মানব-মন্ডলীকে সঠিক পথপ্রদর্শনের লক্ষ্যে এই পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল আগমন করেছেন এবং তাঁরা সকলেই মানুষকে বিচার দিবস সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাঁরা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিচার দিবস নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। পৃথিবীতে মানুষ যা কিছু বলছে এবং করছে, বিচার দিবসে এসব কিছুর চুলচেরা বিচার করা হবে ও কর্মলিপি অনুসারে মানুষ পুরস্কৃত হবে এবং দন্ডলাভ করবে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরবর্তী জীবনই হলো মানুষের আসল জীবন-সেই জীবনে যে ব্যক্তি সফলতা অর্জন করতে পারবে, সেটাই প্রকৃত সফলতা। আর সেই সফলতা অর্জন করতে হলে পৃথিবীতে মানুষকে অবশ্যই মহান আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান অনুসরণ করতে হবে। নবী-রাসূলগণ যখনই বিচার দিবসের কথা বলেছেন, তখনই এক শ্রেণীর মানুষ মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় বিশ্ব-ব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে নানা ধরনের যুক্তি প্রদর্শন করেছে এবং এ ব্যাপারে বিদ্রোহীর ভূমিকা অবলম্বন করেছে। এ ধরনের বিদ্রোহী ভূমিকা শুধু সেই যুগের মানুষই অবলম্বন করেনি, প্রতিটি যুগেই এটা করা হয়েছে। পরকালে অবিশ্বাসী মানুষগুলো প্রতিটি যুগেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে বিরোধিতা করেছে, এখনও করছে এবং পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব-মুহূর্ত পর্যন্ত করতে থাকবে।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, বিচার দিবসের কথা শোনার সাথে সাথে একশ্রেণীর মানুষ কেন প্রচন্ডভাবে ক্ষেপে উঠেছে এবং প্রবল বিরোধিতার ঝান্ডা উড্ডিন করেছে? কেন তারা নানা ধরনের যুক্তির অবতারণা করে বিচার দিবসকে অস্বীকার করেছে? কেন তারা ঐ লোকগুলোর ওপরে নির্যাতন শুরু করেছে, যারা বিচার দিবস সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে গিয়ে সেই শুরু থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাহলো, যুগে যুগে যারা পরকাল অস্বীকার করেছে, বিচার দিবস সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করেছে, ঐ দিনটি সম্পর্কে বিতর্ক করেছে, এই বিতর্ক-সন্দেহ-সংশয়ের পেছনে একটি মনস্তাত্বিক কারণ সক্রিয় ছিল।
যারা বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাসী এই পৃথিবীতে তাদের জীবনধারা হয় এক ধরনের আর যারা বিচার দিবসের প্রতি অবিশ্বাসী, তাদের জীবনধারা হয় ভিন্ন ধরনের। বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাসীদের জীবনধারা হলো, তারা যে কোন কাজই করুন না কেন, তাদের প্রতিটি কথা ও কাজের পেছনে এই অনুভূতি সক্রিয় থাকে যে, আল্লাহর কাছে বিচার দিবসে জবাবদিহি করতে হবে। এই পৃথিবীতে তারা যা কিছুই বলছে এবং করছে, এসবের জন্য মহান আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন। সে যদি কোন অসৎ কথা বলে এবং কাজ করে তাহলে তাকে আল্লাহর দরবারে শাস্তি পেতে হবে। এই পৃথিবীর জীবনই শেষ নয়, মৃত্যুর পরের জীবনই হলো আসল জীবন। সেই জীবনে তাকে সফলতা অর্জন করতে হবে। এই অনুভূতি নিয়ে সে পৃথিবীর জীবনকে পরিচালিত করে।
আর যারা বিচার দিবসের প্রতি অবিশ্বাসী, পৃথিবীতে তাদের জীবনধারা হলো বল্লাহীন পশুর মতোই। তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন-
وَقَالُوا ءَ إِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْضِ إِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ
আর এরা বলে, যখন আমরা মাটিতে মিশে একাকার হয়ে যাবো তখন কি আমাদের আবার নতুন করে সৃষ্টি করা হবে? (সূরা আস্ সাজদাহ্-১০)
