো, তোমরা কি কখনো এ কথা ভেবে দেখেছো যে, তোমাদের কূপের পানি যদি যমীনে তলিয়ে যায়, তাহলে এই পানির প্রবাহমান ধারাসমূহ তোমাদেরকে কে বের করে এনে দেবে? 
(সূরা মুলক-৩০)

        আল্লাহ হলেন এমন রব্ব যে, তাঁর কাছে কোন আবেদন-নিবেদন চিৎকার করে উচ্চকণ্ঠে বলার প্রয়োজন হয় না। উচ্চকণ্ঠে বললেও তিনি যেমন শোনেন এবং নীরবে চুপিসারে অস্ফুট কন্ঠে বললেও তিনি শোনেন। শুধু তাই নয়, মনে মনে বললেও তিনি শোনেন। আল্লাহ বলেন-

لهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمَا تَحْتَ القرى - وَإِنْ تَجْهَرْ بِالْقَوْلِ فَإِنَّهُ يَعْلَمُ السِّرِّ وَاخْفَى اللَّهُ لا اله الا هُوَ

        যা কিছু পৃথিবীতে ও আকাশে রয়েছে, যা কিছু পৃথিবী ও আকাশের মাঝখানে রয়েছে এবং যা কিছু মাটির অতল তলদেশে রয়েছে সমস্ত কিছুর মালিক তিনিই। তুমি যদি নিজের কথা উচ্চকণ্ঠে বলো, তবে তিনি তো চুপিসারে বলা কথা বরং তার থেকেও গোপনে বলা কথাও জানেন। তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। (সূরা ত্বা-হা-৬-৭-৮) 

        আল্লাহ হলেন এমন রব্ব যে তিনি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর কোন কিছু কামনা করার পূর্বে এবং কোন প্রয়োজন অনুভূত হবার পূর্বেই তার ব্যবস্থা করে থাকেন। পৃথিবীর প্রতিটি এলাকার আবহাওয়া এক নয়। বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বিভিন্ন ধরনের। মহান আল্লাহ এগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশে যেসব প্রাণী রয়েছে, তা এখানের আবহাওয়া ও পরিবেশের অনুকূলে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদেশের কোন প্রাণীকে যদি এমন দেশে নিয়ে যাওয়া হয়, যে দেশে বছরের প্রতিটি ঋতুতে বরফ ঝরতে থাকে। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নীচে অবস্থান করে। তাহলে সে প্রাণী প্রচন্ড ঠান্ডায় মৃত্যুবরণ করবে। কিন্তু সেদেশেও আল্লাহ ঐ একই ধরনের প্রাণী সৃষ্টি করেছেন এবং তারা স্বচ্ছন্দে বরফের মধ্যে বসবাস করছে; বংশ বৃদ্ধি করছে। ঐ সব প্রাণী এদেশে নিয়ে এলে তারা গরমে মৃত্যুবরণ করবে। বরফাচ্ছাদিত এলাকার কুকুর আর গ্রীষ্ম প্রধান এলাকার কুকুর-এ উভয়ের দেহের তাপমাত্রা সমান নয়। শীত প্রধান দেশের যে কোন প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা গ্রীষ্ম প্রধান দেশের অনুরূপ প্রাণীর দেহের তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী। এদের দেহে পশমও অনেক বেশী। এসব প্রাণীকে ঠান্ডা থেকে হেফাজতের ব্যবস্থা কোন মানুষ করেনি, স্বয়ং আল্লাহ এদের দেহে বিশালাকৃতির ঘন পালক আর পশম দিয়ে ওদের জন্য স্থায়ী কম্বলের ব্যবস্থা করেছেন। যিনি এটা করেছেন তিনিই হলেন রব্ব।

        আল্লাহ এমন রব্ব যে, এ বিশ্বে তিনি অসংখ্য ও অগণিত প্রাণী ও বস্তু সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এসব সৃষ্টির ভেতরে কোন একটি সৃষ্টিও অসুন্দর, সৌষ্ঠবহীন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রব্ব-এর সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসের নিজস্ব একটি পৃথক সৌন্দর্য রয়েছে। প্রতিটি জিনিস তার নিজের স্থানে সুসামঞ্জস্য ও উপযুক্ত-উপযোগী। যে কাজের জন্য যে জিনিস তিনি প্রস্তুত করেছেন সর্বাধিক উপযোগী আকৃতিতে-সর্বাধিক কার্যকর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সহকারে প্রস্তুত করেছেন। দেখার জন্য চোখ ও শোনার জন্য কানের যে আকৃতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রস্তুত করেছেন, এর থেকে উত্তম ও উপযোগী কোন আকৃতির কল্পনাও মানুষ করতে সক্ষম নয়। বাতাস ও পানি যেসব উদ্দেশ্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার জন্য বাতাস ও পানি ঠিক তেমনি গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যেমন তার হওয়া উচিত। রাব্বুল আলামীন বলেন-

الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَا خَلْقَ الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلُلَةٍ مِّنْ مَّاءٍ مِّهِينٍ ثُمَّ سَوْا لَهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِنْ رُّوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ

        যে জিনিস তিনি সৃষ্টি করেছেন উত্তমরূপেই সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি থেকে, তারপর তার বংশ উৎপাদন করেছেন এমন সূত্র থেকে যা তুচ্ছ পানির মতো। তারপর তাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করেছেন এবং তার মধ্যে নিজের রুহ্ ফুঁকে দিয়েছেন, আর তোমাদের কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছেন। (সূরা আস্ সাজদাহ্-৭-৯)

        রব্ব হওয়ার যাবতীয় ক্ষমতা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ এবং সর্বাত্মকভাবে একমাত্র আল্লাহরই আয়ত্তাধীন। অতএব মানুষ কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত বা বন্দেগী করবে। তিনি ব্যতীত অন্য কারো বন্দেগী বা দাসত্ব করবে না। মহান আল্লাহ লালন-পালনকারী, মানুষ শুধুমাত্র তাঁরই শোকর করবে, তাঁরই কাছে দোয়া-প্রার্থনা করবে এবং ভক্তি ও ভালোবাসায় শুধু তাঁরই সামনে আনুগত্যের মাথানত করবে। আল্লাহ হলেন মালিক ও মুনিব। মানুষ একমাত্র তাঁরই দাস ও গোলাম হয়ে জীবন পরিচালিত করবে। তাঁর মোকাবেলায় এক মুহূর্তের জন্যেও স্বাধীন আচরণ অবলম্বন করবে না। তিনি ব্যতীত আর কারো চিন্তা, বিশ্বাস ও কর্মের দিক দিয়ে দাসত্ব স্বীকার করবে না। এরই নাম হলো ইবাদাত-প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী শুধু নামাজ-রোজা করাই ইবাদাত নয়। জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহকে রব্ব হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় সম্পাদন করার নাম হলো ইবাদাত। আল্লাহ হলেন সার্বভৌম-নিরঙ্কুশ শাসক। একচ্ছত্র সার্বভৌমত্বের অধিকারী তিনি। মানুষ একমাত্র তাঁরই অনুগত হয়ে জীবন-যাপন করবে। তাঁরই দেয়া আইন-কানুন অনুসরণ করবে। মানুষ স্বয়ং নিজেকে সার্বভৌম বলে দাবি করবে না। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সার্বভৌমত্ব স্বীকারও করবে না।

        মহান আল্লাহ এ পৃথিবীর যাবতীয় কর্ম স্বীয় আদেশে সম্পাদন করছেন। এ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ব্যাপারে অন্য কারো হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা, কেউ প্রভাব বিস্তার করে বা সুপারিশ করে আল্লাহর কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন সাধন করাবে, কারো ভাগ্যের অবনতি বা উন্নতি ঘটাবে এমন সাধ্য কারো নেই। কেউ খুব বেশী যা করতে পারে তাহলো আল্লাহর কাছে কারো জন্য দোয়া করতে পারে। সে দোয়া কবুল করা বা প্রত্যাখ্যান করা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অনুগ্রহের ওপরে নির্ভরশীল। মহান আল্লাহর এই বিশাল সাম্রাজ্যে কেউ এমন শক্তিশালী নয় যে, তার কোন আবেদন আল্লাহর কাছে পেশ করে অবশ্যই বাস্তবে পরিণত করাবে। আল্লাহ তা'য়ালা সূরা ইউনুছের ৩ নং আয়াতে বলেন-

مَا مِنْ شَفِيعِ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ - ذَالِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ

        সুপারিশ ও শাফায়াতকারী কেউ নেই, তবে যদি আল্লাহর অনুমতির পর শাফায়াত করে (তাহলে তা ভিন্ন কথা)। এই আল্লাহই তোমাদের রব্ব, অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো।

        তিনিই মানুষের রব্ব, যিনি ইচ্ছা করলে যে কোন মুহূর্তে মানুষের দর্শন করার ক্ষমতা, শ্রবণ করার ক্ষমতা হরণ করতে সক্ষম। তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে শুষ্ক অনুর্বর যমীন থেকে ফসল উৎপন্ন করে মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। এসব দেখেও যারা জ্বিন-মূর্তি, গণৎকার, জ্বিন প্রভাবিত লোক, ধর্মীয় নেতা ও দলীয় নেতাদেরকে রব্ব-এর গুণাবলী সম্পন্ন বলে মনে তাদের কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে-

قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الحي وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ - فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ فَقُلْ أَفَلا تَتَّقُونَ - فَذَا لِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمُ الْحَقِّ

