কেয়ামতের দিন নেতা ও অনুসারীগণ পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করবে

        পৃথিবীর এমন মানুষের সংখ্যা অগণিত, যারা নিজেদের জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগায় না। অপরের পরামর্শ অনুযায়ী চলে। কেউ চলে পিতা-মাতার কথা অনুযায়ী। কিন্তু চিন্তা করে দেখে না পিতা-মাতার কথা ইসলাম সম্মত কিনা। আবার কেউ চলে নেতাদের কথা অনুযায়ী। চোখে দেখছে, মসজিদে আজান হচ্ছে, নামাজের সময় চলে যাচ্ছে তবুও নেতা বক্তৃতা করেই যাচ্ছেন। নেতা নিজেও নামাজ আদায় করছে না দলের লোকদেরকে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিচ্ছে না। এই ধরনের খোদাদ্রোহী নেতৃবৃন্দের কথা অনুযায়ী এক শ্রেণীর মানুষ চলে। আবার আরেক ধরনের মানুষ আছে যারা অন্ধভাবে পীর-মওলানাদের কথা অনুযায়ী চলে। চিন্তা করে দেখে না, পীর বা মওলানা সাহেবের কথার সাথে আল্লাহ রাসুলের কথার মিল আছে কিনা। পীর বা মাওলানা হলেই যে সে ফেরেশতা হয়ে যাবে এটা তো কোন যুক্তি নয়। পৃথিবীতে যারা নিজে ইসলামী জ্ঞান অর্জন না করে অন্যের পরামর্শে ভুল পথে চলে তাদের অবস্থা কিয়ামতের দিন কেমন হবে সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-

وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ بِلَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلاً - يويلَتى لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلانًا خَلِيْلاً لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِكْرِ بَعْدَ إِذْجَاءَ نِي

        অপরাধী জালিমগণ সেদিন নিজের হাত কমাড়াতে থাকবে এবং বলবে-হায়, আমি যদি রাসুলের সংগ গ্রহণ করতাম। (অর্থাৎ রাসুলের দেয়া আদর্শ যদি মেনে চলতাম) হায় আমার দুর্ভাগ্য! অমুক ব্যক্তিকে যদি আমি বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। তার প্ররোচনায় পড়েই আমি সে নসীহত গ্রহণ করিনি যা আমার নিকট এসেছিল। (সূরা ফুরকান-২৭-২৯)

        অর্থাৎ ওই সমস্ত ব্যক্তিকে যদি অনুসরণ না করতাম, যারা আমাকে ভুল পথে চালিয়েছে। তাদের কারণেই আমি ওই সমস্ত মানুষদের কথা শুনিনি-যারা আমাকে ইসলামের পথে ডেকেছে। অপরাধীগণ আযাবের ভয়াবহ অবস্থা দেখে বলবে, যদি এই হাশর বিচার না হতো! মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوْءٍ تَوَدُّلُوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بِعِيداً -

        নিশ্চয়ই সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের ফল পাবে। (সে ফল) হোক ভালো অথবা মন্দ, সেদিন তারা কামনা করবে যে, এ দিনটি যদি তাদের নিকট হতে দূরে অবস্থান করতো, তবে কতই না ভালো হতো। (আল-ইমরান-৩০)

        পৃথিবীর আদালতে উকিল-ব্যারিষ্টারকে টাকার বিনিময়ে আসামীর পক্ষে নিয়োগ করা হয়। তারা নানা যুক্তি দিয়ে, কথার কূটকৌশল প্রয়োগ করে, মিথ্যে কারণ দেখিয়ে স্পষ্ট চিহ্নিত খুনী আসামীকেও নির্দোষ বানানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিয়ামতের দিন! সেদিন এ সমস্ত কূট কৌশল চলবে না। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'তোমাদের প্রতিটি মানুষের সাথে আল্লাহ কোন মাধ্যম ছাড়াই কথা বলবেন, (অর্থাৎ হিসাব নেবেন) সেখানে আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে কোন উকিল বা দো-ভাষী থাকবে না। আর তাকে লুকিয়ে রাখার কোন আড়াল থাকবে না। সে যখন ডান দিকে তাকাবে তখন নিজের কৃতকর্ম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। আবার যখন বাম দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে সেদিকেও নিজের কর্মসমূহ ছাড়া আর কিছুই দেখবেনা। যখন সামনের দিকে তাকাবে তখন জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখবেনা। অতএব অবস্থা যখন এই তখন তোমরা একটি খেজুরের অর্ধেক দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন হতে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করো। (বোখারী, মুসলিম)

