হজরত আল্লামা পীরে কামেল মুকতীয়ে বাংলা ও আসাম মেজলা হুজুর কিবলা (রহঃ) মধ্যম সাহেবজাদা হজরত আল্লামা পীর কুতুবউদ্দিন সিদ্দিকী সাহেব (মুদ্দাঃ) নসীহাতুন্নাবী কিতাবের ২৬ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে। হজরত আয়েশা সিদিকা (রাঃ) 'হইতে বর্ণিত আছে, "শাবানের রাত্রে রসুলুল্লাহ (দঃ) আমার গৃহেই তশরীফ আনিয়া পরনের দুইখানা কাপড় খুলিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে উহা না খুলিয়াই আবার পরিয়া? বাহিরে চলিয়া গেলেন। আমার ভয়ানক ঈর্ষা হইল, আমি ভাবিলাম বোধ হয় তিনি আবার অন্য কোন সতীনের ঘরে তশরীফ লইবেন। আমি হজরত (দঃ) কে বাকিয়েগারকদ (মদীনার কবরস্থানে) পাইলাম তিনি ঈমানদার নরনারী ও শহীদদিগের জন্য দোওয়া করিতেছিলেন। আমিইঁহা দেখিয়া বলিলাম আমার মাতা পিতা তাহার প্রতি কুরবান হউক, তিনি তো আল্লহ তায়লর কার্য্যে লিপ্ত আছেন, আর আমি দুনিয়ার কার্য্যে লিপ্ত আছি” (মাসাবাত দ্রষ্টব্য)
এশবাউল কালামে বর্ণিত আছে, "হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রঃ) বলেন একদা হজরত নবী করীম (সাঃ) রাত্রে উঠিয়া নামায পড়িতে লাগিলেন। খুরি দেরী করিয়া সাজদায় থাকায় একেবারে নড়াচড়া না করায় আমার মনে সন্দেহ হইল বোধ হয় হজরত (দঃ) এন্তেকাল করিয়াছেন। যখন এইরূপ অবস্থা দেখিলাম তখন আমি তাঁহার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীখানি নাড়া দিতে লাগিলাম ইহাতে হজরত একটু নড়িয়া উঠিলেন পরে আমি নিজস্থানে যাইলাম, তিনি সাজদা হইতে মাথা উঠাইয়া নামায শেষ করতঃ বলিলেন, "হে আয়শা। তুমি কি মনে ভাব তোমার নিকট যাহা আপত্তির হইয়াছে উহা হইবে, 'আমি তখন বলিলাম না ইয়া রসুলুল্লাহ (সাঃ) খোদার কসম দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সাজদা অবস্থায় দেখিয়া আমার মনে সন্দেহ হওয়ায় ঐরূপ করিয়াছি।" তখন হজরত (সাঃ) বলিলেন "তুমি কি জান এই রাত্রিটি কি?" আমি বলিলাম, "আল্লাহ ও তাঁহার রসুল ভাল জানেন।" হজরত (সাঃ) বলিলেন, "অদ্য শা'বান মাসের মধ্য রাত্রি (অর্থাৎ ১৫ ই তারিখ শবেবরাত), আল্লাহ তায়ালা এই রাত্রে বাহির 'হইয়া থাকেন এবং যাহারা মাফ চাহে তাহাদের প্রতি মাফ করিবেন। যাহারা রহমত চাহে তাহাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করিবেন। (বায়হাকী হইতে উদ্ধৃত মাসাবাতা দ্রষটব্য)।
দেওবন্দী হজরত মাওঃ অশ্রাফ আলী থানভী (রহঃ) এঁর উক্তি
১। হাদীস:- হাদীশ শরীফে বর্ণিত আছে, শা'বানের চাঁদের ১৫ রাত্রে (অর্থাৎ ১৪দিবাগত রাত্রে) সারা বৎসর হায়াত, মওত, রিযিক ও দৌলতলেখা হয় এবং ঐ রাত্রে বান্দাগণের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। হজরত নবী করীম (সাঃ) স্বীয় উম্মতগণকে উপদেশ দিয়েছেন শা'বানের চাঁদের ১৫রাত্রে তোমরা জাগরিত থাকবে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোজা রাখবে। কেননা, ঐ রাত্রে বান্দাগণের প্রতি আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমতের দৃষ্টি হয়। এমনকি, আল্লাহ পাক সূর্যাস্তের পর, হতে সোবহে সাদেক পর্যন্ত দুনিয়ার আকাশে এসে দুনিয়াবাসীদের জন্য ঘোষণা করতে থাকেন যে, তোমাদের মধ্যে যার গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার প্রয়োজন থাকে মাফ চেয়ে নাও। আমি মাফ করার জন্য প্রস্তুত আছি। তোমাদের মধ্যে যার রিযিকের দরকার থাকে, রিযিক চেয়ে নাও, আমি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। তোমাদের মধ্যে যার রোগ আরোগ্য বা বিপদ হতে মুক্তি চেয়ে নেয়ার প্রয়োজন থাকে চেয়ে নিবে। আমি রোগ আরোগ্য করার এবং বিপদ হতে মুক্তি দেবার জন্য প্রস্তুত আছি। এরূপে বান্দাদের এক এক অভাবের নাম নিয়ে আল্লাহ পাক সোবহে সাদিক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন। রাহমানুর রাহীম আহকামুল হাকিমিনের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণার সুবর্ণ সুযোগ যারা হেলায় হারায় বরং আতশবাজি (বোমবাজি) ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদি করে যারা পাপের আগুন বাড়ায় তাদের চেয়ে 'হতভাগা বদনছীব আর কে আছে? হাদীস শরীফে এও বর্ণিত আছে যে, হযরত নবী করিম (সাঃ) এ রাত্রে কবরস্থানে গিয়ে মৃত মুসলমানদের জন্য দো'আয়ে মাগফেরাত করতেন। কাজেই এ রাত্রিতে যদি কিছু দান খয়রাত করে বা কিছু নফল নামায বা আল্লাহর কালাম পড়ে তার সওয়াব মৃতদের বখশিয়া দেওয়া হয় এবং তাদের মুক্তি ও মাগফেরাতের দো'আ করা হয় তবে তা অতি উত্তম। এছাড়া অতিরিক্ত বাতি জ্বালিয়ে • বা আতশবাজি পোড়ানো আমোদ-উৎসব করা ইসলামী তরীকার বিরূদ্ধ কাজ। হজরত নবীকরীম (সাঃ) এটাও বলেছেন 'শিরক্ করা' আত্মীয়দের সাথে অসদ্ব্যবহার করা এবং মুসলমানে মুসলমানে পরঃপর শত্রুতা পোষণ করা এ তিন প্রকার গোনাহ্ ছাড়া অন্যান্য গোনাহ্ আল্লাহ্ পাক মাফ করেদেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, যাদুকর, নজুমী, বখীল, নেশাখোর, লাওয়াতাত কারী এবং পিতামাতার অবাধ্য সন্তানব্যতীত অন্য সকলের গোনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বেহেশতীজেওর)
0 Comments