        তাদের কাছে প্রশ্ন করো, আকাশ ও যমীন থেকে তোমাদেরকে কে রিস্ক দান করে? এই শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কার নিয়ন্ত্রাধীন? নিষ্প্রাণ ও নির্জীব থেকে কে সজীব ও জীবন্তকে বের করে? এই বিশ্বলোকের ব্যবস্থাপনা কে পরিচালনা করছে? তারা উত্তরে অবশ্যই বলবে, 'আল্লাহ'। তাহলে (আল্লাহ বিরোধী আচরণ থেকে) তোমরা কেন বিরত থাকো না? সেই আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত রব্ব। (সূরা ইউনুছ-৩১-৩২)

        মানুষের রব্ব হলেন আল্লাহ, তাঁর সিদ্ধান্ত ব্যতীত কারো কোন ক্ষতি বা কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। লাভ-ক্ষতি, জীবন-মৃত্যুর বাগডোর একমাত্র তাঁরই হাতে। হযরত হুদ আলাইহিস্ সালামকে যখন ইসলাম বিরোধী শক্তি একের পর এক হুমকি দিচ্ছিলো, তখন তিনি তাদেরেেক স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলেন, তোমরা যা খুশী তাই করতে পারো। আমাকে কোন ধরনের কোন সুযোগ না দিয়ে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে থাকো। আমি সেই আল্লাহরই ওপর নির্ভর করছি, যিনি শুধু আমারই রব্ব নন-তোমাদেরও রব্ব। এ ঘটনা পবিত্র কোরআন এভাবে পেশ করছে-

مِنْ دُونِهِ فَكَيْدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُونَ إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلا هُوَاخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

        তোমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে যা করতে চাও তা করতে পারো, আমাকে কোন সুযোগ দিও না। আমি নির্ভর করি আল্লাহর ওপর, যিনি আমারও রব্ব আর তোমাদেরও রব্ব। কোন জীব এমন নেই, যার মাথা তাঁর মুষ্ঠিতে নিবদ্ধ নয়। নিঃসন্দেহে আমার রব্ব সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা হুদ- ৫৫-৫৬)

        যিনি বিপদের মুহূর্তে মানুষের সহায় হন এবং মানুষকে আশ্রয় দেন, বিপদমুক্ত করেন-তিনিই হলেন রব্ব। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীগণ যখন মক্কায় চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছিলেন, এমন প্রচন্ড হুমকি দেয়া হচ্ছিলো যে, ইসলামী আন্দোলন ত্যাগ না করলে কাউকে জীবিত রাখা হবে না। ঠিক এ অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর নবী ও নবীর সাহাবাদেরকে আদেশ দিলেন, ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিন-

قُلْ هُوَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ

        তাদেরকে বলো, তিনিই আমার রব্ব, তিনি ছাড়া আমার আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই ওপর আমি নির্ভর করেছি এবং তিনিই আমার সহায় ও আশ্রয়। (সূরা আর-রা'দ-৩০)

        অতএব নামাজের মধ্যে সূরা ফাতিহা বার বার পাঠ করলেই ইবাদাতের হক আদায় হবে না, সূরা ফাতিহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। তাহলে সূরা ফাতিহা পাঠ করলে সফলতা অর্জন করা যাবে। একদিকে সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত পাঠ করে বলা হলো, 'তুমিই আমার আল্লাহ, তুমিই আমার রব্ব, আমরা একমাত্র তোমারই প্রশংসা করি' আবার নামাজ শেষ করেই এমন দলের সাথে নিজেকে যুক্ত করা হলো, এমন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করে সে দলকে ভোট দেয়া হলো, যারা 'আল্লাহ' নামটি উচ্চারণ করার মতো শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে 'স্রষ্টা' শব্দ উচ্চারণ করে। 'বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' উচ্চারণ না করে 'করুণাময় স্রষ্টার নামে শুরু করছি' উচ্চারণ করে। কোন বিপদ এলে বা মনের কোন আশা পূরণের জন্য ছুটে গেল মাজারে ও পীরের দরবারে। নানা ধরনের মানত মানা হলো, টাকা দেয়া হলো বিপদমুক্ত হওয়ার জন্য। এসব কাজ করার অর্থই হলো প্রকারান্তরে আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের উদ্দেশ্যে এসব করা হলো, তাদেরকেই রব্ব হিসাবে গ্রহণ করা। মুখে আল্লাহকে রব্ব বলে স্বীকৃতি দিয়ে কাজে কর্মে অন্য কাউকে রব্ব হিসাবে মেনে চলার পরিষ্কার অর্থ হলো মুনাফেকী। অতএব, মুসলমানদেরকে মুনাফেকী ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহকেই রব্ব হিসাবে অনুরসণ করতে হবে। তাহলে আল্লাহ রব্বুল আলামীন সেই বান্দার প্রশংসা গ্রহণ করবেন নতুবা নয়।

Post a Comment

0 Comments