        পৃথিবীতে যারা আল্লাহর বিধানে সাথে বিরোধিতা করেছে, ইসলামী আন্দোলনের সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে, কিয়ামতের ময়দানে যখন জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন জাহান্নামের দ্বাররক্ষী তাদেরকে প্রশ্ন করবে। পবিত্র কোরআন বলছে-

اذَا الْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وهي تَفُورُ - تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيْهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ

        তারা যখন জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, তখন জাহান্নামের ক্ষিপ্ত হওয়ার ভয়াবহ ধ্বনি শুনতে পাবে। জাহান্নাম উথাল-পাতাল করতে থাকবে, ক্রোধ-আক্রোশের অতিশয় তীব্রতায় তা দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। প্রতিবারে যখনই তার ভেতরে কোন জনসমষ্টি (অপরাধী দল) নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার দ্বার রক্ষী সেই লোকদেরকে প্রশ্ন করবে, কোন সাবধানকারী কি তোমাদের কাছে আসেনি? (সূরা মুলক-৭-৮)

        জাহান্নামের দ্বাররক্ষী বলবে, এই ভয়ঙ্কর স্থানে তোমরা কেমন করে এলে? এই জাহান্নামের মতো কঠিন স্থান আল্লাহ আর দ্বিতীয়টি সৃষ্টি করেননি। আল্লাহর বিধান অমান্য করলে এই স্থানে আসতে হবে, পৃথিবীতে এ সংবাদ কি তোমাদেরকে কেউ অবগত করেনি? তখন জাহান্নামীগণ কি জবাব দিবে আল্লাহ তা শোনাচ্ছেন-

قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا فِي ضَلَلٍ كَبِيرٍ -

        তারা জবাবে বলবে, হ্যাঁ, সাবধানকারী আমাদের কাছে এসেছিল বটে কিন্তু আমরা তাকে অমান্য ও অবিশ্বাস করেছি এবং বলেছি যে, আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি। আসলে তোমরা মারাত্মক ভুলের ভেতরে নিমজ্জিত রয়েছো। (সূরা মুলক-৯)

        ইসলামী আন্দোলন বিরোধী জাহান্নামের যাত্রীরা প্রশ্নকারীকে বলবে, 'আমাদের কাছে নবী-রাসূল, আলেম-ওলামা, ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মী এসেছিল। তারা আমাদেরকে আল্লাহর বিধানের প্রতি আনুগত্য করার জন্য দাওয়াত দিয়েছিল। আমরা তাদের দাওয়াত কবুল করিনি। তাদের সাথে আমরা বিরোধিতা করেছি। আমরা তাদেরকে মৌলবাদী আর সাম্প্রদায়িক বলে গালি দিয়ে বলেছি, তোমরা সেকেলে আদর্শ অনুসরণ করে চলছো। আল্লার বিধান বলে তোমাদের কাছে কিছুই নেই। ইসলামের নামে তোমরা নিজেদের বানানো আদর্শ দেশ ও জাতির বুকে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছো। দেশ ও জাতিকে তোমরা প্রগতির পথ থেকে সরিয়ে অধঃগতির দিকে নিয়ে যেতে চাও।' এই লোকগুলো সেদিন আফসোস করে নানা কথা বলবে। সূরা মূলক-এর ১০ নং আয়াতে আল্লাহ শোনাচ্ছেন, সেদিন তারা কি বলবে-

وَقَالُوا لَوكُنَّا نَسْمَعُ أَوْنُعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحُبِ السَّعِيرِ -

        আর তারা বলবে, হায়! আমরা যদি শুনতাম ও অনুধাবন করতাম তাহলে আমরা আজ এই দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের উপযুক্ত লোকদের মধ্যে গণ্য হতাম না!

