আল্লাহ্-আল ইলাহ্ ( সূরা ফাতিহার তফসীর পর্ব ৩)

 


        মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক মানুষই আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। ফেরাউন, নমরুদ এবং এদের মতো আরো যারা ছিল, তারা কেউ আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী ছিল না। তারা কখনো এ কথা বলেনি যে, 'এই গোটা বিশ্ব আমি সৃষ্টি করেছি'। বরং তারা বলেছে, আল্লাহর কোরআনের ভাষায়-

أَشَدُّ مِنْ قُوَّةً أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى

        আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই। আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ রব্ব।

        অর্থাৎ তারা দাবী করেছে, 'এই বিশাল ভূখন্ডের শাসক হিসাবে দেশের জনগণের ওপরে আইন ও বিধান চলবে আমার। এখানে অন্য কারো আইন-কানুন চলবে না। জনগণ অন্য কারো আইন অনুসরণ করতে পারে না। আইন চলবে একমাত্র আমার এবং আমাকেই ইলাহ হিসাবে পূর্ণা-অর্চনা করতে হবে। মাথানত করতে হবে একমাত্র আমার কাছে।' এভাবে দেশের জনগোষ্ঠী আল্লাহকেও বিশ্বাস করেছে, সেই সাথে তারা আল্লাহর অংশীদার বানিয়েছে। পবিত্র কোরআনে দেখা যায় আরবের যারা মূর্তিপূজক ছিল তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করতো। মুখে তারা আল্লাহর নাম বেশ শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করতো। কিন্তু তাদের বিশ্বাস ছিল, আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হলো এসব মূর্তি।

        পক্ষান্তরে ইসলাম মানুষকে শিখালো, আল্লাহ এমন এক অদ্বিতীয় সত্তার নাম, যিনি গোটা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান যা কিছু আছে, সমস্ত কিছুই তাঁরই সৃষ্টি। সমস্ত সৃষ্টির সব ধরনের প্রয়োজন যিনি পূরণ করেন তিনিই হলেন মহান আল্লাহ। আল্লাহ শব্দের বিকল্প কোন শব্দ নেই। তিনিই মানব জাতির সব ধরনের বিধান দাতা। প্রাচীন সিমেটিক ভাষাগোষ্ঠীর প্রত্যেকটি শাখাতেই সামান্য রূপান্তর ভেদে 'আল্লাহ' কথাটি এক, অদ্বিতীয়, অনাদী, অনন্ত উপাস্য সত্তার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভাষাবিদগণ অনুমান করেন যে, মানব সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই তওহীদবাদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্ব প্রতিপালকের একক সত্তা বোঝানোর জন্য 'আল্লাহ' শব্দটির প্রচলন রয়েছে। যেমন প্রাচীন কালদানীয় ও সুরইয়ানী ভাষায় আল্লাহ শব্দটি 'আলাহিয়া,' প্রাচীন হিব্রুভাষায় 'উলুহ' এবং আরবী ভাষায় 'ইলাহ' রূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিবর্তিত আরবী ভাষায় 'ইলাহ' শব্দের সাথে আরবী আল অব্যয় যুক্ত হয়ে 'আল-ইলাহ' বা আল্লাহ শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে।.

        বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বেও আরবদের মধ্যে 'আল্লাহ' শব্দটিই মহান পরওয়ারদেগারের একক শব্দরূপে ব্যবহৃত হতো। আল্লাহ শব্দটির কোন লিঙ্গান্তর হয় না। এর কোন দ্বিবচন বা বহুবচনও হয় না। এ প্রাচীন শব্দটিই পরম উপাস্যের সত্তা বোঝানোর জন্য পবিত্র কোরআনে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামী শরীআতে আল্লাহ নামের কোন বিকল্প নেই। মহান আল্লাহকে তাঁর যে কোন গুণবাচক নামেও ডাকা যায়। তবে আল্লাহ ও আল্লাহর গুণবাচক নামের বিকল্প যেমন গড, ঈশ্বর, পরমেশ্বর, ভগবান ইত্যাদি কোন নামে ডাকা স্পষ্ট হারাম। কারণ এসব শব্দের মধ্য দিয়ে তওহীদ বিশ্বাসের অনুরূপভাব প্রকাশ পায় না। কারণ ঐ সমস্ত শব্দের লিঙ্গান্তর করা যায় এবং স্ব স্ব ভাষার ব্যকরণ শুদ্ধভাবে করা যায়। ইংরেজী গড শব্দের ইংরেজী বানান God. এখানে ইংরেজী বর্ণমালার তিনটি অক্ষর রয়েছে। এই শব্দটি যদি উল্টিয়ে উচ্চারণ করা হয় তাহলে তা একটি চতুষ্পদ জন্তুর নাম প্রকাশ করবে। আল্লাহ কে এবং তাঁর পরিচয় স্বয়ং তিনিই এভাবে দিয়েছেন-

قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَدٌ -

        হে নবী! আপনি বলে দিন, আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়, তিনি অভাব শুন্য। তাকে কেউ জনন্ম দেয়নি তিনিও কাউকে জন্ম দেননি। (সূরায়ে ইখলাস) আর ভগবানের সংজ্ঞা শ্রী মদ্ভাগবদ গীতা দিয়েছে এভাবে, অর্জুনের এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন-

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লাষির্ভবতি ভারত।

অভুত্থনমধৰ্ম্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।

পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।

ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।

(গীতা, চতুর্থোহধ্যায়: জ্ঞানযোগ-৭-৮)

        অনুবাদঃ হে অর্জুন! যে যে সময়ে ধর্মের পতন আর পাপের প্রাদুর্ভাব হয়, সেই সেই সময়ে আমি জন্ম লইয়া থাকি। এইভাবে পাপীদের বিনাশ করিতে (শাস্তি দিতে) আর সৎ লোকদের বাঁচাইতে, এবং ধর্মকে আবার প্রতিষ্ঠিত করিতে যুগে যুগে আমি জন্মগ্রহণ করি। 

        হিন্দুগণ শ্রী কৃষ্ণকে স্বয়ং ভগবান নামে অভিহিত করেন। সুতরাং ভগবান প্রয়োজনে বা বাধ্য হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই ভগবান পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপে পিতার ঔরসে মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন। ভগবান একবার চার অংশে রাজা দসরথের ঔরসে জন্মগ্রহণ করে রাম, লক্ষণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন-এই চার নাম ধারণ করেছিল। ভগবান তার ভক্ত প্রহল্লাদের সামনে পশুরাজ সিংহের আকৃতি ধারণ করে নিজেকে প্রকাশ করেছিল। তাহলে দেখা গেল ভগবান এই পৃথিবীতে মাতৃগর্ভে পিতার ঔরসে প্রয়োজনে জন্মগ্রহণ করে। যে কোন পশুর রূপও ধারণ করতে পারে। সুতরাং, স্রষ্টাকে নামের পরিচয়ে আবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মানুষ এমন সব শব্দ আবিষ্কার করেছে যে, এসব শব্দের যে কি অর্থ এবং শব্দকে খন্ডিত করলে যে কি অর্থ প্রকাশ করে, সেদিকে লক্ষ্য না রেখেই মানুষ তার সীমিত জ্ঞান প্রয়োগ করে কল্পিত স্রষ্টার একটি নাম রেখেছে। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম হলো ইসলাম। ইসলাম আল্লাহ নামের যে পরিচয় দিয়েছে, তার কোন বিকল্প নেই।
    
