শবে বরাতের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

         আরবী মাসের অষ্টম মাসের নাম শা'বান। অর্থাৎ মাহে রজবুল মোরাজ্জাব এবং মাহে রমযানুল মুবারক-এর মধ্যবর্তী মাস শা'বান বা শবেবরাত। শা'বান শদটি শু'বুন মাদ্দাহ বা' শব্দমূল থেকে এসেছে। এর অর্থ শাখা। বর্ণিত আছে, অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে নেক আমলের শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসটিকে শা'বান নামে নামকরণ করা হয়েছে।

        শবেবরাত অর্থ ভাগ্য রজনী। এই নাম করণের কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে, পিয়ারা রসুল (সাঃ) এই শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস শরীফে ইরসাদ করেছেন যে, "এ বরাতের রাতে আগামী এক বৎসরে কতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যুবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার আমলসমূহ ঊর্দ্ধে উঠানো হয় এবং এ রাতে বান্দার রিযিকের ফায়সালা করা হয়। (মিশকাত শরীফ) ভাষা তত্ত্ববিদগণের মতে, পাঁচ অক্ষর বিশিষ্টে (শা'বানা) শব্দটির শীন অক্ষরটি শরফুন অর্থাৎ মর্যাদার, আইন অক্ষরটি উলুউবুন অর্থাৎ মহত্বের বা অক্ষরটি বাররুন্ অর্থাৎ মূহব্বতের এবং নূন অক্ষরটি নূর অর্থাৎ নূর বা হিদায়েতের প্রমান বহন করে।

       আল্লাহ পাক বান্দাকে ক্ষমা করে কবুল করে নেয়ার জন্য যে বিশেষ মাস ও • দিন নির্ধারণ করেছেন তন্মধ্যে শা'বান মাস এবং এতে অবস্থিত শবে বরাতের দিনটি উল্লেখযোগ্য উম্মতে মুহম্মদীর প্রতি এক মাহান ইহসান।

        হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীর নবী পাক (সাঃ) ইরশাদ করেন, আলাহ্ পাক শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে (শবে বরাতে) বণী কল্প, বণী মুদ্বার, বাণী-রবী এই তিনগোত্রের বকরী ও ভেড়ার পশমের সমতুল্য আমার গুনাহগার উম্মতকে ক্ষমা করে দিবেন। বর্ণিত আছে, তাদের প্রত্যেক গোত্রে বিশ হাজারেরও অধিক বকরী ও ভেড়া ছিল। অর্থাৎ আল্লাহ পাক সকল উম্মতে মুহম্মদীকেই ক্ষমা করে দিবেন, যারা উক্ত রাত্রিতে খালিছ ভাবে ইস্তিগফার করবে।

        হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, আল্লহ পাক এর হাবীব নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, "যখন শা'বান মাসের পনেরো তারিখ উপস্থিত হয় তখন ঐ রাত্রিতে তোমরা নামায পড় এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা আল্লাহ পাক ঐ দিন সূর্যাস্তের পর থেকে পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, "তোমাদের মধ্যে কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব। তোমরা কেউ রিজিক প্রার্থী আছো কি? তাকে রিজিক দান করব। কেউ বিপদগ্রস্ত আছ কি? তার বিপদ দূর করে দিব। আল্লহ্ পাক এইভাবে ফজর পর্যন্ত প্রত্যেক হাজাত মান্দকে ডেকে বলতে থাকেন" (ইবনে মাজাহ শরীফ)।

        হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, "যে ব্যক্তি শবে বরাতের রোযা রেখে ইফতার করার সময় আখিরী রসুল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক (সাঃ) এর প্রতি তিনবার দরুদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ্ পাক তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন (ছগিরাহ) এবং তার রিজিকে বরকত দান করবেন।" পাঠক গণ এ মাসটি হচ্ছে • আল্লাহপাক এর হাবীব হুজুর পাক (সাঃ) এর প্রতি ছলাত সালাম পাঠ করার মাস। কিবলা পরিবর্তনের মাস, বান্দার আমল আল্লাহ পাক-এর নিকট পেশ করার মাস।- সর্বোপরি হাদিস শরীফে হুজুর পাক (সাঃ) ইরশাদ করেন, 'শা'বান' হচ্ছে আমার মাস (দাইলামী শরীফ)

