সেদিন ভয়ে গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত ঘটবে। মায়ের কাছে সন্তান সবচেয়ে প্রিয়। সন্তানের জন্য মা প্রয়োজনে নিজের জীবনও দান করতে পারে। কিন্তু কিয়ামতের সময় যে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হবে, তা দেখে মা সন্তানের কথা ভুলে যাবে। পৃথিবীতে ভূমিকম্প পূর্বাভাস দিয়ে সংঘটিত হয় না। মাত্র কিছু দিন পূর্বে তুরুস্কে এবং ভারতের গুজরাটের ভূজ শহরে যে ভূমিকম্প হয়ে গেল, সেখানে মানুষ বিভিন্ন অবস্থায় নিয়োজিত ছিল। কেউ আহারে, ভ্রমণে, সাংসারিক উপকরণ যোগানের কাজে, কেউ গান-বাজনায়-নৃত্যে, কেউ বা অবৈধভাবে যৌন সম্ভোগে নিয়োজিত ছিল। ভূমিকম্পে তুরুস্কে যেসব নামি-দামী হোটেল, তথাকথিত আধুনিকতার দাবিদারদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছিল, সেসব ধ্বংসাবশেষ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের সময় এমন সব নারী-পুরুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে যৌন সম্ভোগে নিয়োজিত ছিল। যে মুহূর্তে তারা কিয়ামত, বিচার দিবসের কথা ভুলে আল্লাহর বিধান অমান্য করে কুকর্মে নিয়োজিত ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ভূমিকম্পের কবলে তারা পড়েছিল। কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে তা একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালাই অবগত আছেন। মানুষ সে সময়ে নানা ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকবে। মাতৃস্তন সন্তান মুখে নিয়ে চুষতে থাকবে, সেই মুহূর্তেই মহাধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। মায়েরা নিজেদের শিশু সন্তানদেরকে দুধ পান করানো অবস্থায় ফেলে দিয়ে পালাতে থাকবে এবং নিজের কলিজার টুকরার কি অবস্থা হলো, তা কোন মায়ের মনে থাকবে না। মহান আল্লাহ বলেন-
يَأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَدْ هَلْ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكْرَى وَمَا هُمْ بِسُكْرَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ
হে মানুষ! তোমাদের রব্ব-এর গযব থেকে বাঁচো। আসলে কিয়ামতের প্রকম্পন বড়ই ভয়ঙ্কর জিনিস। সেদিনের অবস্থা এমন হবে যে, প্রত্যেক স্তন দানকারিনী (ভীতগ্রস্থ হয়ে) নিজের স্তনদানরত সন্তান রেখে পালিয়ে যাবে। ভয়ে গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত ঘটে যাবে। তখন মানুষদের তুমি দেখতে পাবে মাতালের মতো, কিন্তু তারা কেউ নেশাগ্রস্থ হবে না। আল্লাহর আযাব অত্যন্ত ভয়ংকর হবে। (সূরা হজ্জ্ব-২)
কিয়ামতের দিন মানুষ নেশাগ্রস্থের মতো আচরণ করতে থাকবে। মদপান না করেও ভয়ে আতঙ্কে মানুষ মাতালের মতো হবে। মানুষের তাকানোর ভঙ্গি দেখে মনে হবে যেন চোখের তারা কোটর ছেড়ে ছিটকে বের হয়ে যাবে। চোখের পলক ফেলতেও মানুষের মনে থাকবে না। ভয়ে আতঙ্কে স্থিরভাবে তাকিয়ে থাকবে, মনে হবে যেন পাথরের চোখ। মহান রাব্বুল আলামীন বলেন-
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّلِمُوْنَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيْهِ الْأَبْصَارُ مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ الَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ
আল্লাহ তো তাদেরকে ক্রমশঃ নিয়ে যাচ্ছেন সে দিনটির দিকে, যখন চোখগুলো দিকভ্রান্ত হয়ে যাবে। আপন মস্তকসমূহ উর্ধ্বমুখী করে রাখবে। তাদের দৃষ্টি আর তাদের দিকে ফিরে আসবে না এবং ভয়ে তাদের অন্তরসমূহ উড়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম-৪২-৪৩)
