বিচার দিবস হিসাব গ্রহণ ও প্রতিফল লাভের দিন

        সূরা ফাতিহার তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি বিচার দিবসের অধিপতি। বিচার দিবস বলতে 'ইয়াও মিদ্দীন' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় 'দ্বীন' শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শক্তি-ক্ষমতা, শাসন-কর্তৃত্ব, অন্যকে আইন পালন করতে বাধ্য করা এবং তার ওপরে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করা, কাউকে নিজের দাসে পরিণত করে আদেশ পালনে বাধ্য করা, কোন ক্ষমতাসীনের পক্ষ থেকে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও আধিপত্য বিস্তার করা, আনুগত্য- দাসত্ব এবং ক্ষমতাসীনের সামনে আনুগত্যের মাথানত করে দেয়া, এমন নিয়ম-নীতি যা মেনে চলা হয়, প্রতিদান দেয়া, প্রতিফল দান করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সূরা ফাতিহার তৃতীয় আয়াতে 'দ্বীন' শব্দটি হিসাব-নিকাশ গ্রহণের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রতিফল, প্রতিদান বা বিনিময় দেয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

        এই 'দ্বীন' শব্দ দিয়েই আরবী ভাষায় গোটা জাতির জীবন পদ্ধতি বা জীবনাদর্শকে বুঝানো হয়ে থাকে। হযরত মুছা আলাইহিস্ সালাম যখন ফেরাউন ও তার জাতির কাছে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, তখন ফেরাউন তাঁকে নানা ধরনের হুমকি দেয়া শুরু করেছিল। আল্লাহর রাসূলকে সে বলেছিল, তুমি যদি এই আদর্শ প্রচার থেকে বিরত না হও, তাহলে তোমাকে আমি কারারুদ্ধ করবো। পক্ষান্তরে হযরত মুছা আলাইহিস্ সালাম আল্লাহর নির্দেশে তাঁর কাজ তিনি চালিয়ে যেতেই থাকলেন। তখন ফেরাউন তার সরকারের উচ্চ মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ডেকে যা বলেছিল, সূরা মুমিনে তা এভাবে এসেছে-

وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِي أَقْتُلْ مُوسَى وَلَيَدْعُ رَبَّهُ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُبَدِّلَ دينَكُمْ أَو أَنْ يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ

        আমাকে ছাড়ো, আমি এই মুছাকে হত্যা করবো। সে তার রব্বকে ডেকে দেখুক। আমার আশঙ্কা হয়, সে তোমাদের দ্বীনকে পরিবর্তন করে দিবে অথবা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

        ফেরাউন আল্লাহর নবী হযরত মুছা আলাইহিস্ সালামের ভয়ে এমনিতেই কম্পমান ছিল। স্বৈরাচার ক্ষমতা হারানোর দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়েও ভয় আর আতঙ্ক গোপন করে যেমন আস্ফালন প্রদর্শন করতেই থাকে, তেমনি ফেরাউনের মতো স্বৈরাচারী জালিমও আতঙ্ক গোপন করার উদ্দেশ্যে তার জাতিকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করছিল যে, সে মুছাকে হত্যা করতে সক্ষম। তার উপদেষ্টারা মুছাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে বলেই মুছাকে সে হত্যা করছে না। নতুবা সে মুছাকে হত্যা করেই ছাড়তো। এ জন্যই সে দম্ভোক্তি করে বলেছিল, 'আমাকে ছাড়ো, আমি এই মুছাকে হত্যা করবো'।

        আসলে আল্লাহর রাসূলের গায়ে হাত উঠানো যে কোনক্রমেই সম্ভব নয়, এ কথা সে ভালোভাবেই বুঝেছিল। এ জন্যই সে হযরত মুছা আলাইহিস্ সালামের বিরুদ্ধে গোটা জাতিকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য বলেছিল, এই মুছা তোমাদের 'দ্বীন'কে পরিবর্তন করে দিবে অর্থাৎ যে চিন্তা-চেতনার ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হচ্ছে, জাতি যে আদর্শ অনুসরণ করছে, যে সভ্যতা-সংস্কৃতি দেশে প্রচলিত রয়েছে, যে পদ্ধতিতে জাতি ধর্ম পালন করছে, যে পদ্ধতিতে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালিত হচ্ছে, তা মুছা পরিবর্তন করে তার ওপরে যে আদর্শ অবতীর্ণ হয়েছে বলে সে দাবি করছে-সেই আদর্শ অনুসারেই সে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে শুরু করে জাতির প্রত্যেক ব্যক্তির ঘরের পরিবেশ পরিচালিত করবে। সে বিপ্লব সংঘটিত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

