শবে-বরাত ও কুসংস্কার

        বর্তমানে কিছু মানুষ শবেবরাতের সময় ঘরের বাসন-কুষণ পরিবর্তন করা, ঘরলেপা অর্থাৎ সারা বৎসরে একটি বারও উক্ত ঘর লেপা মোছা করল না, অথচ যেই শবে-বরাতের সময় আসল তখন তাদের ঘরলেপার হিড়িক পড়ে যায়। যেন মনে হয় ঘর বাড়ী না লেপলে শবে-বারাত পালনই হবে না, এযেন একটি অপরিহার্য্য বিষয়। তবে হ্যাঁ ঘর বাড়ী উঠান, ইত্যাদি পাক ছাফ বা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সর্ব সময় উচিত এবং কিছু লোক এই রাতে অতিরিক্ত মোমবাতি জ্বালিয়ে, ধূপ বাতি • জালিয়ে থাকে। যথা কবরস্থানে, গোলার গায়ে, রাস্তাঘাটে, মসজীদের চারীপাশে, বাড়ী ঘরে ইত্যাদি জায়গায় অর্থের অপচয় করে থাকে। ইহা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী কাজ বা হারাম। এজাতীয় রসুম কাফেরী রীতির অনুরূপ। আর হাদিসে বিজাতীয়দের অনুকরণ হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে এই রূপ কার্য হিন্দু ধর্মের কালিপূজা বা দেওয়ালীর রাতের অনুকরণ হয়।

        অতএব আতশবাজীও এ ধরণেরই একটা অশুভ প্রথা। এতেও অনেক 'অপকারিতা রয়েছে। এক অর্থের অপচয় যা কোরাণ মজীদের স্পষ্ট নির্দেশ মোতাবেক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

        দুই- এতেকরে নিজের, সন্তান-সন্ততির ও পাড়া পড়শীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে অনেক সময়। আতশবাজী করে হাত নষ্ট হওয়া, মুখ পোড়া, পোশাকে আগুন লাগা ইত্যাদি কতশত ঘটনা ঘটেছে। এ ধরণের আত্মধ্বংসী ক্রিয়াকলাপকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা কোরান মজীদে বলেন- 'তোমরা নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। এই কারণেই বিনা প্রয়োজনে আগুন নাড়াচড়া করা এবং আগুনের নিকট গমন করা হাদীস অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তেমনিভাবে, উন্মুক্ত আগুন আর জ্বলন্ত বাতি কাছে রেখে ঘুমাতে নিষেধ করা হয়েছে।

      *তিন - আতশবাজীর একটা অন্যতম উপাদান হিসাবে কাগজ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিদ্যাশিক্ষার উপকরণাদির সাথে অসদাচরণ করা যে অত্যান্ত মন্দ কাজ তা আমরা পূর্বেই উলেখ করেছি। আরো তাজ্জব ব্যাপার হচ্ছে, লেখা কাগজ এমনকি কোরান হাদীসের পাতা পর্যন্ত এ কাজে ব্যবহার করতে তারা মোটেও দ্বিধাবোধ করে না। জনৈক বিশ্বস্ত ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছে 'আমি কোরাআন শরীফের পাতা দিয়ে প্রস্তুতকৃত খেলনা দেখেছি।'

    চার- এতে করে শিশুদেরকে জীবনের প্রারম্ভ থেকে পাপ কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, অথচ আল্লাহ রসুলের আইন শিশুদেরকে শৈশবেই ইলম ও আমলের প্রশিক্ষণদানের নির্দেশ দিয়েছে। এ যেন খোদায়ী বিধানের সাথে বিদ্রোহ। বিশেষ করে "শবেবরাতের" ন্যায় বরকতময় রাতে আতশবাজীকে যেন পূণ্য তালিকার শীর্ষে স্থান দেয়া হয় একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পূণ্যময় মুহূর্তগুলোতে ইবাদত বন্দেগী করা যেমন অত্যাধিক পূণ্যলাভের উপায় সেইক্ষণে পাপ কাজ করলে গোণাহও তেমনি বেশী হয়ে থাকে।