অর্থাৎ এদের বিশ্বাস হলো, মৃত্যুর পরে আর কিছুই নেই। নির্দিষ্ট সময়ের পরে একদিন আমরা মৃত্যুবরণ করবো, যার যার নিয়ম অনুসারে আমাদের অন্তেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে, আমাদের দেহ যেসব উপকরণ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল, সেসব উপকরণ এই পৃথিবীতেই যখন বিদ্যমান রয়েছে, তখন সেসব উপকরণ পৃথিবীতেই মিশে যাবে। কারো দরবারেও আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে না এবং আমাদের কোন কর্ম বা কথা সম্পর্কে কারো কাছে কোন জবাবদিহি করতেও হবে না। বিচার দিবসের প্রতি অবিশ্বাসীদের এই অনুভূতির কারণে পৃথিবীতে এদের কথা ও কাজের ব্যাপারে কোন নিয়ম এরা অনুসরণ করে না। তার কথায় কার কি ক্ষতি হতে পারে, কে মনে আঘাত পেতে পারে এসব চিন্তা তারা করে না নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য এরা যে কোন কাজই করতে পারে। তার কাজের দ্বারা ব্যক্তি বা দেশ ও জাতি কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্থ হলো, এ চিন্তা এদের মনে স্থান পায় না।
এদের একমাত্র চিন্তাধারা হলো, এই পৃথিবীর জীবনকে পরিপূর্ণভাবে ভোগ করার জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন, তা যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও অর্জন করতে হবে। যৌন অনাচারের মাধ্যমে যদি প্রভূত অর্থ আমদানী করা যায়, তাহলে তা করতে কোন দ্বিধা এদের থাকে না। সুদের প্রচলন ঘটিয়ে, অশ্লীলতার প্রসার ঘটিয়ে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, মিথ্যা-শঠতা, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা ইত্যাদির মাধ্যমে যদি নিজের স্বার্থ অর্জিত হয়, তাহলে অবশ্যই তা করতে হবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটিই-জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করো। এই জীবন একবার হারালে আর ফিরে পাওয়া যাবে না, সুতরাং জীবিত থাকাবস্থায় ভোগের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হবে। খাও দাও আর ফুর্তি করো- (Eat, Drink and Be Maerry) এটার নামই হলো জীবন।
আল্লাহর বিধান মেনে নিয়ে বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে গেলেই পৃথিবীর জীবন হয়ে যাবে নিয়ন্ত্রিত। আল্লাহর বিধান বলছে, মানুষের প্রতিটি কথা রেকর্ড করা হচ্ছে এবং বলা কথা সম্পর্কে বিচার দিবসে জবাবদিহি করতে হবে-অতএব হিসাব করে কথা বলতে হবে। আল্লাহর বিধান বলছে, যৌন অনাচারের মুখে লাগাম দিয়ে বিয়ের মাধ্যমে বৈধভাবে যৌবনকে ভোগ করতে হবে। অতএব ফুলে ফুরে ঘুরে বিচিত্র উপায়ে যৌবনকে আর ভোগ করা যাবে না। আল্লাহর বিধান বলছে, বৈধ উপায়ে অর্থোপার্জন করতে হবে-এতে যদি সংসারে টানাটানি দেখা দেয় তবুও অবৈধ উপার্জনের পথ অবলম্বন করা যাবে না। অতএব অবৈধভাবে উপার্জন বন্ধ হবে, ভোগ-বিলাসের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে, কালো টাকার পাহাড় গড়ার রাস্তা বঙ্গ হবে, অপরের স্বার্থে আঘাত হানার যাবতীয় পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
এক কথায় গোটা জীবনকে একটি নিয়মের অধীন করে দিতে হবে। তাহলে তো পৃথিবীতে যেমন খুশী তেমনভাবে চলা যাবে না, জীবনকেও ভোগ করা যাবে না। সুতরাং আল্লাহর ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস-এই মতবাদকে কোনক্রমেই মেনে নেয়া যাবে না এবং এই মতবাদ যেন দেশের বুকে প্রচার না হতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এই মতবাদ দেশের বুকে প্রচার করতে দেয়া হলে, দেশের জনগণ ক্রমশঃ এই মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, এই মতবাদে বিশ্বাসীদের দল ক্রমশঃ বৃদ্ধি লাভ করবে, তখন এদের চাপে বাধ্য হয়েই জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।