        বিচার দিবসে অবিশ্বাসী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী ও দলীয় প্রধানগণ কল্পিত 'চেতনার' ধুয়া তুলেই প্রতিটি যুগে মহাসত্য গ্রহণ থেকে জাতিকে বিরত রাখার অপচেষ্টা করেছে। তথাকথিত চেতনা ব্যবসায়ী স্বার্থন্বেষী অসৎ রাজনীতিবিদগণই প্রতিটি যুগেই জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে এবং ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে জাতিকে ক্ষেপিয়ে তোলার হীন প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের ভেতরে তারা নিজেদের অবধারিত ধ্বংস দেখে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে জাতির সাথে এভাবে ধোকাবাজি করেছে যে, 'অমুক ব্যক্তিকে বা দলকে ভোট দিলে অথবা ক্ষমতায় আসতে দিলে অমুক চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে। জাতি স্বাধীনতা হারাবে।' এভাবেই স্বৈারাচারী গোষ্ঠী প্রতিটি যুগেই মানুষকে বিভ্রান্ত করে সত্য গ্রহণের পথে বাধার সৃষ্টি করেছে।

        সূরা মুমিনের উল্লেখিত আয়াতে যে দ্বীন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেই দ্বীন বলতে একটি পরিপূর্ণ আদর্শ, জীবন ব্যবস্থা ও জাতীয় দর্শন বুঝায়। এই দ্বীন শব্দটি পবিত্র কোরআনে বহুস্থানে বিচার দিবস, বিনিময়, প্রতিফল বা প্রতিদান দিবস হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে সূরা যারিয়াতের ৫-৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَصَادِقٌ وَإِنَّ الدِّينَ لَوَاقِع

        প্রকৃত বিষয় হলো, তোমাদেরকে যে ব্যাপারে অবহিত করা হচ্ছে (অর্থাৎ মৃত্যুর পরের জীবন) তা নিশ্চয়ই বাস্তব ও যথার্থ। কর্মের প্রতিফল অবশ্য অবশ্যই দেয়া হবে।

        উক্ত আয়াতে 'দ্বীন' শব্দ প্রতিফল বা বিনিময় দেয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীতে যারা আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে জীবন-যাপন করতো, তাদেরকেও বিনিময় দেয়া হবে, আর যারা পরকালকে অবিশ্বাস করে পৃথিবীর জীবনকেই প্রথম ও শেষ মনে করতো এবং এই ধারণার ভিত্তিতেই এয়া জীবন পরিচালিত করতো তাদেরকেও বিনিময় দেয়া হবো। মৃত থেকে কিভাবে জীবিত হচ্ছে গোটা সৃষ্টিজগৎ ব্যাপী অসংখ্য নিদর্শন দেখেও এরা পরকাল সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করে। পরকালের ব্যাপারে এদের ধারণা সম্পর্কে সূরা সাফফাতে আল্লাহ বলেন-

إِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا وَ إِنَّا لَمَبْعُوثُونَ أَوَآبَاؤُنَا الأوَّلُونَ قُلْ نَعَمْ وَأَنْتُمْ دَاخِرُونَ

        আমরা যখন মরে একেবারে মাটি হয়ে যাবো এবং থেকে যাবে শুধু হাড়ের পিঞ্জর তখন আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে, এমনও কি কখনো হতে পারে? আর আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকেও কি উঠানো হবে? এদেরকে বলো, হ্যাঁ-এবং তোমরা অসহায়।

        তোমরা অসহায়-বলতে বুঝানো হয়েছে যে, তোমাদের কোন শক্তিই নেই। সমস্ত শক্তির একচ্ছত্র অধিকারী হলেন আল্লাহ। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে সক্ষম। আকাশ ও যমীন সৃষ্টি করা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা তোমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজই আমার একটি মাত্র আদেশে সংঘটিত হয়। আর আমি যা করতে ইচ্ছুক, এ ব্যাপারে তোমরা এতটাই অসহায় যে, আমার ইচ্ছা বাস্তবায়নের কাজে তোমরা কোন আপত্তিই করতে পারো না। কিভাবে সেই বিচার দিবস সংঘটিত হবে এবং তোমরা তখন কি বলবে শোন-

