ফয়সালা সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, "এ বরাতের রাত্রে আগামী এক বৎসরে কতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যুবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার আমলসমূহ উপরে উঠানো এবং এ রাত্রে বান্দার রিযিকের ফয়সালা করা হয়।' (মিশকাতশরীফ)।
"লাইলাত নিছফি মিন শা'বান" বা লাইলাতল বরাতের রাত্রে আল্লাহ্ পাক অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং অসংখ্য পাপীকে ক্ষমা করেন।
পাঠক পাঠিকাগণ বিশেষ ভাবে মনে রাখিবেন তবে সাত ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ পাক বরকত পূর্ণ রাত্রে ও কবুল করেন না, যদি না তারা খালিছ ভাবে তওবা করে। ঐ ব্যক্তিগণ হচ্ছে এরা (১) যাদুকর (গণক জ্যোতিষ) (২) শরাব খোর, (৩) জিনাখোর (৪) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, (৫) চোগলখোর (৬) আত্মীয়তার সম্পর্ক • ছিন্নকারী সন্তান (৭) ঐ ব্যক্তি যে শরেয়ী ওজর ব্যতিত কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিনদিনের বেশি কথা বন্ধ রাখে। অন্য হাদীস শরীফে আরো দুই ব্যক্তির কথা উলেখ আছে- (ক) মুশারিক অর্থাৎ যারা আলাহ পাক-এর সাথে শরীক করে। খ) যে শরীয়তের কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করে।
সবেবরাত হচ্ছে দোওয়া কবুলের জন্য খাছরাত। বান্দার সর্বপ্রকার নেক দোওয়া, নেক আরজু আল্লাহ পাক এ রাতেই কবুল ও পূরা করে থাকেন। তাই বান্দার উচিত এ মোবারক রাত্রে জাগ্রত থেকে যার যা নেক দোওয়া, নেক আরজু রয়েছে তা দরবারে এলাহির নিকট পেশ করা। তবে দৃঢ়তার সাথে খালিছভাবে তাহা চাওয়া একান্ত কর্তব্য। কোন প্রকার সন্দেহ পোষন না করা। বিশ্বাস রাখা, আমার সব দোওয়া এবং সব ইচ্ছাই আল্লাহ পাক অবশ্যই কবুল করবেন এবং অবশ্যই পূরণ করে দেবেন। মূলতঃ বান্দার কোন দোওয়াই আল্লাহ পাক ফিরিয়ে দেন না। সবই কবুল করে থাকেন। বান্দা কোনটা বুঝতে পারে এবং কোনটা বুঝতে পারে না। যেটা পবিত্র হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে 'দোওয়া তিনভাবে কবুল করা হয়" (১) বান্দা যা দোওয়া করে আল্লাহ পাক বান্দাকে তা দিয়ে দেন তখন বান্দা বুঝতে পারে যে, তার দোওয়া কবুল হয়েছে। (২) বান্দা যা চায় আল্লাহপাক বান্দাকে তা না দিয়ে বান্দার জন্য যা বেশী মঙ্গল বা বেশী জরুরী তা তাকে দিয়ে দেন। তখন বান্দা বুঝতে পারে না, তার দোওয়া কবুল হয়েছে বা হয়নি। (৩) বান্দার দোওয়া গুলো পরকালের জন্য জমা করে রাখা হয়। এক্ষেত্রেও বান্দা বুঝতে পরে না যে তাঁর দোওয়া কবুল হয়েছে। কারণ অল্লাহ পাকই একমাত্র জানেন পরকালে কে কি অবস্থার সম্মুখীন হবে।
নবীপাক (ছাঃ) এঁর প্রিয় মাস ও আল্লাহপাকের প্রিয় মাস:-
"মাসাবাত বিস সুন্নাহ' কিতাবের মধ্যে, হিন্দুস্তানের বিখ্যাত প্রথম স্তরের মোহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ শাহ আব্দুল হক্ মোহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) লিখেছেন যে, রাছুলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাত করেছেন যে, মাহে সা'বান (শবেবরাত) আমার প্রিয় মাস এবং রমজানশরীফ হল আল্লাহপাকের প্রিয় মাস।
পাঠক পাঠিকাগণ যে মাসকে খোদ রছুলুল্লাহ (ছাঃ) এর প্রিয় সে মাসকে আমাদেরও প্রিয় হওয়া উচিত। অর্থাৎ উক্তমাসে এবাদাত, রিয়াদাত ইত্যাদিতে নিমগ্ন থাকা একান্ত কর্তব্য।
শবেবরাত সম্পর্কে আল্লাহপাকের বক্তব্য:-
পবিত্র কোরআন শরীফে ২৫ পারায় আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, এই রাত্রে সমস্ত হেকমত ওয়ালা কার্যাদি বণ্টন করেন। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে তফসীরে 'রুহুল বায়ানে' লিখেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা এই রাত্রে রুজী বণ্টন করেন এবং উক্ত রুজীর দায়িত্বটি হজরত মেকাইল (আঃ) উপর সোপর্দ করেছেন এবং সৎ আমলগুলি প্রথম আসমানের ফেরেশতা হজরত ইসমাইল (আঃ) এর দায়িত্বে দিয়েছেন। যে সমস্ত ব্যক্তির উক্ত সবেবরাত হতে পরবর্তী সবেবরাত আসার পূর্ব পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হবে তাদের রূহ কবজের দায়িত্বটি হজরত আজরাইল (আঃ) এর পর ন্যস্ত করেছেন।
'তারগীভ অত তারহীভ' কিতাবের মধ্যে আরও একটি রাওয়ায়েত আছে নবীপাক (ছাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে শা'বান মাসে আপনার রোজা রাখার কারণ কি? নবীপাক (ছাঃ) বলেছিলেন এক শা'বান থেকে পরবর্তী শা'বান পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হবে তাদের মৃত্যুর সময় লেখা হয়। সে জন্য আমি ইহা অধিক পছন্দ করি যে, যখন আমার মৃত্যুর সময় লেখা হবে তখন যেন আমি রোজাদার থাকি।
শবেবরাতের আমলঃ-
হাদিস শরীফে ও অন্যান্য কিতাবাদিতে শা'বান মাসের অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত রয়েছে। পবিত্র হাদিশ শরীফে ইরশাদ হয়েছে "নিশ্চয়ই পাঁচ রাতে খাছভাবে দোয়া কবুল হয়। প্রথম হচ্ছে (ক) রজব মাসের প্রথম রাত (খ) শা'বান মাসের পনের তারিখ বরাতের রাত (গ) কদরের রাত এবং (ঘ) দুই ঈদের দুই রাত।"
0 Comments