উল্লেখিত কারণেই নবী-রাসূলদের সাথে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে এবং সুদূর অতীত থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন যারা করছে, তাদের সাথে বিচার দিবস অস্বীকারকারীদের সাথে সংঘাত চলছে। বিচার দিবসকে যারা অস্বীকার করে তারা ভোগবাদে বিশ্বাসী। জীবনকে কানায় কানায় ভোগ করার প্রবণতাই এদেরকে বিচার দিবসের প্রতি অবিশ্বাসী করেছে। এই চিন্তাধারার অধিকারী ব্যক্তিগণই জীবনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। জীবনের একভাগে থাকবে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে কোনক্রমেই ধর্ম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আর দ্বিতীয় ভাগে ব্যক্তি জীবনে যদি কেউ ধর্ম অনুসরণ করতে আগ্রহী হয়, তাহলে সে ব্যক্তিগতভাবে তা অনুসরণ করতে পারে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে না আর এটারই নাম দেয়া হয়েছে 'ধর্মনিরপেক্ষতা'। বিচার দিবসের প্রতি অবিশ্বাসের প্রবণতাই জন্ম দিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ।
নির্যাতন নিষ্পেষনের অগ্নি পরীক্ষার মধ্য দিয়েই ইসলামী আন্দোলন অগ্রসর হয়েছে এবং বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাসীদের সংখ্যা এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, অবিশ্বাসীরা তখন প্রত্যক্ষভাবে বিশ্বাসীদের সাথে দ্বন্দু-সংঘাত সৃষ্টি না করে শঠতা আর ধূর্ততার চোরা পথে এগিয়ে গিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ অনুসরণ করলে একদিকে যেমন জীবনকেও যথেচ্ছাভাবে ভোগ করা যাবে, অপরদিকে বিচার দিবসে জবাবদিহির অনুভূতি সক্রিয় রেখে যারা জীবন পরিচালিত করতে আগ্রহী, তারাও ব্যক্তিগত জীবনে তাদের আদর্শানুসারে চলতে পারবে। ফলে উভয় দলের মধ্যে কোন দ্বন্দু-সংঘাতও দেখা দিবে না এবং ধর্মনিরপেক্ষতার অনিবার্য ফলশ্রুতিতে দেশে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, সেই পরিবেশই মানুষের অন্তর থেকে বিচার দিবসে জবাবদিহির অনুভূতি বিদায় করে দেবে। এভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অনুসারীরা নাস্তিক্যবাদকে বিকশিত করার ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করে থাকে।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ অন্যান্য নবী-রাসূলগণ যখন সত্য সঠিক পথ অবলম্বন করার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তোমরা যদি অন্যায় পথেই চলতে থাকো, তাহলে বিচার দিবসে আল্লাহর আদালতে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। তখন তারা রাসূলের আহ্বানের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে নানা ধরনের ভিত্তিহীন যুক্তি প্রদর্শন করেছে। তাদের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন-
إِنْ هِيَ إِلَّا مَوْتَتُنَا الْأُولَى وَمَا نَحْنُ بِمُنْشَرِيْنَ
এরা বলে, আমাদের প্রথম মৃত্যু ব্যতিত আর কিছুই নেই। এরপর আমাদের পুনরায় আর উঠানো হবে না। যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে আমাদের বাপ-দাদাদের জীবিত করে আনো।
(সূরা আদ দুখান-৩৫-৩৬)
অর্থাৎ মানুষের জীবনে মৃত্যু বার বার আসে না-একবারই আসে। এই একবারেই মানুষের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় জীবনের কোন অস্তিত্ব নেই। যারা বিচার দিবসের কথা বলে, তারা যদি তাদের দাবিতে সত্যবাদী হয়, তাহলে আমাদের পূর্বে যারা এই পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেছে, তাদের ভেতর থেকে দু'চারজনকে উঠিয়ে নিয়ে এসে প্রমাণ করে দিক যে, মৃত্যুর পরেও আরেকটি জীবন রয়েছে।