فَإِنَّمَا هَيَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ يَنْظُرُونَ - وَقَالُوا يَوَيْلَنَا هَذَا يَوْمُ الدِّينِ - هذَا يَوْمُ الفَصْلِ الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ

        শুধুমাত্র একটি বিকট ধমক দেয়া হবে এবং সহসাই এরা নিজের চোখে (পরকালের ঘটনাসমূহ) দেখতে থাকবে। সে সময় এরা বলবে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, এতো প্রতিফল দিবস-'এটা সে ফায়সালার দিন যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে'। (আস্ সা-ফফ্ফাত-১৯-২১)

        পৃথিবীতে মানুষ যেভাবে ঘুমিয়ে থাকে, মৃত মানুষগুলো সেই অবস্থাতেই থাকবে। মহান আল্লাহর আদেশে এমন ধরনের ভয়াবহ শব্দ করা হবে যে, সমস্ত মানুষগুলো একযোগে উত্থিত হবে। সমস্ত ঘটনাবলী তারা নিজেদের চোখে যখন দেখবে, তখন আর সন্দেহ থাকবে না যে, এটাই সেই দিন, যেদিনের কথা নবী-রাসূল, আলেম-ওলামা পৃথিবীতে বলেছে। তখন তারা পরস্পরে বলবে অথবা নিজেদেরকেই শোনাবে, এই দিনটি সম্পর্কে তোমরা মিথ্যা ধারণা পোষণ করতে। কত বড় হতভাগা তোমরা, যে পুঁজি থাকলে আজকের এই দিনে মুক্তিলাভকরা যেতো, সে পুঁজি তো আমাদের নেই।

        উল্লেখিত আয়াতেও 'ইয়াও মুদ্দিন' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং যার অর্থ প্রতিফল দিবস। ইবলিস শয়তান যখন আল্লাহর আদেশ পালন না করে বিতর্ক করেছিল, তখন আল্লাহ তাকে বলেছিলেন-

وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ

        প্রতিদান দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার অভিশাপ। (সূরা সা-দ-৭৮)

        এ আয়াতেও ইয়াও মিদ্দীন শব্দ ব্যবহার করে প্রতিদান দিবসকেই বুঝানো হয়েছে। সূরা ইনফিতারে তিনটি আয়াতে ঐ একই শব্দ ব্যবহার করে বিচার দিবস তথা প্রতিফল দিবসকে বুঝানো হয়েছে। বিচার দিবসে বিদ্রোহীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং সেখান থেকে তারা মুহূর্ত কালের জন্যও বের হতে পারবে না। ঐ দিনটির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য সূরা ইনফিতারের ১৫-১৯ নং আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা প্রশ্নাকারে বলেছেন-

يَصْلُّونَهَا يَوْمَ الدِّينِ وَمَا هُمْ عَنْهَا بِغَائِبِينَ وَمَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ ثُمَّ مَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِنَفْسٍ شَيْئًا - وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لله

        বিচারের দিন তারা তাতে (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে এবং জাহান্নাম থেকে কক্ষণই অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। আর তুমি কি জানো, সেই বিচারের দিনটি কি? আবার (প্রশ্ন করি) তুমি কি জানো সেই বিচারের দিনটি কি? সেটা ঐ দিন, যখন কারো জন্য কিছু করার সাধ্য কারো থাকবে না। সেদিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই ইখতিয়ারে থাকবে। পৃথিবীতে মানুষের অবস্থা হলো, এদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করে। অর্থ, ক্ষমতা আর প্রভাব-প্রতিপত্তির ফলে অপরাধ করেও সমাজে সম্মান ও মর্যাদার আসন দখল করে বসে থাকে। বিচার পর্বের কাজে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে। ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে সুপারিশ করিয়ে জেল-জরিমানা থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু বিচার দিবসে কেউ কারো পক্ষে সুপারিশ করার চিন্তাও করতে পারবে না। পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যে, প্রতিটি মানুষ নিজের চিন্তায় উন্মাদের মতই হয়ে পড়বে। ঘটনার আকস্মিকতা আর আসন্ন বিপদের গুরুত্ব অনুধাবন করে মানুষ মাতালের মতই হয়ে পড়বে। পৃথিবীতে যে একান্ত আপনজন ছিল, যাকে এক মুহূর্ত না দেখে থাকা যায়নি, তার দিকে তাকানোর প্রয়োজনও সে অনুভব করবে না। নিজে পৃথিবীতে যা করেছিল, তার কি ধরনের প্রতিফল সে লাভ করতে যাচ্ছে, এ চিন্তাতেই সে বিভোর হয়ে থাকবে আর মনে মনে বলতে থাকবে, আজকের এদিনটি যদি কখনো না হতো-তাহলে কতই না ভালো হতো। সূরা ইমরাণের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا - وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تَوَدُّلُوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بِعِيْدًا -