ভয়ে আতঙ্কে মানুষের বুকের কলিজা কণ্ঠনালীর কাছে চলে আসবে। পবিত্র কোরআনের সূরা নাযিয়াতে বলা হয়েছে-
أَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ
তাদের দৃষ্টিসমূহ তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। (সূরা নাযিয়াত-৯)
সূরা কিয়ামাহ্ বলছে, 'তখন তাদের দৃষ্টি সমূহ প্রস্তরীভূত হয়ে যাবে।' সেদিন মানুষ ওই ভয়ংকর অবস্থা এমন ভীত সংকিত, বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে দেখতে থাকবে যে, নিজের শরীরের দিকে তাকানোর কথা সে ভুলে যাবে। কিয়ামতের দিন মানুষ এমন কাতরভাবে তাকাবে, দেখে মনে হবে মানুষের চোখগুলোয় বুঝি প্রাণ নেই-পাথরের নির্মিত চোখ। সবার দৃষ্টি বিস্ফোরিত হয়ে যাবে। সূরা মু'মিনের ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
وَانْذِرْ هُمْ يَوْمَ الإِزِفَةِ إِذِ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ
হে নবী, ভয় দেখাও এ মানুষদেরকে সেদিন সম্পর্কে, যা খুব সহসাই এসে পড়বে। যখন প্রাণ ভয়ে উষ্ঠাগত হবে এবং মানুষ নীরবে ক্রোধ হজম করে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে।
আল-কোরআন জানাচ্ছে-
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاحِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ قُلُوبُ يَوْمَئِذٍ وَاحِفَةٌ
যেদিন ধাক্কা দিবে মহাকম্পনের একটি কম্পন, তারপর আরেকটি ধাক্কা, মানুষের অন্তরসমূহ সেদিন ভয়ে কাঁপতে থাকবে। (সূরা নাযিয়াত-৬-৮)
মানুষ যখন চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয় তখন তাকে দেখে অনেকেই মন্তব্য করে, মানুষটিকে চিন্তায় বুড়ো মানুষের মতো দেখাচ্ছে। এর অর্থ হলো মানুষটি ভীষণভাবে চিন্তাগ্রস্থ। এ ধরনের উদাহরণ দিয়েই মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলেন-
كَيْفَ تَتَّقُونَ إِنْ كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَجْعَلُ الوِلْدَانَ شِيْبَا السَّمَاءُ مُنْفَطِرٌ بِهِ كَانَ وَعْدُهُ مَفْعُولاً -
সেদিন কেমন করে রক্ষা পাবে যেদিন শিশুদেরকে বৃদ্ধ করে দেবে এবং যার কঠোরতায় আসমান দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে যাবে। (সূরা মুয্যাম্মিল-১৭-১৮)
কি ধরনের বিপদে পড়লে মানুষ নিজ সন্তান-প্রাণের প্রিয়জনকে ছেড়ে পালায় তা কল্পনাও করা যায় না। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষ সম্পূর্ণ নগ্ন ও বস্ত্রহীন অবস্থায় উঠবে। রাসূলের স্ত্রীদের একজন (কোন বর্ণনানুযায়ী হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা এবং কোন বর্ণনানুসারে হযরত সাওদা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা, আবার কোন বর্ণনাকারীর মতে অন্য একজন নারী) আতঙ্কিত হয়ে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের গোপন অঙ্গসমূহ সেদিন সবার সামনে অনাবৃত ও উন্মুক্ত হবে? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর রাসূল কোরআন থেকে জানিয়ে দিলেন, সেদিন কারো প্রতি দৃষ্টি দেয়ার মতো সচেতনতা কারো থাকবে না। মহান আল্লাহ বলেন-
فَإِذَا جَاءَتِ الصَّاخة - يَوْمَ يَفِرُّ المَرْءُ مِنْ أَخِيهِ - وَأُمه وأبيه - وصاحبته وبنيه - لكل امرىء - مَنْهُمْ يَوْمَئِدْ - شَأْنٌ يُغْنِيهِ وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُسْفِرَةٌ ضَاحِكَةٌ مُسْتَبْشِرَةٌ وَجُوهٌ يَوْمَئِدْ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ -
সবশেষে যখন সেই কান বধিরকারী ধ্বনি উচ্চারিত হবে। সেদিন মানুষ তার নিজের ভাই, মাতা-পিতা ও স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে পালিয়ে যাবে। তাদের প্রত্যেকের উপর সেদিন এমন একটি সময় (ভয়ংকর ও বিভীষিকাপূর্ণ সময়) এসে পড়বে যখন নিজকে ছাড়া (নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা ছাড়া) আর কারো প্রতি দৃষ্টি দেয়ার অবকাশ থাকবে না। সেদিন কতিপয় মুখমন্ডল আনন্দে উজ্জ্বল থাকবে, হাসি-খুশী ভরা ও সন্তুষ্ট-স্বচ্ছন্দ হবে। আবার কতিপয় মুখমন্ডল ধুলি মলিন হবে। অন্ধকার সমাচ্ছন্ন হবে।
(সূরা আবাসা-৩৩-৪১)
কোন স্নেহদাতা পিতা ও স্নেহময়ী মাতা যদি ফাঁসির আসামী হয় এবং কোন সন্তানকে মঞ্চে উঠিয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়, 'তোমাকে মুক্তি দিয়ে যদি তোমার কোন সন্তানকে ফাঁসি দেয়া হয়, তাতে তুমি রাজী আছো কিনা?' পৃথিবীর কোন পিতা-মাতাই বোধহয় এ প্রস্তাব গ্রহণ করবেনা, নিজে ফাঁসিতে ঝুলবে কিন্তু সন্তানের মৃত্যু সে কামনা করবে না। পৃথিবীতে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, অর্থ-সম্পদ নিজের দখলে নেয়ার লক্ষ্যে কত মামলা মোকদ্দমা, একজন সুন্দরী মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে লাভের জন্য কত চেষ্টা। কিন্তু কিয়ামতের দিন! সেদিন বিপদের ভয়াবহতা দেখে মানুষ গোটা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের বিনিময়ে হলেও নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করবে। পরিচিত-আপনজনদের অবস্থা যে কি, তা জানারও চেষ্টা করবেনা। নিজের চিন্তা ছাড়া সে আর কারো চিন্তা করবে না। মহান আল্লাহ বলেন-
وَلَا يَسْئَلُ حَمِيمٌ حَمِيمًا - يُبَصُرُونَهُمْ - يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يُفْتَدِى مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ بِبَنِيهِ - وَصَاحِبَتِهِ وَأَخِيهِ - وَفَصِيلَتِهِ الَّتِي تُنْوِيْهِ - وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ يُنْجِيهِ
সেদিন কোন প্রাণের বন্ধু নিজের প্রাণের বন্ধুকেও প্রশ্ন করবে না। অথচ তাদের পরস্পর দেখা হবে। অপরাধীগণ সেদিনের আযাব হতে মুক্তি পাবার জন্য নিজের সন্তান, স্ত্রী, ভাই, তাকে আশ্রয়দানকারী অত্যন্ত কাছের পরিবারকে এবং পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে বিনিময় দিয়ে হলেও মুক্তি পেতে চাইবে।
(সূরা মায়ারিজ-১০-১৪)
কিয়ামতের দিন পৃথিবীর সব রকমের আত্মীয়তা, সম্পর্ক-বন্ধন ও যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন হয়ে যাবে। দল, বাহিনী, বংশ, গোত্র, পরিবার ও গোষ্ঠী হিসেবে সেদিন হিসাব নেয়া হবে না। এক এক ব্যক্তি একান্ত ব্যক্তিগতভাবেই সেদিন হিসাব দেবে। সুতরাং আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব, স্ত্রী-সন্তান ও নিজ দলের খাতিরে কোন ক্রমেই অন্যায় কর্মে লিপ্ত হওয়া বা অন্যায় কাজে সহযোগিতা করা, ইসলামী আন্দোলনের বিরোধিতা করা উচিত নয়। মাতা-পিতা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতদেরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সাথে অসহযোগিতা করলে নিশ্চিত জাহান্নামে যেতে হবে। কারণ সেদিন নিজের কৃতকর্মের দায়-দায়িত্ব নিজেকেই বহন করতে হবে। দল, আত্মীয়তা, স্ত্রী-সন্তান কোন উপকারেই আসবে না। আল্লাহ বলেন-
