কিয়ামতের ময়দানে শয়তান নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করবে

        কিয়ামতের ময়দানে শাস্তির ভয়াবহতা অবলোকন করে সমস্ত অপরাধীগণ সম্মিলিতভাবে ইবলিস শয়তানকে চেপে ধরে বলবে-আজ তোকে পেয়েছি। তুই আমাদেরকে পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট করেছিলি। আমাদের কাছে তুই ওয়াদা করেছিলি, আমরা যদি তোর কথা মতো চলি তাহলে সুখ শান্তি পাবো। কিন্তু কোথায় আজ সেই সুখ শান্তি? তখন শয়তান বলবে-দেখো, আজ আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ো না। আজ আমার কোন দায় দায়িত্ব নেই। আমি তোমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছিলাম সে ওয়াদা ছিল মিথ্যে, আমার দেখানো পথে চলতে আমি তোমাদেরকে বাধ্য করিনি, আমি তোমাদের ঘাড় ধরে আমার দলে ডাকিনি। দোষ আমার এতটুকুই যে, আমি তোমাদের ডাক দিয়েছি আর অমনি তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছি। সূরা ইবরাহীমের ২২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন-

وقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَ وَعَدْ تُكُمْ فَاخْلَفْتُكُمْ وَمَا كَانَ لِي عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانِ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِى - فَلا تَلُومُونِي وَلُوْمُوا أَنْفُسَكُمْ مَا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنْتُمْ بِمُصْرِحَى إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِنْ قَبْلُ إِنَّ الظَّلِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

        আর যখন চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়া হবে, তখন শয়তান বলবে, এতে কোনই সন্দেহ নেই যে, তোমাদের প্রতি আল্লাহ যেসব ওয়াদা করেছিলেন, তা সবই সত্য ছিল। আর আমি যত ওয়াদাই করেছিলাম, তার মধ্যে একটিও পূরণ করিনি। তোমাদের ওপর আমার তো কোন জোর ছিল না। আমি এ ছাড়া আর কিছুই করিনি, শুধু এটাই করেছি যে, তোমাদেরকে আমার পথে চলার জন্য আহ্বান করেছি। আর তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছো। এখন আমাকে দোষ দিও না, তিরস্কার করো না, নিজেরাই নিজেদেরকে তিরস্কার করো। ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে রব্ব-এর ব্যাপারে অংশীদার বানিয়ে ছিলে, আমি তার দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। এ ধরনের জালিমদের জন্য তো কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি নিশ্চিত।

        অর্থাৎ শয়তান ও তার অনুসারীরা পরস্পর দোষারোপ করতে থাকবে, তখন শয়তান বলবে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন, আমার আইন মেনে চললে জান্নাত পাবে, না মানলে জাহান্নামে যাবে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আর আমি তোমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছিলাম, তা ভঙ্গ করেছি। এখন আমার উপর তোমাদের কোন দায় দায়িত্ব নেই। আমি তো শুধু পৃথিবীতে তোমাদেরকে ডাক দিয়েছি, আর অমনি তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছো। সুতরাং আজ আমার উপর দোষ চাপিও না বরং নিজেদেরকে দোষ দাও। কারণ আমি তোমাদের ঘাড় ধরে কিছু করাইনি আর তোমারাও আমাকে জোর করে কিছু করাওনি। তোমরা আমার পথ ধরে যে কুফরি করেছো, সে সবের দায় দায়িত্ব আমার নয়, আমি সব অস্বীকার করছি।

        চুলচেরা হিসাবের দিন হাশরের ময়দান। কিয়ামতের পরে হাশরের ময়দানে যখন মানুষের সমস্ত কাজের বিচার অনুষ্ঠিত হবে-সেদিনটিকে মহান আল্লাহ কোরআন শরীফে মানুষের জয় পরাজয়ের দিন হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সফলতা ও ব্যর্থতার দিন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