        আমরা যদি কোরআনের কথা শুনতাম, ইসলামের বিধান অনুধাবন করে তা অনুসরণ করতাম, তা হলে আজ এই জাহান্নামে যেতে হতো না। ইন্না কুন্না লাকুম তাব'আন-আমরা যদি অনুসরণ করতাম-আমরা যদি আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে নিজেদের জীবন পরিচালিত করতাম, তাহলে আজ এই কঠিন অবস্থার মধ্যে নিপতিত হতাম না।

        পৃথিবীর মানুষ একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র করে, গোপনে খুন, নারী ধর্ষণ, চুরি করে। ঘুষ খায়। সমাজে সে সব হয়ত কোনদিন প্রকাশ পায় না। কিন্তু সেদিন! সেদিন যে কত সাধু ধরা পড়ে যাবে তা আল্লাহই জানেন। সূরা হাক্কায় মহান আল্লাহ বলেন-

يَوْمَئِذٍ تَعْرَضُونَ لَا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ

        সেদিন সমস্ত বিষয় প্রকাশ করা হবে। তোমাদের কোন তত্ত্ব ও তথ্যই লুকিয়ে থাকবে না।

        এই পৃথিবীর মাটির উপরে মানুষ বিচরণ করছে। কিয়ামতের দিন এই মাটি কথা বলবে। মহান আল্লাহ বলেন-

يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا -

        সেদিন তা (জমিন) নিজের উপর সংঘটিত সমস্ত অবস্থা বর্ণনা করবে? (সূরা যিলযাল-৪)

        কোরআনের এই আয়াত প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল বলেন, 'তোমরা কি বলতে পারো, সেই অবস্থাটা কি-যা সে (মাটি) বলবে?' উপস্থিত লোকেরা বললো, 'আল্লাহ এবং তার রাসূলই এ বিষয়ে অধিক জানেন।' তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'মাটি প্রত্যেক পুরুষ ও স্ত্রী লোক সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে যে, তার উপর (মাটির উপর) থেকে কে কি করেছে। মাটি এসব অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা দিবে। মানুষের আমল বা কর্ম সমূহকেই এ আয়াতে আখবার (সংবাদের নিদর্শন) বলা হয়েছে। (তিরমিজ ও আবু দাউদ)

        যমীন তার উপরে যা কিছু ঘটবে সব কিছু কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে প্রকাশ করে দিবে, এ কথাটি সে যুগের মানুষের কাছে অদ্ভুত বিস্ময়কর মনে হয়েছে। অনেকে অবিশ্বাসও করেছে। মাটি কথা বলবে, এটা তাদের বোধহয় বোধগম্য হতো না। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞানের অপূর্ব আবিষ্কার সিনেমা, রেডিও, টেলিভিশন, টেপ-রেকর্ডার, আলট্রাসনোগ্রাফী, কার্ডিওলজি, টেলেক্স, ফ্যাক্স, কম্পিউটার প্রভৃতির ব্যাপক প্রচলন ও ব্যবহার-মানুষকে স্পষ্ট ধারণা দিচ্ছে-মাটি কথা বলবে এটা অসম্ভবের কিছু নয়। মানুষ নিজের মুখে যা বলে, তা বাতাসে ইথারের প্রবাহ, ঘরের প্রাচীর, ঘরের ছাদ ও মেঝেতে, ঘরের আসবাবপত্রের প্রতিটি বিন্দুতে বিন্দুতে সমস্ত কিছুর অণু-পরামাণুতে মিশে থাকে। মানুষের বলা কথা কণ্ঠ হতে উচ্চারিত যে কোন ধ্বনির ক্ষয় নেই ধ্বংস নেই।

