এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে যেসব মহামানবদেরকে নবী-রাসূল হিসাবে নির্বাচিত করেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে অবগত করার মুহূর্তকাল পূর্বেও তাঁদের কল্পনাতেও আসেনি, তাঁরা নবী-রাসূল হিসাবে মনোনীত হতে যাচ্ছেন। সুতরাং, তাঁদের নিজস্ব কোন শক্তি বা ক্ষমতা থাকার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। তাঁরা ইচ্ছা করলেই মানুষকে কোন ধরনের নিদর্শন দেখাতে পারেন না। আল্লাহ বলেন-
وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ
আর আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত নিজেই কোন নিদর্শন এনে প্রদর্শন করবে, কোন রাসূলেরই এ শক্তি ছিল না। (সূরা আর-রা'দ-৩৮)
পবিত্র কোরআন যখন অবতীর্ণ হলো তখন এর বিধি-বিধানের মধ্যে কায়েমী স্বার্থবাদীর দল নিজেদের মৃত্যু দেখতে পেলো। তখন তারা বিশ্বনবীর কাছে দাবীনামা পেশ করলো যে, এই কোরআনের পরিবর্তে অন্য কোন কোরআন নিয়ে এসো অথবা এসব বিধান পরিবর্তন করো। বিষয়টি মহান আল্লাহ এভাবে বলেছেন-
قَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَ نَا انْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ هَذَا أَوبَدَلَهُ - قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَبَدِلَهُ مِنْ تِلْقَائِ نَفْسِي - إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَى
এরা বলে, এর পরিবর্তে অপর কোন কোরআন নিয়ে এসো অথবা এর মধ্যেই কোন পরিবর্তন সূচিত করো। (হে রাসূল!) তাদেরকে বলো, আমার এ কাজ নয় যে, আমার নিজের পক্ষ থেকে এতে কোন ধরনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে নেবো। আমি তো শুধু সেই ওহীরই অনুসারী, যা আমার কাছে প্রেরণ করা হয়। (সূরা ইউনুস-১৫)
পৃথিবীর কোন শক্তির সাধ্য নেই যে, এই কোরআনে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে সক্ষম হয়। এ ক্ষমতা তাঁকেও দেয়া হয়নি, যাঁর ওপরে তা অবতীর্ণ হয়েছে। আর আল্লাহ তা'য়ালা যা অবতীর্ণ করেন, তা পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারেই অবতীর্ণ করেছেন। এসব বিধান পৃথিবীর কোন সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয় না যে, জনরোষের ভয়ে তা পুনরায় পরিবর্তন করা যেতে পারে। আল্লাহর ওহী অপরিবর্তনীয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে আইন-কানুন বা জীবন বিধান হিসাবে কোন ওহী আর কিয়ামত পর্যন্ত অবতীর্ণ হবে না। সুতরাং, এতে কোন পরিবর্তনও সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন-
وَمَا كَانَ هَذَا الْقُرْآنُ أَنْ يُفْتَرَى مِنْ دُونِ اللَّهِ
আর এই কোরআন এমন কোন জিনিস নয় যে, আল্লাহর ওহী ও শিক্ষা ব্যতীত রচনা করে নেয়া যেতে পারে। (সূরা ইউনুস-৩৭)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তাঁর রাসূল নিজ থেকে বানিয়ে কোন কথা বলেন না; তিনি যা ওহী করেন-রাসূলের মুখ থেকে আল্লাহর বাণী হিসাবে তাই উচ্চারিত হয়। শুধু তাই নয়, এ কথা ধমকের সুরে বলেছেন, আমার রাসূল যদি কোন কথা নিজ থেকে বানিয়ে বলতেন, তাহলে আমি তার কণ্ঠনালী টেনে ছিঁড়ে দিতাম। সুতরাং, কোরআনে যে বিধি-বিধান অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে কোন ধরনের পরিবর্তন রাসূল কর্তৃক সূচিত হবার কোন অবকাশ ছিল না। আর মহান আল্লাহ এমন অক্ষম নন যে, কোন বিধান রচনার জন্য কোন মানুষের সহযোগিতা তাঁর প্রয়োজন হয়। আল্লাহ তা'য়ালা স্বয়ং সম্পূর্ণ, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন-পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী।
কোরআনের বিকৃত ঘটানো অসম্ভর
মানব জাতিকে সঠিক পথপ্রদর্শনের লক্ষ্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী-রাসূল প্রেরণ করে তাদের ওপরে কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, যেন তাঁরা আল্লাহর অভিপ্রায় অনুসারে মানব গোষ্ঠীকে পরিচালিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আগমন করেন। এই ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তি ঘটে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। তাঁর ওপরে পবিত্র কোরআন মানব জাতির জীবন ব্যবস্থা হিসাবে অবতীর্ণ করা হয়। কোরআনের পূর্বে যেসব কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছিল, তা যথাযথ বৈজ্ঞানিক পন্থায় সংরক্ষণ করার কোন ব্যবস্থা না থাকায় মূল কিতাব বিকৃত হয়ে পড়েছিল। পক্ষান্তরে কোরআন অবতীর্ণ হবার সাথে সাথে আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সমকালীন লোকজন থেকে শুরু করে, বর্তমানকাল পর্যন্ত এই কোরআন মুখস্থ করে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
0 Comments