    পাঁচ বর্তমানে কিছু মানুষের ধারণা হল শবেবরাত মানেই হল হালুয়া 'রুটি। অর্থাৎ হালুয়া রুটি না হলে যেন শবে-বরাতই হলো না। এরাতে হালুয়া রুটি তৈরী করাকে অতীব জরুরী মনে করে। ঐ সমস্ত লোকজন আক্বীদাগত ভ্রান্তিতে পতিত হয়। এবং বর্তমান সমাজের কিছু মানুষের ধারণা এরকম যে, শবে-বরাতে যে করেই হোক হালুয়া রুটি প্রস্তুত করতেই হবে, নতুবা শবে-বরাত পালিত হবে না এবং লোকে মন্দ বলবে। এই নিয়েতে খরচ করা অপব্যয় ও অহংকার; সুতরাং তাই তা পাপে গণ্য হয়।

    তবে হ্যাঁ শবে-বরাতের দিনে বা রাতে নেকি বা সওয়াবের নিয়তে মৃত আত্মীয়দের রুহের কল্যাণের জন্য ফকির মিসকীনকে দান খয়রাত করার নিয়তে হালুয়া রুটি প্রস্তুত করে থাকে তাহলে অবশ্যই তা জায়েজ। এবং তখন উহা একটি ভাল পন্থা বলে গণ্য হয়। সুতরাং দান সম্পর্কে হাদীস শরীফে বহু বর্ণনা আসিয়াছে, যথা বান্দা রুটির একখানি টুক্রা (এক মুষ্টি চাউল বা ভাত) দান করলে আল্লাহ পাক তা সন্তুষ্ট হয়ে গ্রহণ করেন এবং তাকে অনবরত বাড়িয়ে দিতে থাকেন। এমনকি, একটুক্রা রুটি ওহোদ পাহাড়ের সমান হয়ে যায়। অর্থাৎ ওহোদ পাহাড়ের লমান  রুটি দান করলে যত সওয়াব হবে, খালেছ নিতে এক টুকরো রুটি দান করলেও আল্লাহপাক দয়া করে তত সওয়াব দান করবেন। কাজেই কম বেশির প্রতি লক্ষ্য। করবেন না, যা সম্ভব হয় দান করবেন।

        হাদীস শরীফে আর আছে হজরত রাসুলুল্লহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা খোরমার। এক টুকরা দান করে হলেও তা দিয়ে দোযখের আগুন হতে রক্ষা পাবার চেষ্টা কর। 'অর্থাৎ, অল্প জিনিস বলে তুচ্ছ করবে না যখন যা থাকে তাই দান করো নিয়ত ঠিক হলে অল্প জিনিসেও দোযখ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। (কানন্যোল উম্মাল, বেহেস্তী। জেওর)

    প্রশ্ন- শবেবরাতে প্রত্যেক বাড়ীতে কোরাণ পড়িয়া পয়সা চাহিয়া লওয়া জায়েজ হইবে কিনা?

        উত্তর:- কোরাণ বিশুদ্ধ ভাবে পড়িয়া, উহার ছওয়াব মৃতদেররুহে পৌঁছাইবে, বেতন লওয়ার নিয়ত করিবে না, "নিজের সময় ব্যায় করার পারিশ্রমিকগ্রহণ করিবে, ইহাতে দোষ হইবে না।"

    প্রশ্ন- অর্ধ শা'বানের রাতটি ভাগ্যরজনী নামে নামকরণ কি বিদয়াত?

       উত্তর না, অর্ধ শা'বানের রাতটিকে 'ভাগ্য রজনী' নামে নামকরণ করা। বিদয়াত নয়। বরং তা সম্পূর্ণভাবে কুরাণ সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত। আর শরীয়ত সম্মত কোন বিষয়কে বিদয়াত বলা শক্ত গুণাহের অন্তর্ভূক্ত। মুসলমান হয়ে এরূপকথা বলতে পারে না।

        প্রকাশ থাকে যে, শা'বানের অর্ধ রাত্রি তথা শবেবরাত সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক 'সুরা দুখান' এর ৪নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেছেন, 'ফিহা ইফরাকু কুল্লু আমরীন হাকিম"

        অর্থাৎ "এটি এমন এক রাতে যে রাতে সমস্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফয়সালা করা হয়"। উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

        অর্থাৎ- "বরাতের রাতে ফয়সালা করা হয় কতজন সন্তান এক বৎসরে জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যু বরণ করবে। এরাত্রিতে বান্দাদের আমল (আল্লাহপাক এর নিকট) পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফয়সালা করা হয়।" (বাইহাক্বী, মিশকাত)।