        মহাবিজ্ঞানী পরম করুণাময় আল্লাহ রব্বুল আলামীনযখন চাইবেন তখন পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুতে মিশে থাকা মানুষের কণ্ঠস্বর ও উচ্চারিত ধ্বনি ঠিক তেমন ভাবেই পুনরায় উচ্চারণ করাতে পারবেন-যেমন তা প্রথমবার মানুষের কণ্ঠ হতে উচ্চারিত বা ধ্বনিত হয়েছিল। মানুষ বহু শত বছর পূর্বে তার নিজের বলা কথা তখন নিজ কানেই শুনতে পাবে। তার পরিচিত লোকরাও শুনে বুঝতে পারবে এই কণ্ঠস্বর অমুকের। মানুষ পৃথিবীর বুকে যে অবস্থায় এবং যেখানে যে কাজ করেছে তার প্রত্যেকটি গতিবিধি ও নড়াচড়ার ছবি বা প্রতিবিম্ব মানুষের আশে পাশে নিচে উপরে যা থাকে অর্থাৎ পরিবেশের প্রতিটি জিনিষের উপরেই পড়ছে। মানুষের স্পন্দনের প্রতিটি ছায়া প্রতিটি বস্তুর উপরে প্রতিফলিত হচ্ছে।

        বর্তমানে মানুষ স্যাটালাইটের মাধ্যমে যে কেরামতি দেখাচ্ছে, কিন্তু যে আল্লাহ মনুষকে ঐ স্যাটালাইট আবিষ্কারের জ্ঞানদান করেছেন, সেই আল্লাহ কি স্যাটালাইট বানিয়ে মানুষের প্রতিটি গতিবিধির ছবি ধরে রাখছেন না? মানুষ পানির অতল প্রদেশে, তিমিরিাচ্ছন্ন ঘন অন্ধকারে স্পষ্ট চবি তোলার জন্যে ক্যামেরা বানিয়ে তা ব্যবহার করছে। ঠিক তেমনি মানুষ নিঃছিদ্র ঘন অন্ধকারে কোন কাজ করলেও তার ছবি উঠে যাচ্ছে।

        কারণ আল্লাহর এ বিশাল পৃথিবীর এমন শক্তিশালী ক্যামেরা বা আলোকরশ্মি চলমান আছে যার কাছে আলো অন্ধকারের কোন তারতম্য বা পার্থক্য নেই, তা যে কোন অবস্থায় কাছের ও দূরের যে কোন ছবি তুলতে সক্ষম। মানুষের যাতবীয় কর্ম তো বটেই এমনকি তার পায়ের নিচে চাপা পড়ে ছোট একটা উকুনও যখন মারা যাচ্ছে তখন তখনই সে ছবি উঠে যাচ্ছে। এসব ছবি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিবিম্ব কিয়ামতের দিন চলচ্চিত্রের মতোই সমস্ত মানুষের দৃষ্টির সামনে ভাসমান ও ভাস্কর হয়ে উঠবে।

        মানুষ নিজের চোখেই দেখবে সে ডাকাতি, ছিনতাই করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে, হত্যা করেছে, নারী ধর্ষন করেছে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করেছে, সুদ, ঘুষ খেয়েছে সব কিছুই দেখতে পাবে। শুধু তাই নয়-মানুষের মনের মধ্যে যে সব চিন্তা চেতনা কামনা বাসনার উদয় হয় তা-ও বের করে মানুষের দৃষ্টির সামনে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেয়া হবে।