এ ধরনের হাস্যকর যুক্তি শুধু সে যুগেই প্রদর্শন করা হয়নি, বর্তমান যুগেও তথাকথিত বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে, মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় জীবনের কোন অস্তিত্ব নেই। মূল বিষয় হলো সময়। সময় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, এই সময়ই মানুষকে ক্রমশঃ নিঃশেষের দিকে নিয়ে যায়। কালের গর্ভে সমস্ত কিছুই বিলীন হয়ে যায়। কালের অন্ধকার বিবরে একবার যা প্রবেশ করে তা পুনরায় ফিরে আসে না। মানুষ এক সময় শিশু থাকে, কালের বিবর্তনে এই শিশু একদিন বৃদ্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের যুক্তি তথাকথিত বিজ্ঞানের যুগেই দেয়া হচ্ছে না। যে যুগটিকে মূর্খতার যুগ (Days of ignorance) নামে অভিহিত করা হয়, সেই যুগেও একই যুক্তি প্রদর্শন করা হতো। তারা কি যুক্তি প্রদর্শন করতো, এ সম্পর্কে সূরা জাসিয়ার ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা শোনাচ্ছেন-
وَقَالُوا مَا هِيَ الأَ حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلا الدَّهْرُ
এরা বলে, জীবন বলতে তো শুধু আমাদের পৃথিবীর এই জীবনই। আমাদের জীবন ও মৃত্যু এখানেই এবং কালের বিবর্তন ব্যতিত আর কিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করে না।
বিচার দিবস সম্পর্কে যারা সন্দেহমূলক প্রশ্ন তোলে, তারা এ ধরনের বালখিল্য যুক্তি প্রদর্শন করে থাকে। মানুষ ইন্তেকাল করে এবং আর কোনদিন ফিরে আসে না, এটাই এদের কাছে বড় প্রমাণ যে, মৃত্যুর পরে আর দ্বিতীয় কোন জীবন নেই। ইন্তেকালের পরে মানুষের দেহ পচে যায়, মাটির সাথে গোস্ত মিশে যায়। রয়ে যায় হাড়গুলো, তারপর সে হাড়ও একদিন মাটির সাথে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মানুষের আর কোনই অস্তিত্ব থাকে না। বিচার দিবসে বিশ্বাসীগণ যখন বলেন, মাটির মিশে যাওয়া অস্তিত্বহীন মানুষই বিচার দিবসে পুনরায় দেহ নিয়ে উত্থিত হবে, তখন এদের কাছে বিষয়টি বড় অদ্ভুত মনে হয়। বিস্ময়ে এরা প্রশ্ন করে, অস্তিত্বহীন মানুষ কি করে পুনরায় অস্তিত্ব লাভ করবে? এটা অসম্ভব! সুতরাং বিচার দিবস বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এদের বলা কথাগুলো মহান আল্লাহ এভাবে কোরআনে পরিবেশন করেছেন-
وَقَالُوا اذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتَاءَ انَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيداً -
তারা বলে, আমরা যখন শুধুমাত্র হাড় ও মাটি হয়ে যাবো তখন কি আমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করে উঠানো হবে? (সূরা বনী ইসরাঈল-৪৯)
শুধু তাই নয়, বিচার দিনের ব্যাপারটিকে তারা বিদ্রূপের বিষয়ে পরিণত করে থাকে। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে পরকালে জবাবদিহির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতেন, তখন তারা বলতো, লোকটি নিজে এ সম্পর্কে কথা রচনা করে তা আল্লাহর নামে চালিয়ে দিচ্ছে অথবা তার মাথা ঠিক নেই। কারণ মাথা ঠিক থাকলে সে কি করে বলে যে, মাটির সাথে হাড়-মাংস মিশে যাওয়া মানুষ পুনরায় নিজের অস্তিত্বে প্রকাশ হয়ে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করবে? এই লোকগুলো পথ চলতে যার সাথেই দেখা হতো, তার কাছেই রাসূল সম্পর্কে বিদ্রূপ করে যে কথাগুলো বলতো, তা পবিত্র কোরআন এভাবে পেশ করেছে-
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرًا هَلْ نَدُ لَكُمْ عَلَى رَجُلٍ يُنَبِّئُكُمْ إِذَا مُزَقْتُمْ كُلُّ ممزق - إِنَّكُمْ لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ افْتَرَأَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَمْ بِهِ جِنَّةٌ
অবিশ্বাসীরা লোকদেরকে বলে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলবো, যে ব্যক্তি এই ধরনের সংবাদ দেয় যে, যখন তোমাদের শরীরের প্রতিটি অণু ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে তখন তোমাদের নতুনভাবে সৃষ্টি করে দেয়া হবে, না জানি এই ব্যক্তি আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করে, না কি তাকে পাগলামিতে পেয়ে বসেছে।
(সূরা সাবা-৭-৮)
0 Comments