        কাজেই আল্লাহ পাক যেহেতু বলেছেন, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফয়সালা করা হয়। আর আল্লাহ পাক এর হাবীব হুজুর পাক (সাঃ) ও যেহেতু বলেছেন যে, শবে বরাতেররাতেই সকল বিষয় যেমন হায়াত মউত, রিযিক ইত্যাদি যা কিছু। মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় এবংআমলনামারও ফয়সালাকরা। হয়। সেহেতুবলার অপেক্ষা রাখে না যে, নিঃসন্দেহে শা'বানের অর্ধ রাতটি 'লাইলাতুল' 'কিসস্মাতি তথা ভাগ্য রজনী। যে প্রসঙ্গেকিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

        অর্থঃ- অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবেরাতের নাম সমুহের মধ্যে একটি নাম। হচ্ছে লাইলাতুল কিসমাতি বা ভাগ্যরজনী এ কারণে যে, এ রাত্রিতে রিযিক সমূহ ও তকদীর বা ভাগ্য নির্ধারণ বণ্টন ও ফায়সালা করা হয়। যেমন আল্লাহ পাক তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ এ মুবারকরাত্রিতে ফায়সালা করেন।

        হজরত আত্মা ইবনে ইয়সার (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন অর্ধ শা'বানের রাত্রিতে মালাকুল মউত হজরত আজরাইল (আঃ) কে ঐ সকল ব্যক্তির নামের একটা অনুলিপি বা তালিকা দান করা হয় যার এক শা'বান থেকে আর এক শা'বানের মধ্যে ইন্তেকাল করবে। এরপরও সে ব্যক্তিরা জুলুম করে, পাপ করে, বিবাহ করে, গাছ রোপণ করে অথচ তাদের হায়াত থেকে মউতের তালিকা প্রদান • করা হয়েছে। আর লাইলাতু কদরের পর এমন কোন রাত নেই যে রাতটি শবেবরাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

        হজরত আতা ইবনে ইয়াসার (রহঃ) হতে অপর এক রেওয়ােেত বর্ণিত রয়েছে, মধ্য শা'বনের রাত্রিতে মালাকুল মউত হজরত আজরাইল (আঃ) কে একখানা ছহীফা প্রদান করা হয় অতঃপর তাঁকে বলা হয় ঐ সকল লোকের রুহ কবজ করুন যাদের 'নাম এ ছহী ফার মধ্যে রয়েছে। আর নিশ্চিতভাবে সে বান্দারা গাছ রোপণ করে, বিবাহ শাদী করে, অট্টালিকা নির্মাণ করে অথচ তাদের নাম মও তের জন্য তালিকাভূক্ত হয়ে গেছে। আর মালাকুল মউত আদেশের অপেক্ষা করছেন, আদেশ হওয়া মাত্রই • তিনি তাদের রূহ কবজ করবেন।

        অপর বর্ণনায় রয়েছে, ইন্তেকালের মিয়াদ কর্তন ক'রে দেওয়া হয় এক শা'বান থেকেপরবর্তী শা'বান পর্যন্ত। তারপরও সে ব্যক্তি বিবাহ শাদী করে এবং তার থেকে সস্তানাদি জন্মগ্রহণ করে অথচ তার নাম ইন্তিকালের খাতায় চলে গেছে।

        হজরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সমস্ত ফায়সালাকৃত বিষয়সমূহ শা'বানের মধ্যরাতে ফয়সালা করেন এবং এর প্রতিপালনকারী কদরের প্রতি অর্পণ করেন।

        স্মরণীয়, শা'বানের মধ্য রাতটির বহু ফাযায়িল ফযীলত, মর্যাদা মর্তবার কথা বর্ণিত রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত রাতকে কেবল যে 'ভাগ্যরজনী' হিসেবেই নামকরণ করা হয়েছে তা নয়। বরং বেশ কিছু নামে রাতটির নাম করণ করা হয়েছে। যা কুরাণ • শরীফ, হাদীস শরীফ সহ বিভিন্ন কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে কতিপয় নাম পেশ করা হলো-

    ১) আললাইলাতুল মুবারকাতু (বরকতময় রজনী)

    ২) লাইলাতুল কিস্সতি- (ভাগ্য রজনী)

    ৩) লাইলাতুত্ তাকফীরি- (গুণাহ ক্ষমা বা কাফফারার রাত্রি)

    ৪) লাইলাতুল ইজাবাতি (দুয়া কবুলের রাত্রি)

    ৫) লাইলাতুল বারাআতি (মুক্তির রাত্রি)