        আরবের ছাফা পর্বতের অনেক শিলালিপিতে আরবী আল্লাহ শব্দটি সেই যুগ থেকেই লিখা ছিল এবং এখনো আছে। উত্তর আরবের জনগোষ্ঠী এবং নাবাতী জনগোষ্ঠী নামের একটি অংশ আল্লাহ নাম ব্যবহার করতো। নাবাতীদের কাছে আল্লাহ নামটা পৃথক কোন উপাস্য হিসাবে বিবেচিত না হলেও তাদের শিলালিপিতে দেবতাদের নামের সাথে আল্লাহ নাম সংযুক্ত দেখা যায়। পক্ষান্তরে সেল, মাবগলিউথসহ অনেক ইসলামবৈরী পাশ্চাত্য গবেষক 'আল্লাহ' শব্দটি জাহিলিয়াত যুগের 'আল লাত' নামক দেবমূর্তির নামের রূপান্তর বলে যে কষ্ট কল্পনা করেছে, আরবী শব্দ গঠন পদ্ধতির বিচারে এটা নিতান্তই হাস্যম্পদ অপচেষ্টা মাত্র। 'আল্লাহ' শব্দটি এমনই এক শব্দ যে, এই শব্দের কোন অনুবাদ হয় না। 'আল্লাহ' শব্দের অনুবাদ কেউ যদি 'স্রষ্টা' লেখে তাহলে তা হবে এক মারাত্মক ভুল। কারণ, স্রষ্টা হিসাবে তো মহান আল্লাহর 'খালিক' নামক একটি গুণবাচক নাম রয়েছে। শুধু একটি নয়, আল্লাহর অনেকগুলো সর্বোত্তম গুণবাচক নাম রয়েছে। আল্লাহ বলেন-

وَلِلهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

        আল্লাহ সুন্দর সুন্দর নামের অধিকারী, তাঁকে সুন্দর সুন্দর নামেই ডাকো। সেই লোকদের কথার কোন মূল্য দিও না, যারা তাঁর নামকরণে বিপথগামী হয়। তারা যা কিছুই করতে থাকে; তার বিনিময় তারা অবশ্যই লাভ করবে। (সূরা আল-আ'রাফ-১৮০)

        আল্লাহর গুণবাচক নাম রহমান, এ নামেও তাঁকে ডাকে যায়। মহান আল্লাহ বলেন-

قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيَّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى

        হে নবী! এদেরকে বলে দাও, আল্লাহ অথবা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন তাঁর জন্য সব ভালো নামই নির্দিষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল-১১০)

        মহান আল্লাহ অসংখ্য গুণাবলীর অধিকারী এবং গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কারণে তাঁর গুণবাচক নাম প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গুণবাচক নাম সম্পর্কে স্বয়ং তিনিই সূরা ত্বা-হায় বলেছেন-

اللهُ لا إِلَهَ الأَهُوَ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى

        তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ। আল্লাহর এসব গুণবাচক নামও অতীব সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। এসব নামেরও তসবীহ করতে হবে। আল্লাহ বলেন-

سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى

        (হে নবী!) তোমার মহান শ্রেষ্ঠ রব্ব-এর নামের তাসবীহ্ করো। (সূরা আ'লা-১) আল্লাহ শব্দের অর্থ কোনক্রমেই 'স্রষ্টা' হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে না এবং এ নামের কোন অনুবাদও হতে পারে না। আল্লাহ নামের কোন বিকল্প হতে নেই। স্রষ্টা হিসাবে আল্লাহ তা'য়ালার একটি নাম রয়েছে। কোরআন বলছে-

هُوَ اللهُ الْخَلْقُ الْبَارِئُ الْمُصُوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى

         তিনিই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টি-পরিকল্পনা রচনাকারী ও তার বাস্তবায়নকারী এবং তা অনুসারে আকার-আকৃতি প্রদানকারী, তাঁরই জন্য অতীব উত্তম নামসমূহ। (সূরা হাশর-২৪)

        মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল্লাহ নাম দিয়েই তিনি তাঁর পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন-

 اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ الْقَيُّومُ لَاتَا خُذْهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَواتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ

        আল্লাহ সেই চিরঞ্জীব শাশ্বত সত্তা, যিনি সমগ্র বিশ্বচরাচরকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি সদাজাগ্রত এবং তন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে সক্ষম নয়। আকাশমন্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুর সার্বভৌমত্ব তাঁর। (সূরা বাকারা-২৫৫) 

        আল্লাহ হলেন তিনি, যিনি একমাত্র দাসত্ব লাভের অধিকারী এবং অসীম দয়ালু; তাঁর কাছে গোপন ও প্রকাশ্য বলে কোন কিছু নেই। কোরআন ঘোষণা করছে-

هُوَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَمُ الْغَيْبِ وَالشُّهَدَاةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ .

         তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুরই জ্ঞাতা, তিনিই রহমান ও রাহীম। (সূরা হাশর-২২)

        আল্লাহ মহাপবিত্র এবং তিনি সমস্ত কিছুর মালিক-সমস্ত কিছুরই বাদশাহ-রাজাধিরাজ। কোরআন তাঁর পরিচয় এভাবে পেশ করছে

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ القُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ المُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ

        তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি মালিক-বাদশাহ। অতীব মহান ও পবিত্র। সম্পূর্ণ শান্তি, নিরাপত্তা দানকারী, সংরক্ষণকারী, সর্বজয়ী নিজের নির্দেশাবলী শক্তি প্রয়োগে কার্যকরকারী এবং স্বয়ং বড়ত্ব গ্রহণকারী। (সূরা হাশর-২৩)

        সমস্ত কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি হলেন আল্লাহ। তাঁর নাম বিকৃত করার সামান্যতম অবকাশ নেই। আল্লাহ নামের প্রতিটি অক্ষর দিয়েই তাঁর পরিচয় কোরআন উপস্থাপন করেছে। আল্লাহ নাম লিখতে প্রথমে আরবি অক্ষর আলিফ-এর প্রয়োজন হয়। এই আলিফ অক্ষর বাদ দিলেও আল্লাহর নাম বিকৃত করা যাবে না। কোরআন বলছে-

لِلَّهِ مَا فِي السَّمَواتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللَّهُ

        আকাশ রাজ্য ও পৃথিবীতে যা কিছুই রয়েছে, তা সবই আল্লাহর। তোমাদের মনের কথা প্রকাশ করো অথবা না-ই করো আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কাছ থেকে সে সম্পর্কে হিসাব গ্রহণ করবেন।
  (সূরা বাকারা-২৮৪)

        পবিত্র কোরআন আল্লাহ শব্দের 'আলিফ' ব্যতিতই এ ধরনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালার পরিচয় প্রকাশ করেছে, তাঁর অসীম ক্ষমতার কথা তুলে ধরেছে। উল্লেখিত আয়াতের আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ উহ্য রাখার কারণে আল্লাহ শব্দের সামান্যতম বিকৃতি ঘটেনি। আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ উহ্য রাখলে শব্দ হলো 'লিল্লাহ' অর্থাৎ আল্লাহর জন্য বা আল্লাহর। এই লিল্লাহ শব্দ থেকেও যদি একটি 'লাম' অক্ষর বাদ দেয়া হয় তাহলে অবশিষ্ট থাকে 'লাহু'। এই লাহু শব্দ দিয়েও পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে এভাবে-

لهُ مَقَالِيدُ السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ - يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

        আকাশ ও যমীনের ভান্ডারসমূহের চাবি তাঁরই হাতে নিবদ্ধ, যাকে ইচ্ছা অঢেল রিযিক দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা মেপে দেন। তিনি সব কিছু জানেন। (সূরা আশ শূরা-১২)

        এভাবে আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ অক্ষরটি বাদ দেয়া হলো, তারপর দুটো লাম অক্ষরের প্রথমটি বাদ দেয়া হলো। এবারে দ্বিতীয় লাম অক্ষরটি বাদ দেয়ার পরে থাকে শুধুমাত্র 'হা' অক্ষরটি। এই 'হা' অক্ষরের সাথে পেশ যুক্ত করে 'হু' আকারে উচ্চারিত হয়ে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে। পবিত্র কোরআন এই 'হু' শব্দ দিয়ে আল্লাহর পরিচয় পেশ করছে-

إِنَّهُ هُوَ يُبْدِئُ وَيُعِيدُ - وَهُوَ الْغَفُورُ الوَدُودُ - ذُو الْعَرْشِ الْمَجِيدُ

        তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি কয়েন এবং তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়, আরশ-অধিপতি, মহান শ্রেষ্ঠতর। নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্নকারী। (সূরা বুরুজ)

        সুতরাং, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের 'আল্লাহ' নামের কোনভাবেই বিকৃতি ঘটানো সম্ভব নয়। এর যে কোন অক্ষর ছেড়ে দিলেও তা অবিকৃত থাকে এবং সঠিক অর্থ প্রকাশ করে। এ নামের সাথে কোন কিছুর তুলনা করা যায় না এবং এ নামের কোন ভাষান্তর করাও যায় না।

Post a Comment

0 Comments