        এ মাসের ১৪ই তারিখ দিবাগত রাতটি শবে বরাত। এই একটি মাত্র রাতই শা'বান মাসের ফযীলত, মর্যাদা, মর্তবা বর্ণনার জন্য যথেষ্ট। এ রাত সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক তার কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন। পীরানে পীর দস্তেগীর কুতুবুল আকতাব হজরত গউসুল আজাম বড় পীর আব্দুল কাদির জ্বিলানী (রহঃ) তিনি তাঁর "গুণিয়াতুত তলেবীন" কিতাবে শবেবরাত সম্পর্কে লিখেছেন শবেবরাত অর্থাৎ লাইলাতুল বারাত। লায়লাতুন এটি আরবী শব্দ যার অর্থ 'রাত'। এবং 'বারাত' শব্দটিও আরবী যার অর্থ নাজাত অতএব "লায়লাতুন বারাত” যার পূর্ণাঙ্গ অর্থ হল নাজাতের রাত্র অর্থাৎ গোনাহ মাফির রাত্র। বড় পীরসাহেব হুজুর উক্ত বাক্যের আরও একটি অর্থ উল্লেখ করেছেন বিতাড়িত হওয়ার রাত। যেমন কাফের, মোশরেক, ব্যাভিচারী, নেশাখোর, যাদুগার, গণৎকার ইত্যাদি ব্যক্তিদের থেকে আল্লাহ পাকের রহমত ও বরকত দূরে সরে যায় অর্থাৎ ঐ সমস্ত ব্যক্তিরা লায়লাতুল বারাতে নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়। অনুরূপ মোমেন ও সৎ বান্দাগণ ঐ রাত্রে গোমরাহী অন্ধকার বা অপদস্থ ইত্যাদি তাঁদের থেকে দূরে সরে যায়। বিলএত্তেফাক (সহমত) আহালে সুন্নাতুল জামা'তের ওলামাগণ উপরোক্ত দুটি অর্থকেই সঠিক বলেছেন।

        "মোকাশাফাতুল কুলুব" কিতাবে হজরত ইমামে গাজ্জালী (রহঃ) লিখেছেন শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাতে বান্দার তওবা আল্লাহ পাক কবুল করে থাকেন। যথা তিনি একটি রাওয়ায়েত উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে হজরত ইবনে আব্বাছ (রাঃ) বর্ণিত যে নবীপাক (ছাঃ) বলেছেন যখন বান্দা নিজের অন্তরের অন্তস্থল থেকে আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করেন তখন আল্লাহপাক তার তওবাকে কবুলকরে থাকেন।" অনুরূপ আরও একটি হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করেছেন- "যদি তুমি আসমানের তারকা পরিমাণ গোনাহ করে শরমিন্দা বা লজ্জিত অর্থাৎ অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ পাকের নিকট অবনত মস্তকে নিজের গোনাহর কথা স্মরণ করে তওবা এস্তেগফার বা মাফি চাও তাহলে আল্লাহপাক তোমার তওবা কবুল করে নেবেন"।

শবে বরাতের আর এক নাম শবেবিদারী

        হজরত আল্লামা ইমাম সুবকী (রহঃ) শবেবরাত সম্পর্কে বলেছেন "লাইলাতুল বরাত এমন একটি রজনী যাহা সারা বৎসরের গোনাহ কাফফারা স্বরূপ বিনাশ হয়ে থাকে।" অর্থাৎ উক্ত রজনীতে জাগ্রত থাকিয়া এবাদাতে এলাহিতে নিমগ্ন থাকা ওগোনাহর কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করার নাম শবে বিদারী।

Post a Comment

0 Comments