        বিচার দিবসে পাপীগণ নিজের দোষ অন্যে ঘাড়ে চাপাবে। মানুষ তার মানবিক দূর্বলতার কারণে অন্যের খেয়াল খুশী মতো কাজ করতে বাধ্য হয়, অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর জন্যে, স্ত্রী-স্বামীর জন্যে, পিতা সন্তানের জন্যে, সন্তান পিতার জন্যে, বন্ধু-বন্ধুকে খুশী করার জন্যে, রাজনৈতিক নেতাকে সন্তুষ্ট করার জন্যে, পীর ও শিক্ষককে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে, উর্ধ্বতন অফিসারকে খুশী করে নিজের চাকরী পাকাপোক্ত করার জন্য, অথবা চাকরিতে প্রমোশনের জন্যে, মন্ত্রী, এম, পি, চেয়ারম্যান-মেম্বারকে সন্তুষ্ট করার জন্য এমন কাজ করে, যে কাজ করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।

        এ সমস্ত মানুষদের নির্বুদ্ধিতার জন্যে হাশরের ময়দানে তাদেরকে চরমভাবে প্রতারিত ও নিরাশ হতে হবে এবং আযাব ভোগ করতে হবে। পরকালে তারা কঠিন আযাব ভোগ করবে, এ কথা পবিত্র কোরআনে বার বার উল্লেখ করে এ ধরনের আত্মপ্রবঞ্চিত দলকে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন-

اذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرٌ أَمِنْهُمْ كَمَا تَهْرُءُوا مِنَّا - كَذَالِكَ يُرِيْهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ وَلَهَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ

        যাদের কথায় (নেতা বা ক্ষমতাবান) মানুষ চলতো, তারা (নেতাগণ) কিয়ামতের দিন তাদের দলের লোকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ কেটে পড়বে। নেতা এবং অনুসারীগণ সেদিনের ভয়ংকর শাস্তির ভয়াবহতা দর্শন করবে। নেতা এবং অনুসারীদের সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে যাবে। অনুসারীগণ বলতে থাকবে, যদি কোন প্রকারে আমরা একবার পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারতাম তাহলে আমরা সেখানে (পৃথিবীতে নেতাদের) এদের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতাম যেমন করে আজ তারা (নেতাগণ) আমাদের থেকে (বিচ্ছিন্ন) হয়েছে, কিন্তু মহান আল্লাহ সকলকেই (নেতা ও অনুসারীদেরকে) তাদের কর্মফল দেখিয়ে দিবেন যা তাদের জন্যে অবশ্যই অনুতাপ-অনুশোচনার কারণ হবে। তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং তারা সে জাহান্নামের আগুন থেকে কোনক্রমেই বের হতে পারবে না। 

(সূরাবাকারাহ্-১৬৬-১৬৭)

        অতএব হায়াত থাকতে অবশ্যই মানুষকে সাবধান হতে হবে। কারো নির্দেশ মেনে চলা যাবে না, সে যত বড় নেতা হোক, যত বড় পীর-মাওলানা হোক না কেন। কেউ কোন নির্দেশ দিলে সে নির্দেশ ইসলাম সম্মত কিনা-তা যাচাই করে তারপর মেনে চলতে হবে। পৃথিবীতে যারা যাচাই-বাছাই না করে, যে কোন নেতা গোছের মানুষের অনুসরণ করেছে তাদের ও তাদের নেতাদের মৃত্যুকালের অবস্থা হবে অত্যন্ত ভয়ংকর। মৃত্যুর সময়ে ফেরেস্তা তাদেরকে প্রশ্ন করবে-সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-

قَالُوا أَيْنَ مَا كُنْتُمْ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ - قَالُوا ضَلُّوا عَنَّا وَشَهِدُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَنَّهُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَفِرِينَ - قَالَ ادْخُلُوا فِي أمرٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ فِي النَّارِ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَعَنَتْ أُخْتَهَا حَتَّى إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أخْرَاهُمْ لِأُولُهُمْ رَبَّنَا هَؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَأَتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ قَالَ لِكُلِّ ضِعْفٌ وَلَكِنْ لا تَعْلَمُونَ وَقَالَتْ أُولُهُمْ لَأُخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْسِبُونَ

        আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের আইন-নির্দেশ মেনে চলতে, তারা আজ কোথায়? (উত্তরে) তারা বলবে, তারা (নির্দেশদাতাগণ) তাদের কাছ থেকে সরে পড়েছে। তারপর তারা স্বীকার করবে যে, তারা আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসই করেছে। আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের মধ্যে জ্বিন এবং মানুষের মধ্যে যে দল অতিত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ করো। অতঃপর এদের একটি দল (অনুসারীগণ) যখন জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন তাদেরই অনুরূপ দলের (নেতাগণের) প্রতি অভিশাপ করতে থাকবে। যখন সব দলগুলো (অনুসারী দল ও খোদাদ্রোহী নেতাদের দল) সেখানে প্রবেশ করবে তখন (অনুসারী দল-নেতাদের সম্পর্কে) পরবর্তী দল তার পূর্ববর্তী দল সম্পর্কে একথা বলবে-হে প্রভু, ওরা (খোদাদ্রোহী নেতাগণ) আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। অতএব তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি দ্বিগুণ করে দিন। আল্লাহ বলবেন, 'তোমাদের উভয়ের জন্যেই দ্বিগুণ শাস্তি। কিন্তু এ সম্পর্কে তোমরা কোন জ্ঞান রাখোনা।' তাদের প্রথমটি শেষেরটিকে বলবে, তোমরা আমাদের চেয়ে মোটেই উত্তম নও, অতএব তোমরা তোমাদের কর্মের প্রতিফল ভোগ করো। (সূরা আরাফ)

        ইসলাম বিরোধী নেতা-কর্মীরা জাহান্নামে কঠিন আযাব ভোগ করতে থাকবে এবং এরা একে অপরের প্রতি অভিশাপ দিতে থাকবে। এদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ بِلَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولاً - وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَدَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلا - رَبَّنَا أَتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مَنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا -

        যেদিন তাদের চেহারা আগুনে ওলট-পালট করা হবে তখন তারা বলবে, হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতাম। তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব্ব! আমরা আমাদের নেতাদের ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে। হে আমাদের রব্ব! তাদেরকে দ্বিগুণ আযাব দাও এবং তাদের প্রতি কঠোর আভিশাপ বর্ষণ করো।
  (সূরা আহযাব-৬৬-৬৭)

        মানুষের বানানো আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যারা পৃথিবীতে আন্দোলন করেছে, চেষ্টা-সাধনা করেছে, সেসব নেতাদের যারা অনুসরণ করেছে, সেসব কর্মীদেরকে যখন জাহান্নামের আগুনের ভেতরে জ্বালানো হবে, তখন তারা বলবে, পৃথিবীর ঐ সব নেতা এবং সমাজের প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী লোকগুলো আমাদেরকে ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে ভুল ধারণা দান করেছে, তাদের কারণেই আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। হে আল্লাহ ওদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও। আল্লাহ বলবেন, তোমাদের উভয়ের (অনুসারীগণ ও খোদাদ্রোহী নেতাগণ) জন্যেই দ্বিগুণ আযাব। কিন্তু এ সম্পর্কে তোমরা কোন জ্ঞান রাখো না। তাদের প্রথমদল (অনুসারী দল) শেষের দলটিকে বলবে (নেতাদের দল) তোমরা আমাদের চেয়ে মোটেই উত্তম নও। অতএব তোমাদের অর্জিত কর্মের শাস্তি ভোগ কর।

        পৃথিবীতে সাধারণত দেখা যায় যাদের অর্থ নেই, বিত্ত নেই, দুর্বল, যারা শোষিত তারাই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক ক্ষমতাবান মানুষদের অত্যাচারী খোদাদ্রোহী শাসকদের আইন-কানুন, নির্দেশ মেনে চলে। মানতে বাধ্য হয়। কিয়ামতের পরে হাশরের ময়দানে এদের পরিণাম সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে-

وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفُوا لِلَّذِينَ سْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُّعْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللهُ لَهَدَيْنِكُمْ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مُحِيصٍ