        সেদিন নিশ্চয়ই আসবে, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের কৃতকর্মের বিনিময় লাভ করবে, সে ভালো কাজই করুক আর মন্দ কাজই করুক। সেদিন প্রত্যেকেই এই কামনা করবে যে, এই দিনটি যদি তার কাছ থেকে বহুদূরে অবস্থান করতো, তাহলে কতই না ভালো হতো।

        অবিশ্বাসীরা বিচার দিবস সম্পর্কে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে। এরা বলে বিচার দিবস হবে কি হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং সন্দেহপূর্ণ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে নিজেকে বঞ্চিত করো না। সামনে যেভাবে যা আসছে, যা পাচ্ছো, তা ভোগ করে নাও। বিচার দিবসে এদেরকে যখন উঠানো হবে এবং যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, সে সম্পর্কে এরা কোনদিন কল্পনাও করেনি। অকল্পিত বিষয় যখন বাস্তবে দেখতে পাবে, তখন এরা নিজেদের নিকৃষ্ট পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করে তা থেকে মুক্তি লাভের আশায় কি করবে, এ সম্পর্কে আল্লাহ বলছে-

ولو أنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَ مِثْلَهُ لَأَفْتَدَوْا بِهِ مِنْ سُوء الْعَذَابِ يَوْمَ القِيمَةِ - وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُونُوا يَحْتَسِبُونَ - وَبَدَا لَهُمْ سَيِّاتُ مَا كَسَبُوا وَحَاقَ بِهِمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِءُونَ

        এসব জালিমদের কাছে যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদরাজি এবং তাছাড়াও আরো অতটা সম্পদ থাকে তাহলে কিয়ামতের ভীষণ আযাব থেকে বাঁচার জন্য তারা মুক্তিপণ হিসাবে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবে। সেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু তাদের সামনে আসবে যা তারা কোনদিন অনুমানও করেনি। সেখানে তাদের সামনে নিজেদের কৃতকর্মের সমস্ত মন্দ ফলাফল প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর যে জিনিস সম্পর্কে তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতো তা-ই তাদের ওপরে চেপে বসবে। (সূরা আয যুমার-৪৭-৪৮)

        বিচার দিবসের অপরিহার্যতা সম্পর্কে আল্লাহর কোরআন অসংখ্য যুক্তি উপস্থাপন করেছে। এমন একটি সময় অবশ্যই আসা উচিত যখন জালিমদেরকে তাদের জুলুমের এবং সৎ কর্মশীলদেরকে তাদের সৎকাজের প্রতিদান দেয়া হবে। যে সৎকাজ করবে সে পুরস্কার লাভকরবে এবং যে অসৎকাজ করবে সে শাস্তি লাভ করবে। সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি এটা চায় এবং এটা ইনসাফেরও দাবি। এখন যদি মানুষ দেখে, বর্তমান জীবনে প্রত্যেকটি অসৎলোক তার অসৎকাজের পরিপূর্ণ সাজা পাচ্ছে না এবং প্রত্যেকটি সৎলোক তার সৎকাজের যথার্থ পুরস্কার লাভ করছে না বরং অনেক সময় অসৎকাজ ও সৎকাজের উল্টো ফলাফল পাওয়া যায়, তাহলে মানুষকে স্বীকার করে নিতে হবে যে, যুক্তি, বিবেক-বুদ্ধি ও ইনসাফের এ অপরিহার্য দাবি একদিন অবশই পূর্ণ হতে হবে। সেদিনের নামই হচ্ছে বিচার দিবস বা আখিরাত। বরং আখিরাত সংঘটিত না হওয়াই বিবেক ও ইনসাফের বিরোধী। আল্লাহ বলেন-

لِيَجْزِيَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ أُولَئِكَ لَهُمْ مُغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ وَالَّذِينَ سَعَوْفِي أَيْتِنَا مُعْجِزِيْنَ أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مِنْ رَجْزِ أَلِيمٌ

        আর এ কিয়ামত এ জন্য আসবে যে, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে তাদেরকে আল্লাহ পুরস্কৃত করবেন, তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও সম্মানজনক রিফ। আর যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা সাবা-৪-৫)

Post a Comment

0 Comments