        মহান আল্লাহ বলেন-

زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ لَنْ يُبْعَثُوا - قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبِّؤُنَ بِمَا عَمِلْتُمْ - وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ فَامِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنْزَلْنَا - وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ - يَوْمَ يَجْمَعُكُمْ لِيَوْمِ الْجَمْعِ ذَالِكَ يَوْمُ التَّغَابُنِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ وَيَعْمَلْ صَالِحًا يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّاتِهِ وَيُدْخِلْهُ جَنَّتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهرُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً ذَالِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِأَيْتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَبُ النَّارِ خَلِدِينَ فِيهَا وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

        অবিশ্বাসীগণ বড় অহংকার করে বলে বেড়ায়, মৃত্যুর পরে আর কিছুতেই তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে না। (হে নবী) তাদেরকে বলে দিন, আমার প্রভুর শপথ-নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পরকালে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। তারপর তোমরা পৃথিবীতে যা যা করেছো, তা জানানো হবে। আর এসব কিছুই আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ ব্যাপার। অতএব তোমরা ঈমান আনো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সেই 'নূরের' প্রতি যা আমি অবর্তীণ করেছি। তোমরা যা কিছু করো, তার প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ অবগত। এসব কিছুই তোমরা জানতে পারবে সেই দিন, যেদিন তিনি তোমাদেরকে সেই মহাসম্মেলনের (হাশরের দিনে মানুষের জমায়েত) জন্যে একত্র করবেন। সেদিনটা হবে পরস্পরের জন্যে জয়-পরাজয়ের দিন। যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে, আল্লাহর তাদের গুনাহ্ মাফ করে দিবেন। তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার দান করবেন। যে জান্নাতের নিম্নভাগে দিয়ে প্রবাহিত হবে স্রোতস্বিনী। তারা সেখানে অনন্তকাল বসবাস করবে। আর এটাই হচ্ছে বিরাট সাফল্য। অপরদিকে যারা আল্লাহ ও পরকালের অস্বীকার করবে এবং মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেবে আমার বানী ও নিদর্শন, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সে স্থান হবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান। (সূরা তাগাবুন-৭-১০)

        এই আয়াতে 'নূর' বলতে কোরআনকে বুঝানো হয়েছে। কোরআন শরীফের অনেকগুলো নাম আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। নূর আরবী শব্দ। যার অর্থ হলো স্পষ্ট উজ্জ্বল আলো। সুতরাং কোরআন শরীফ এমনি উজ্জ্বল আলোর ন্যায়-যা অবতীর্ণ হয়েছে পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় অবিচারের অন্ধকারকে দূর করে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করতে। মানুষকে আল্লাহ রব্বুল আলামীন সৃষ্টি করে তাকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দান করেছেন। সে ইচ্ছে করলে তার স্রষ্টা আল্লাহ, তার নবী-রাসূল, তার জীবন বিধান কোরআন অস্বীকার করে পৃথিবীতে যেমনভাবে মন চায় তেমনভাবে চলতে পারে। অবশ্য এভাবে চললে মানুষের পরিণাম যে কি হবে, তা-ও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন। আবার মানুষ ইচ্ছে করলে আল্লাহ, রাসুল, কোরআন ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে পৃথিবীতে অত্যন্ত সৎভাবে জীবন-যাপন করতে পারে। এভাবে পৃথিবীতে জীবন-যাপন করলে তার ফলাফল যে কি, তা-ও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যেমন স্বাধীনতা দান করেছেন, সৎ এবং অসৎ পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, সৎপথে চললে পুরস্কার এবং অসৎপথে চললে শাস্তি-এ ঘোষনাও দিয়েছেন, তেমনিভাবে এ পরীক্ষাও তিনি মানুষের কাছ থেকে নেবেন পৃথিবীর জীবনে কোন মানুষ জয়ী বা সফল হলো আর কোন মানুষ পরাজিত বা ব্যর্থ হলো।

Post a Comment

0 Comments