        যখন উভয়দলকে হাশরের ময়দানে একত্র করা হবে, তখন দুর্বল মানুষগুলো ক্ষমতা গর্বিত উন্নত শ্রেণীর (ক্ষমতাবানদের) লোকদের বলবে, আমরা তোমাদেরই কথা মেনে চলেছিলাম। আজ তোমরা কি আল্লাহর আযাবের কিছু অংশ আমাদের জন্যে লাঘব করে দিতে পারো? তারা বলবে, তেমন কোন পথ আল্লাহ আমাদের দেখালে তো তোমাদেরকে দেখিয়ে দিতাম। এখন এ শাস্তি আমাদের জন্যে অসহ্য হোক অথবা ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করি উভয়ই আমাদের জন্যে সমান। এখন আমাদের পরিত্রানের কোন উপায় নেই। (সূরা ইবরাহীম-২১)

        অর্থাৎ কিয়ামতের ময়দানে কর্মিদের দল আযাবের ভয়াবহতা দেখে তাদের নেতাদের বলবে, পৃথিবীতে আমরা ইসলামের বিধান মানিনি, তোমাদের নির্দেশ মেনে চলেছি। আজ জাহান্নামের এই যে ভয়ংকর আযাব আমরা ভোগ করছি, ও নেতারা, আজ কি পারো আল্লাহর আযাব কিছুটা কমিয়ে দিতে। পৃথিবীতে তো তোমরা অনেক বড় বড় কথা বলেছো, অনেক ক্ষমতা দেখিয়েছো। আজ সেই ক্ষমতা একটু দেখাও না! খোদাদ্রোহী নেতারা বলবে, আযাব থেকে বাঁচার কোন পথ আমাদেরই জানা নেই, তোমাদের জানাবো কিভাবে? এখন আমরা সবাই যে শাস্তি ভোগ করছি, তা যতই অসহ্য হোক না কেন, অথবা ধৈর্যের সাথেই আযাব ভোগ করি না কেন। একই ব্যাপারে আজ আমরা ধরা পড়েছি। এই আযাব থেকে বাঁচার কোন পথ আর খোলা নেই। পবিত্র কোরআন শরীফ বলছে-

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَنْ نُؤْ مِنَ بِهذَا الْقُرْآنِ وَلَا بِالَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلَوْ تَرَأَى إِذِ الظَّلِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِنْدَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضِ القَولَ - يَقُولُ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا لَوْلا أَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِينَ - قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا أَنَحْنُ صَدَدْنَكُمْ عَنِ الْهُدَأَى بَعْدَ إِذْ جَاءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُجْرِمِينَ - وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا بَلْ مَكْرُ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَا أَنْ نُكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ اندادا - وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رأوا العَذَابَ وَجَعَلْنَا الأَغْلَلَ فِي أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُوا - هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

        এসব অবিশ্বাসীগণ বলে, কিছুতেই কোরআন মানবো না। এর আগের কোন কিতাবকেও মানবো না। তোমরা যদি তাদের অবস্থা (হাশরের দিন) দেখতে যখন ও জালেমরা তাদের প্রভুর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে থাকবে। সেদিন অসহায় দূর্বলগণ (পৃথিবীতে যারা ছিল অর্থবিত্তহীন) গর্বিত সমাজ পতিদের (পৃথিবীতে যারা ছিল ক্ষমতাবান) বলবে, তোমরা না থাকলে তো আমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনতাম। (অর্থাৎ তোমরাই আমাদেরকে ইসলামী আইন মানতে দাওনি।) গর্বিত সমাজপতিরা দুর্বলদেরকে বলবে, তোমাদের নিকট হেদায়েতের বানী পৌছার পর আমরা কি তোমাদেরকে সৎপথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম? তোমরা নিজেরাই তো অপরাধ করেছো। দুর্বলেরা বড় লোকদের বলবে-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, বরং তোমাদের দিবারাত্রির চক্রান্তই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে রেখেছিল, আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তার আইন মানার ব্যাপারে, তার সাথে শরীক করতে তোমরাই তো আমাদের নির্দেশ দান করতে। তারা যখন তাদের জন্যে নির্ধারিত শাস্তি দেখতে পাবে তখন তাদের লজ্জা ও অনুশোচনা গোপন করার চেষ্টা করবে। আমরা এসব অপরাধীদের গলায় শৃংখল পরিয়ে দেব। যেমন তাদের কর্ম, তেমনি তারা পরিণাম ফল ভোগ করবে। (সূরা সাবা-৩১-৩৩)

