তিনিই পৃথিবীর পরিবেশ মানুষের অনুকূল করেছেন

 

        পৃথিবীর গোটা পরিবেশের দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে মহান আল্লাহর প্রতি সেজদায় মাথানত হয়ে আসে। লক্ষ্য করে দেখুন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গোটা সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করেছেন কিন্তু গোটা সৃষ্টিজগতকে মানুষ বা কোন জীবের জন্য বসবাসের উপযোগী করেননি। সৃষ্টি জগতের সকল স্থানেই জীবের বসবাসের জন্য তিনি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেননি। এর পেছনেও মহান আল্লাহ মানুষের জন্য অবশ্যই কল্যাণ রেখেছেন। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সৃষ্টি জগতের কোন গ্রহে প্রাণের উৎপত্তি ও তার বিকাশ এবং বসবাসের জন্য বিশেষ ধরনের অনুকূল পরিবেশ একান্তই অপরিহার্য। যে গ্রহ প্রাণের স্পন্দনে স্পন্দিত হবে সে গ্রহটিতে কতকগুলো মৌলিক পদার্থ যথা কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যাদি থাকবে। এসব পদার্থের পরমাণুগুলো বিশেষ নিয়মে মিলে মিশে নানা ধরনের অণু গঠন করে। এসব অণু প্রাণী দেহের কোষ (Tissue), হাড় (Bone), ইত্যাদি গঠনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।

        যে গ্রহে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে, তাতে পরিমিত পরিমাণে পানি থাকতে হবে। কারণ পানি জীবের প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দেয়ার উপরই জীবদেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বস্তু নিগর্ত হতে সহায়তা করবে। জীবের বসবাসের উপযোগী গ্রহে বায়ু মন্ডল থাকবে। গোটা গ্রহটিকে বায়ুমন্ডল আবৃত করে রাখবে। যেখানে থাকবে পরিমিত পরিমাণে অক্সিজেন এবং জীবন ধারনের উপযোগী অন্যান্য প্রয়োজনীয় গ্যাসীয় স্তর। কারণ অক্সিজেন জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য। বায়ুমন্ডল প্রাণী জগতের জন্য প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণের যথা বৃষ্টির ব্যবস্থা করবে।

        জীব বসবাসের উপযোগী গ্রহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে হবে। তাপমাত্রা প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে বা কম হলে সে গ্রহটি প্রাণী জগতের বসবাসের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না। জীব বসবাসের গ্রহটির বায়ুমন্ডল স্বাভাবিকভাবে উপযুক্ত হতে হবে। যেন সেই বায়ু স্তর ভেদ করে সূর্যের কোন ক্ষতিকর রশ্মি (Harmful ray) বা ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে কোন ক্ষতিকর রশ্মি আগমন করতে সক্ষম না হয়।

        বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবী ব্যতিত সৌরমন্ডলের যতগুলো গ্রহ-উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেসব গ্রহে প্রাণের উৎপত্তি ও বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বিদ্যমান নেই। কোন কোন গ্রহে গ্যাসীয় আবরণ বা বায়ুমন্ডলের অস্তিত্ব নেই। আবার যেগুলোতে রয়েছে তা কোন প্রাণীর জন্য উপযুক্ত নয়। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ সম্পর্কে গবেষকগণ গবেষণা করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানীগণ বিশ্বাস করেন যে, আমাদের সৌরমন্ডল ছাড়াও অন্য সৌরমন্ডলেও প্রয়োজনীয় পরিবেশে জীব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্পর্কে তাঁরা নিয়মিত গবেষণা করে যাচ্ছেন।

        মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের জন্য এই পৃথিবীকে উপযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। এই পৃথিবী হলো প্রাণের উৎপত্তি ও বিকাশের জন্য একটি অনুপম গ্রহ। প্রাণের উৎপত্তির জন্য আল্লাহ তা'য়ালা প্রয়োজনীয় মৌলিক পদার্থ, উপযুক্ত বায়ুমন্ডল এবং বায়ুমন্ডলে প্রয়োজনীয় গ্যাস ও অক্সিজেন, ভূ-পৃষ্ঠে অফুরন্ত পানি এবং সে পানির উষ্ণতা জীবের জন্য স্বাভাবিক করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা এই পৃথিবীর শূণ্যমার্গে বায়ুমন্ডলের ওপর দিয়ে এমন একটি স্তর সৃষ্টি করেছেন, যাকে ওজোন (Ozone) বলা হয়। এই স্তর সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা ক্ষতিকর রশ্মি (Harmful ray) থেকে প্রাণী জগতকে রক্ষা করে।

        পৃথিবী সূর্য থেকে যথাযথ দুরত্বের কক্ষপথে অবস্থান করাব কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা প্রাণীকুলের জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত হয়েছে। পৃথিবীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সঠিক পরিমাণের পদার্থ অর্থাৎ ভর (Mass) সৃষ্টি করেছেন। ফলে সঠিক মাধ্যাকর্ষণ বলবিশিষ্ট হয়েছে এবং এ কারণে বায়ুমন্ডল যথাযথভাবে আকর্ষিত করে ভূপৃষ্ঠের সাথে চেপে রেখেছে যেন প্রাণীকুলের জন্য বায়ুমন্ডল ক্রিয়া করতে পারে। যদি ভর নির্দিষ্ট পরিমাণের কম থাকতো তাহলে বায়ুমন্ডলের প্রয়োজনীয় গ্যাস ও পানির বাষ্প ক্রমশঃ মহাকাশে হারিয়ে যেত এবং পৃথিবীতে কোন বায়ুমন্ডল থাকতো না। ফলে পৃথিবীতে অক্সিজেন থাকতো না, পানির কোন অস্তিত্ব থাকতো না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

قُلْ أَرَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْراً فَمَنْ يَأْتِيْكُمْ بِمَاءٍ مُعِينٍ

        বলো দেখি সবে, শুকাইয়া যদি যায় এই যমীনের পানি

        তাহলে হেথায় তটনীর ধারা কে দিবে সবারে আনি। (সূরা মুলক-৩০)

        যারা নভোমন্ডল ভ্রমণ করেছেন, তারা পৃথিবীর ছাবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। ছবিতে দেখা গিয়েছে সবুজ রং বেশী এসেছে। পৃথিবীর পানিপূর্ণ এলাকাগুলোই ছবিতে সবুজ আকারে উদ্ভাসিত হয়েছে। পানির বেশী প্রয়োজন, এ জন্য আল্লাহ তা'য়ালা পৃথিবীতে পানি বেশী দিয়েছেন। আল্লাহ ছুবহানাহু তা'য়ালা এই পৃথিবীকে সমস্ত জীবের জন্য বসবাসের উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন-

امَنْ جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارٌو جَعَلَ خِللَهَا أَنْهَرا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِرًا -

        তিনি যমিনকে স্থিতি ও বসবাসের উপযোগী স্থান হিসেবে নির্মাণ করেছেন। এ পৃথিবীর ওপরে নদ-নদী প্রবহমান করেছেন এবং যমীনের ওপরে পাহাড়-পর্বতকে স্তম্ভ হিসেবে গেড়ে দিয়েছেন এবং প্রবহমান নদী-সাগরের দুটো ধারার মধ্যখানে আড়াল সৃষ্টি করে দিয়েছেন। (নমল-৬১)

        আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধুমাত্র এই পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগিই করেননি, এই পৃথিবী থেকে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী যেন তাদের চাহিদানুযায়ী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَ سَلَكَ لَكُمْ فِيْهَا سُبُلًا وَ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ أَزْوَجًا مَنْ نَبَاتِ شَتَّى كُلُوا وَارْعَوا أَنْعَامَكُمْ

        যিনি তোমাদের জন্য এই পৃথিবীকে বিছানা স্বরূপ করেছেন এবং এতে তোমাদের জন্য চলার পথ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। তোমরা আহার করো এবং তোমাদের জন্তু-জানোয়ারকেও বিচরণ করাও। (সূরা ত্ব-হা-৫৩)

Post a Comment

0 Comments