শবে বরাতের ফজিলত কি ?

        এরাত সম্পর্কে আল্লাহ পাক তার কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন "হা-মীম অলকিতা বিশ্ববীন ইন্নাআনযালনাহু ফি"হা মীম! (এটি হুরুফে মুক্কাত্ তায়াত। এর অর্থ আলাহ পাক ও তাঁর রসুল (সাঃ) বেতর জানেন এবং ঐ সকল বান্দা জানেন যাঁদেরকে আল্লাহ পাক, কিংবা আল্লাহ পাকের হাবীব নবী পাক (সাঃ) জানিয়েছেন) শপথ প্রকাশ্য কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি কুরাণ শরীফ নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাজিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক বরকতময় রাত্রিতে। নিশ্চয়ই আমিই ভীতি প্রদর্শনকারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয় ফয়সালা করা হয়। নিশ্চয়ই আমি প্রেরণকারী। আপনার রবের পক্ষ থেকে রহমত। নিশ্চয়ই তিনিই অধিক শোনেন এবং জানেন।" (সুরা দুখান)

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা:-

        "এ আয়াত শরীফ সম্পর্কে মুফাসসিরীন-ই কিরামগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মুফাসসির তথা জলিলুল কদর সাহাবী রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, অর্থ "মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ অর্থাৎ বরকতময় রাত্রি বলতে শা'বান মাসের মধ্যরাত অর্থাৎ শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আলাহ্ পাক এরাতে সকল প্রজ্ঞা সম্পন্ন বিষয়ের ফয়সালা করে থাকেন" (ছফওয়াতুত তাফসীর)।

        "নূজহাতুল মাজালিস” কিতাবে বর্ণিত আছে, একদা হজরত জিবরীল আমিন আলাইহিস সলাম ১৪ই শা'বান দিবাগত রাত্রিতে (শবেবরাতে) হজরত রসুলে পাক (সাঃ) এর নিকট আগমন করে বললেন, আয় আল্লাহর রসুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই রাত্রিতে জাগ্রত থাকিয়া ইবাদাত বন্দিগী করুন, কেননা এই রাত্রিতে বান্দার যাবতীয় (নেক) আরজু পূরণ করা হয়।

        অতঃপর হুজুর পাক (সাঃ) ইবাদত বন্দিগীতে মশগুল হয়ে গেলেন। হজরত জিবরীল (আঃ) পুনরায় এসে বললেন, আয় রহমতে আলম (ছাঃ) আপনি আপনার উম্মতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন যে, এই মুবারক রাত্রিতে আল্লাহ পাক রব্বুল 'আলামীন মুশরীক ব্যতীত আপনার সকল উম্মতকে ক্ষমা করে দিবেন অতঃপর হজরত জিরবাইল (আঃ) নবী (সাঃ) কে সম্বোধন করে বলেন, 'আপনি আপনার মাথা মুবারক উত্তোলন করুন।' তিনি মাথা মুবারক উত্তোলন করে দেখতে পেলেন, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্য বর্ণনায় আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়েছে এবং প্রথম দরজার ফেরেশতাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, ঐ সকল লোকদের জন্য সুসংবাদ যারা এ রাত্রিতে রুকু করবে। দ্বিতীয় দরজার ফেরেশতাগণ উচ্চস্বরে ঘোয়ণা করছেন। এ রাত্রিতে যারা সিজদাকারী তাদের জন্য সুসংবাদ। তৃতীয় দরজার ফেরেশতাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, এ রাত্রিতে দোয়াকারীগণের জন্য সুসংবাদ। চতুর্থ দরজার ফেরেশতাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন এ রাত্রিতে আল্লাহ পাক এর ভয়ে ক্রন্দনকারীগণের জন্য সুসংবাদ। পঞ্চম দরজার ফেরেশতাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন, এ রাত্রিতে দান ছদকা ও অন্যান্য নেককাজ সম্পাদনকারীদের জন্য সুসংবাদ। ষষ্ঠদরজার ফেরেশতাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন কোন আবেদনকারী আছে কি? যার আবেদন পুরা করে দেওয়া হবে। সপ্তম দরজার ফেরেশতাগণ উচ্চস্বরে ঘোষণা করছেন কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আল্লাহ পাক এর নবী হুজুর (সাঃ) বলেন আমি হজরত জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ দরজা সমূহ কোন সময় পর্যন্ত খোলা থাকবে? তিনি জবাবে বললেন, ফজর পর্যন্ত। আরো বললেন, এ রাত্রিতে আল্লাহ পাক বণী কলব সম্প্রদায়ের বকরী ভেড়ার পশমের সমপরিমাণ জাহান্নামী লোকদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

        কাজেই এ বরকত পূর্ণ ক্ষমার রাত্রিতে প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর উচিত হবে সারা রাত্রি জেগে ইবাদত বন্দিগী করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, দিনের বেলায় রোযা রাখা এবং ইফতার করার সময় কিছুক্ষণ দরুদ শরীফ পাঠ করে ইফতার করা। আর আল্লাহ পাক! আমাদের সকলকে শবে বরাতের বরকত হাসিলের তাওফীক দান 'করুন। (আমিন সুম্মা আমিন)

পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে:-

        "যে ব্যক্তি শা'বান চাঁদের ১৫ই তারিখের দিন রোযা রাখিবে কখনও তাহাকে দোজখের অগ্নি স্পর্শ করিবে না।

        আরও একটি হাদিসে আছে, যাহারা এই রাত্রিতে এবাদত করিবে আল্লাহ তায়ালা আপন খাছ রহমত ও স্বীয় অনুগ্রহের দ্বারা তাদের শরীরকে দোযখের অগ্নির উপর হারাম করিয়া দিবেন অর্থাৎ তাহাদিগকে কখনও দোযখে নিক্ষেপ করিবেন না। হুযুর পাক (সাঃ) বলেন, আমি জিব্রাইল (আঃ) এর নিকট শুনিয়াছি যাহারা শা'বানের চাঁদের ১৫ই তারিখের রাত্রিতে জাগিয়া ইবাদাত বন্দেগী করিবে, তাহারা শবে কদরের এবাদতের সমতুল্য ছওয়াব পাইবে।

        'কালউবী' কিতাবে লিখিত আছে, একদিন হজরত ঈছা (আঃ) জিজ্ঞাসা করিয়া ছিলেন আয় আল্লাহতালা! এ যমানায় আমার চেয়ে বুযর্গ আর কেহ আছে কি? তদুত্তরে আলাহ তা'আলা বলিলেন হাঁ নিশ্চয়ই। হে ঈছা তুমি তোমার সম্মুখে একটু • গিয়া দেখ। ইহা শুনিয়া ঈসা (আঃ) সম্মুখের দিকে চলিতে লাগিলেন। ক্ষণেক পরেই সম্মুখে অতি প্রকাণ্ড সাদা গোলাকার একখান পাথর দেখিতে পাইয়া স্তব্ধভাবে দাঁড়াইয়া ভাবিতে লগিলেন। তখন গায়েব হইতে আওয়াজ হইল, হে ঈছা (আঃ) তুমি তোমার হাতের আশা (লাঠি) দ্বারা ঐ প্রস্তরের উপর আঘাত কর। তিন তাহাই করিলেন। 'আঘাত পাওয়া মাত্রই পাথরখানি ফাটিয়া দুই ভাগ হইয়া গেল। তিনি দেখিতে পাইলেন ভিতরে একজন জইফ বৃদ্ধলোক তাছবীহ হাতে লইয়া আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন রহিয়াছেন। আর তাহার সম্মুখে একটি আনার পড়িয়া আছে। হজরত ঈছা (আঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, হে মান্যবর! আপনি কে এবং কতদিন পর্যন্ত এখানে থাকিয়া আল্লাহর বন্দেগী করিতেছেন, আপনার সম্মুখে এ ফলটি কোথা হইতে আসিয়াছে বা কে দিয়াছে? তখন বৃদ্ধ বলিলেন আমি এতদ্দেশীয় একজন লোক ছিলাম। আমার মাতার দোয়ায় আল্লাহ তাআলা আমাকে এই বুযগী দিয়াছেন। সতরাং আজ ৪০০ বৎসর ধরিয়া ? আমি এই পাথরের ভিতরে বসিয়া আল্লাহ তাআলার এবাদাত করিতেছি এবং প্রত্যহ আমার আহারের জন্য আল্লাহ তাআলা বেহেশত হইতে একটি ফল পাঠাইয়া দিয়া থাকেন। ইহা শুনিয়া হজরত ঈছা (আঃ) ছেজদায় পড়িয়া কাঁদিতে লাগিলেন আয় আল্লাহতাআলা, আমি তোমার নিকট অপরাধী। নিশ্চই আমি বুঝিতে পারিলাম যে এই ব্যক্তি আমার চেয়েও বুযর্গ এবং সম্মানীয়। তখন আল্লাহ তায়ালা বলিলেন, • হে ঈছা (আঃ)! জানিয়া রাখ যে, শেষ যমানার নবীর উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি 'শা'বানের চাঁদের পনরই তারিখের রাত্রে জাগিয়া ইবদত বন্দেগী করিবে ও সেদিন রোযা রাখিবে, নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি আমার নকট এই বৃদ্ধের চেয়েও বেশী বুযর্গ এবং প্রিয় হইতে পারিবে। তখন ঈছা (আঃ) কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিলেন, হে খোদা তাআলা। তুমি আমাকে যদি নবী না করিয়া আখেরী যমানার নবীর উম্মত করিতে তাহা হইলে আমার কতই না সৌভাগ্য হইত! যেহেতু তাহার উম্মত হইয়া এক রাতিরতে এত ছওয়াব কামাই করিতে পারিতাম।

        পাঠক পাঠিকাগণ। ঐ রাত্রির কত বড় ফজিলত ও বরকত। আল্লাহর নবী হইয়াও ঐ রাত্রির জন্য আফছোছ করিয়াছেন। অতএব ঐ রাত্রিতে বন্দেগী ছাড়িয়া দেওয়া আমাদের উচিত হইবে কি?

Post a Comment

0 Comments