        ইসলামের বিধান অমান্যকারীরা ওই সমস্ত মানুষদের সাথে শত্রুতা করে যারা পৃথিবীতে আল্লাহর আইন মেনে চলে। ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, মারধোর করে, নানাভাবে কষ্ট দেয়। হাশরের পরে ইসলামের দুশমনরা যখন জাহান্নামের যাবে তখন তারা জাহান্নামের মধ্যে ওই মানুষগুলোকে খুঁজবে-পৃথিবীতে যারা ইসলামের আইন মেনে চলেছে। কোরআন শরীফ বলছে-

وَقَالُوا مَالَنَا لأَنرَأَى رِجَالاً كُنَّا نَعُدُّ هُمْ مِّنَ الْأَشْرَارِ

        এবং তারা (অবিশ্বাসীরা জাহান্নামের মধ্যে থেকে) বলবে, কি ব্যাপার তাদেরকে তো দেখছি না, যাদেরকে আমরা দুষ্ট মানুষদের মধ্যে গণ্য করতাম। (অর্থাৎ পৃথিবীতে যাদের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ, শত্রুতা করেছি, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক বলে গালি দিয়েছি) (সূরা সোয়াদ-৬২)

        পৃথিবীতে মানুষ কখনো মুক্ত স্বাধীন হতে পারে না-হবার উপায়ও নেই। মানুষ কারো না কারো আইন মেনে চলেই। কেউ নিজের মনের আইন মানে, কেউ সমাজের সমাজপতিদের আইন মানে, নেতা-নেত্রীদের নির্দেশ মেনে চলে অর্থাৎ মানুষ একটা নিয়ম মেনে চলে। সে নিয়ম তার নিজের মনের বানানো অথবা অন্য মানুষের বানানো। হাশরের ময়দানে নেতা অর্থাৎ সমাজে বা দেশে, নিজ এলাকায় ছিল প্রভাবশালী, তারা এবং ওই সমস্ত মানুষ, যারা প্রভাবশালীদের নির্দেশ মেনে চলতো মুখোমুখি হবে। চোখের সামনে ভয়ংকর আযাব দেখে ওই প্রভাবশালী লোকদেরকে অর্থাৎ নেতাদেরকে সাধারণ মানুষ ঘিরে ধরবে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলবে-এই তোমরা, তোমাদের কারনেই আজ আমরা জাহান্নামের যাচ্ছি। তোমাদেরকে আমরা নেতা বানিয়ে ছিলাম, কিন্তু তোমরা নিজেরাও ইসলামী আইন মানোনি আমাদেরকেও মানতে আদেশ করোনি।

        প্রভাবশালী নেতৃস্থানীয় মানুষগুলো তখন বলবে-দেখো, আমরা তোমাদেরকে জোর করে অ্যমাদের আদেশ মানতে বাধ্য করিনি। কেন তোমরা পৃথিবীতে আমাদের পেছনে ছুটতে? আমাদের কি ক্ষমতা ছিল? আসলে তোমরা ইচ্ছা করেই ইসলামের আইন অমান্য করেছো। আমরাও ভুল পথে ছিলাম তোমরাও ভুল পথে ছিলে। এখন আমাদের সবাইকে জাহান্নাম যেতে হবে। প্রকৃত পক্ষে পৃথিবীতে যারা ইসলামের পথে চলতো, ইসলামের দিকে ডাকতো তারাই সত্য পথের পথিক ছিল।

Post a Comment

0 Comments