لَنْ تَنْفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيمَةِ
কিয়ামতের দিন না তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক, তোমাদের কোন কাজে আসবে, না তোমাদের সন্তান-সন্ততি। (সূরা মুমতাহিনা-৩)
তবে হ্যাঁ, কোন মানুষ যদি নিজের স্ত্রী-সন্তানকে ইসলাম শিক্ষা দেয়, ইসলামী বিধান মেনে চলার ব্যাপারে সহযোগিতা করে, আল্লাহ চাইলে তারা উপকারে আসতেও পারে। সেদিন কেউ কারো জন্য কিছু করতে পারবে না।, কারো কোন ক্ষমতাও থাকবে না। পৃথিবীর রাজা, বাদশাহ্, ক্ষমতাসীন দল, ক্ষমতাবান মানুষ কত অত্যাচার করে দুর্বলদের ওপর। ভুলে যায় কিয়ামতের ভয়াবহতার কথা। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন জলদ গম্ভীর স্বরে ডাক দিয়ে বলবেন, আজ কোথায় পৃথিবীর সেই রাজা, বাদশাহগণ? কোথায় সেই অত্যাচারীগণ?' কোরআন ঘোষণা করছে-
لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلهِ الوَاحِدِ الْقَهَّارِ الْيَمَ تُجْزَاى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ أَظْلَمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
(কিয়ামতের দিন চিৎকার করে প্রশ্ন করা হবে) আজ বাদশাহী কার? (পৃথিবীর ক্ষমতাগর্বী শাসকগণ আজ কোথায়?) (উত্তরে বলা হবে) আজ বাদশাহী কর্তৃত্ব-প্রভুত্ব একমাত্র পরম পরাক্রান্তশালী আল্লাহর। (বলা হবে) আজ প্রত্যেক মানুষকে সে যা অর্জন করেছে-তার বিনিময় দেয়া হবে। আজ কারো প্রতি অবিচার করা হবে না। আর আল্লাহ হিসাব নেয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত ক্ষীপ্র। (সূরা মুমিন-১৬-১৭)
অবিশ্বাসের আবরণ সৃষ্টি করে যারা নিজেদের দৃষ্টিকে আবৃত করে রেখেছে, তাদের চোখে সত্য ধরা পড়ে না। কিয়ামত, বিচার, জান্নাত-জাহান্নাম তথা অদৃশ্য কোন শক্তিকে যারা বিশ্বাস করেনি, এসব ব্যাপারে কোন গুরুত্ব দেয়ারও প্রয়োজন অনুভব করেনি, সেদিন এদেরকে বলা হবে, যে অবিশ্বাসের পর্দা দিয়ে নিজেদের দৃষ্টিশক্তিকে আড়াল করে রেখেছিলে, আজ সে পর্দা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন দেখো না, আমার ঘোষণা কতটা সত্য ছিল। মহান আল্লাহ বলেন-
لَقَدْ كُنْتَ فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَذَا فَكَشَفْنَا عَنْكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ اليَوْمَ حَدِيدٌ
(সেদিন আল্লাহ প্রত্যেক অবিশ্বাসীকে বলবেন, এ দিনের প্রতি অবিশ্বাস করে তুমি অবহেলায় জীবন কাটিয়েছো) আজ তোমার চোখের পর্দা সরিয়ে দিয়েছি। যা তুমি বিশ্বাস করতে চাওনি, অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে চাওনি, তা আজ দেখো এ সত্য দেখার জন্যে আজ তোমার দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে দিয়েছি।
(সূরা কাফ-২২)
দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে দেয়ার অর্থ হলো, চোখের সামনের যাবতীয় পর্দাকে অপসারিত করা। মৃত্যুর পরে কি ঘটবে, মানুষ এ পৃথিবী থেকে তা দেখতে পায় না। যেসব কারণে তা দেখতে পায় না, সেদিন সেসব কারণসমূহ কার্যকর থাকবে না। ফলে পৃথিবীতে যারা ছিল অবিশ্বাসী, তারা নিজ চোখে সমস্ত দৃশ্য দেখে হতচকিত হয়ে যাবে। বিপদের ভয়াবহতা অবলোকন করে মানুষ দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পালাতে থাকবে। কিন্তু পালানোর জায়গা সেদিন থাকবে না।
0 Comments