    ৬) লাইলাতুত তাজবীযি (বিধান সাব্যস্ত করার রাত্রি)

    ৭) লাইলাতুল গুফরানি (ক্ষমা প্রাপ্তির রাত্রি)

    ৮) লাইলাতুল ইনযালির রহমাতি (রহমত নাজিলের রাত্রি)

    ৯) লাইলাতুত্ তাওবাতি (তওবা কবুলের রাত্রি)

    ১০) লাইলাতুম্ যিয়ারাতি (কবর জিয়ারতের রাত) ইত্যাদি

    প্রশ্ন:- অর্ধ শা'বানের রাতে কবর যিয়ারত করা নাকি বিদয়াত?

    'উত্তরঃ-না, শা'বানের রাতে কবর যিয়ারত বিদয়াত নয় বরং সুন্নত। সুন্নতকে বিদয়াত বলা চরম গুমরাহী। উল্লেখ্য, অর্ধ শা'বানের রাতটি বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, (লাইলাতুয যিয়ারতি) অর্থাৎ কবর যিয়ারতের রাত।

    মূলতঃ অর্ধ শা'বানের রাতে যিয়ারত করা হয় বলেই এ রাতকে যিয়ারতের রাত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ রাতে যিয়ারত করা খাছ সুন্নতে রসুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এঁর অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গেহাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে।

    "যে হজরত আয়িশা ছিদ্দীকা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক এর হাবীব, হজরত নবী পাক (সাঃ) এঁর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। একসময় তাঁকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন আহলিয়ার ঘরে গেছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে তাঁকে জান্নাতুল • বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ্ পাক এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ? করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, তুমি কি মনে করেছ, আল্লাহপাক ও তাঁর রসুল (সাঃ) তোমার সাথে আমানতের খিলাফ করেছেন। আমি বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ (সাঃ) আমি • ধারণা করেছিলাম যে, অপনি হয়তো আপনার অপর কোন আহলিয়ার নিকটে গেছেন। অতঃপর হযুর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি আসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক 'শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী ক্বালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

    উপরোক্ত হাদীস শরীফে স্বয়ং আল্লার নবী (সাঃ) শা'বানের অর্ধ রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানে গিয়ে উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাদের জন্য দুয়া করেছেন। কাজেই অর্ধ শা'বানের রাতে কবর যিয়ারত করা খাছ সুন্নতে রসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম।

    প্রশ্ন:- হালুয়া রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা এবং বিলি করা নাকি বিদয়াত?

    উত্তর- বিদয়াত নয়, শবে বরাতে হালুয়া রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা বিদয়াত ও নাজায়েজ কোনটিই নয়। শবেবরাত উপলক্ষ্যে বিশেষ করে আমাদের দেশে ও আশপাশের দেশ সমূহে যে রুটি হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

    উল্লেখ্য, প্রত্যেক আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদপ্রথার অনুসরণ করা জায়েজ নেই।

    এখন মাসয়ালা হচ্ছে কেউ যদি শ'বে বরাত উপলক্ষ্যে রসমরেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয।

    শুধু তাই নয় বরং যদি কেউ তার নিজের ইবাদত বন্দেগীর ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া রুটি বা গোস্ত রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্য সমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই নেকীর কারণ হবে।

    হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, "যে হজরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক- এঁর রসুল সাইয্যিদুল মুরসালিন হুজুর পাক (সাঃ) 'ইরশাদ করেন, হে লোক সকল তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্ দারিমী)

    তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো উল্লেখ্য যে খাদ্য বিতরণ যেন আত্মীয় স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।

    অতএব প্রমাণিত হলো যে, সবে বরাতে লোকদের ইবাদত বন্দেগী ও রোযা পালনের সবিধার্থে হালুয়া রুটি ও রকমারী খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্পূর্ণ রূপে কুরান ও সুন্নাহ সম্মত।

    কাজেই মুসলমানগণকে কথা বলতে হলে যবান সামলিয়ে কথা বলতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে, কোন ভাবেই যেন তার দ্বারা কুফরীমূলক আমল বা বক্তব্য সংঘটিত না হয়। যদি হয় তাহলে যে মুমিন মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে এবং পরিণামে সে আযাব গজবে গ্রেফতার হয়ে যাবে। (আলবাইয়্যেনাত)

Post a Comment

0 Comments